লাইফ স্টাইল

বাঁশ সুস্বাস্থ্য ও সৌভাগ্যদায়ক। না জানা থাকলে জানুন

“আমার লাইন হয়েছে আঁকাবাকা, 
ভালো না হাতের লেখা, 
আসো যদি বাঁশবাগানে আবার হবে দেখা”
ছোট বেলার এ গান আজও কানে বেজে ওঠে। বাঁশ বাগানকে রোমান্সের আড্ডাখানা বলে মনের মাধুরি মিশেয়েছেন গীতিকার গানের অন্তরায়।
“আমি একটা জিন্দা লাশ, কাটিস নারে জংলার বাঁশ,
আমার লাইগা সারে তিন হাত কবর খুঁড়িস না।
আমি পিরিতের অনলে পুড়া মরার পরে আমায় পুড়িস না”
এখানেও গায়কের সুরের মূর্ছনায় বাঁশের অধিপত্যেের কথার বিলাপ শুনা যায়।
জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত বাঁশের প্রয়োজন। অতীতে শহর না হলেও গ্রামাঞ্চলে শিশু জন্ম গ্রহণ করলে কিংবা গাভীর বাচ্চা হলে নাড়ি কাটার জন্য ব্যবহার করা হত কচি বাঁশের ধাঁরালো মাথা। মুসলমান কেউ ইন্তেকাল করলে কবরের ওপর বাঁশের মাচা করে কিংবা ফাঁটিয়ে বিছিয়ে দেয়া হয়। হিন্দু হলেও মৃত্যুর পর শ্মশানে নেয়া থেকে শুরু করে কাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত বাঁশের ব্যবহার করা হয়। 
” ‘বাঁশ বাগানের মাথার উপর চাঁদ উঠেছে ওই, মাগো আমার শোলক বলা কাজলা দিদি কই”
স্কুল জীবনে কবি যতীন্দ্র মোহন বাগচীর ‘কাজলা দিদি’ কবিতার কথা নিশ্চই মনে আছে। কবিতার লাইনগুলো কবির লেখা ওই কবিতার কথাগুলো ইতিহাসের পাতায় ঠাঁই নিয়ে এখন শুধুই স্মৃতি। বিলুপ্ত হওয়ার পথে কবির সেই বাঁশবাগান। কিশোরগঞ্জের দু’একটি এলাকা ছাড়া কোথাও বাঁশবাগান দেখা যায় না।
বাঁশ দীর্ঘজীবী তৃণজাতীয় উদ্ভিদ। দীর্ঘদেহী বাঁশ নানা প্রতিকূল অবস্থার মধ্যেও নিজের অস্তিত্ব অটুট রাখতে ও বেড়ে উঠতে পারে। বহু ঝড়-ঝাপটা বাঁশ সইতে পারে।
অনুসন্ধানে জানা যায়,ফেংশুই মতে, বাঁশ সৌভাগ্যের প্রতিক। কেবল তাই নয়, বাঁশ গাছ সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘ জীবনের সঙ্কেত দেয়।
বাঁশঝাড় না হোক, আপনার বাড়িতে যদি, দু-চারটি বাঁশগাছ থাকে তা হলেই যথেষ্ট। এই গাছ আপনাকে সর্ব দিকে সৌভাগ্য প্রদান করবে।
বাড়িতে যদি বাঁশ গাছ রাখার সুবিধা না থাকে, তা হলে বাঁশগাছের ছবি ঘরে রেখেও আপনি আপনার বাড়ির শুভ প্রাণশক্তিকে প্রবল ভাবে সক্রিয় করে তুলতে পারেন।
বাড়ি বা দোকানের সুরক্ষার জন্য আপনি বাঁশের ছবি না রেখে যদি বাঁশের একটা ৬-৮ ইঞ্চি লম্বা দণ্ড বা কঞ্চি প্রধান প্রবেশ পথের ভিতর বিপরীত দেওয়ালের ওপরে লাগিয়ে রাখতে পারেন।
এর ফলে আপনার বাড়ির স্থায়িত্ব দীর্ঘ হবে। আপনার ব্যবসা সকল প্রকার সঙ্কটের মধ্যেও বাঁশের মতোই টিকে থাকবে।
কেবল তাই নয়, যেহেতু বাঁশ গাছ সুস্বাস্থ্য ও সৌভাগ্যদায়ক, সুতরাং আপনার পড়তি ব্যবসারও উন্নতি বিধান হবে দোকানে বা ব্যবসাস্থলে বাঁশের একটি কঞ্চি রাখলে।
যদি বাঁশের দণ্ড বা কঞ্চি রাখতে চান, তা হলে তার গায়ে লাল সুতো জড়িয়ে নেবেন। কঞ্চি এক জোড়া হলে লাল সুতো দিয়ে সেগুলো বেঁধে নেবেন।
তবে কঞ্চি বা দণ্ডগুলির মুখগুলি যেন দু’দিক থেকে খোলা থাকে।
জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) জ্ঞ্নোবাল ব্যাম্বো রিসার্চের প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাঁশের প্রজাতি বৈচিত্র্যের দিক থেকে বাংলাদেশ পৃথিবীতে অষ্টম। চীনে আছে ৫০০ প্রজাতির বাঁশ। দ্বিতীয় অবস্থানে ব্রাজিলে আছে ২৩২ প্রজাতি। বাংলাদেশে ৩৩ প্রজাতির বাঁশ আছে। এখানে আছে দুই ধরনের বাঁশ। গ্রামীণ বাঁশ এবং পাহাড়ি বাঁশ। ৩৩ প্রজাতির মধ্যে ২৬ প্রজাতির গ্রামীণ এবং ৭ প্রজাতির পাহাড়ি বাঁশ।
 বাঁশের প্রজাতিগুলো হলো- বরাক, কাঁটা, বিষকাঁটা, মিরতিঙ্গা, বেথুয়া, কনক কাইচ, তেঁতুয়া, চৈই, মাকলা বা মিতিঙ্গা, ফারুয়া, করজবা, মিরতিঙ্গা, বাইজ্জ্যা, স্বর্ণ, ঘটি, হেজ, ব্রান্ডিসি, ভুদুম, পেঁচা, ওরা, মেমব্রা, লাঠি, কালি, টেন্ডু, কালা, লতা, মুলি, ডলু, থাই, রেঙ্গুন, তল্লা প্রজাতি, ওয়াপ্পি এবং চায়না প্রজাতি
আমাদের দেশে খুব
বাঁশ জনপ্রিয়।
বাঁশ দিয়ে আজ তাই
দেশ ভরে যায়।
উপর মহল থেকে
নিচের মহল।
চারিদিকে দেখো ভাই
বাঁশের দখল।
পারছে যেখানে যে
দিয়ে যায় বাঁশ।
কবি হুজাইফা মাতুব্বরের কবিতায় দেশের কাল্পনিক বাঁশের কথা উল্লেখ হয়েছে।যে যে দিক দিয়ে সুযোগ পায় কাল্পনিক বাঁশের প্রয়োগ করে।বাস্তবিক বাঁশ মূলতঃ মানুষের উপকারে আসলেও কাল্পনিক বাঁশ করে মানুষের সর্বনাশ।বর্তমান সমাজ ব্যবস্থায়  কেউ কোনো ভালো কাজ করলে, তাকে বাঁশ দেয়ার জন্য ওৎপেতে থাকে মানুষরুপি হায়েনার দল।আজকাল এমনো শুনা যায় রডের বদলেও বাঁশের ব্যবহার হয়।
কিশোরগঞ্জের গ্রামাঞ্চল গুলিতে বাঁশ সামাজিক জীবনে অপরিহার্য বস্তু।জেলার তাড়াইল উপজেলার মাহমুদুর রহমান বলেন,ঐতিহাসিক স্থাপনাতেও অনেক সময় বাঁশের ব্যবহার হয়,তেমন তিতুমীরের বাঁশের কেল্লা।
সদর উপজেলার চিকনির চরের মনিরুজ্জামান বলেন,বাঁশের উপকারীতা অনস্বীকার্য, গৃহ নির্মাণ থেকে শুরু করে ঘরের আসবাবপত্র অনেক কিছুই আগে বাঁশ দ্বারা তৈরি হতো,কোলা, খাঁদি,ডুলা ইত্যাদি। 
নিকলী উপজেলার আব্দুর রহিম, মিঠামইন উপজেলার শফিকুল ইসলাম , হোসেনপুর   উপজেলার মিন্টু হাসান বলেন,হাওর বা  চরাঞ্চল গুলিতে মাছ ধরার বেশির ভাগ যন্ত্রপাতিতে বাঁশের ব্যবহার হয়।

সম্পর্কিত সংবাদ

সম্পর্কিত সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker