লাইফ স্টাইল

যুগে যুগে হাত-পা বেঁধে কাতুকুতুর অত্যাচার

মজার ছলে অনেকেই অন্যদের কাতুকুতু দেয়। সচরাচর কাছের মানুষ এবং বন্ধুবান্ধবদের কাতুকুতু দিতে দেখা যায়। তবে এটা কিন্তু রক্তপাতহীন অত্যাচার। এই অত্যাচারের চিহ্ন পর্যন্ত থাকে না দেহে।

বিশ্বের বিভিন্ন দেশে যুগ যুগ ধরে বন্দিদের ওপর এভাবে অত্যাচার চালানোর নজির রয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদের সময় বন্দিদের হাত-পা বেঁধে তাদের ওপর কাতুকাতুর অত্যাচার চালানো হতো। কাতুকুতু দেওয়ার জেরে মৃত্যু পর্যন্ত হয়েছে বন্দিদের।

সম্পর্কিত সংবাদ

শারীরিক হেনস্থা বা অপমান করা অথবা দমিয়ে রাখার জন্যও এককালে অভিজাতরা কাতুকুতু দিয়েছেন তাদের প্রজাদের। চীনের হান বংশের রাজত্বকালে এই পন্থা নেওয়া হলেও কালে কালে তা ছড়িয়ে পড়েছে যুক্তরাজ্য থেকে যুক্তরাষ্ট্র, ইতালি থেকে জার্মানির মতো নানা দেশে।

মার্কিন লেখক ক্যারোলিন হাস্ক এক বার লিখেছিলেন, কাতুকুতু মোটেও হাসির বিষয় নয়। অত্যাচারের পর্যায়ে পৌঁছে গেলে কাতুকুতু মোটেও হাসি পর্যন্ত সীমাবদ্ধ থাকে না। জোর করে কাতুকুতু দেওয়া হলে বমি করা বা জ্ঞান হারিয়ে ফেলতে পারেন অনেকে। জার্মানিতে নাৎসি কনসেনট্রেশন ক্যাম্পে কাতুকুতুর অত্যাচারে বন্দি মৃত্যুর ঘটনার কথা শোনা যায়।

২০৬ খ্রিস্টপূর্বে চীনের হান সাম্রাজ্যে কাতুকুতুকে হাতিয়ার করেই প্রজাদের ওপর অত্যাচার করতেন অভিজাতরা। কারণ, এ অত্যাচারের চিহ্ন ধরা পড়ে না প্রজাদের দেহে। অন্য দিকে, অত্যাচারের পর সহজেই তার প্রভাবমুক্ত হতে পারতেন বন্দিরা।

চীনের গণ্ডি পেরিয়ে নির্যাতনের এই ধরন কিভাবে অন্য দেশে পৌঁছেছিল, তা স্পষ্টভাবে জানা যায় না। তবে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় তার ফায়দা তুলেছিলেন নাৎসিরা। সমকামী হওয়ার ‘অপরাধে’ জোসেফ কাহোয়াট নামে এক অস্ট্রিয়ানকে কনসেনট্রেশন ক্যাম্পে বন্দি করেছিলেন তারা।

জোসেফের দাবি, ফ্লোসেনবার্গের শিবিরে থাকাকালীন তিনি দেখেছিলেন কিভাবে বন্দিদের ওপর কাতুকুতুর অত্যাচার চালাতেন রক্ষীরা। ১৯৭২ সালে প্রকাশিত বই ‘দ্য মেন উইথ দ্য পিঙ্ক ট্রায়াঙ্গল’-এ জোসেফের কাহিনি তুলে ধরেছিলেন হান্স নিউম্যান। হাইঞ্জ হেগার নামে ছদ্মনামে লেখা ওই বইয়েও জোসেফের ওপর অত্যাচারের বর্ণনা ধরা পড়েছে।

ইউরোপের অন্য দেশেও কাতুকুতুর ব্যবহার হয়েছে। ব্রিটিশ মেডিক্যাল জার্নাল-এ তার খুঁটিনাটি তথ্য পাওয়া যায়। ইতালিতে কারাবন্দিদের হাত-পা বেঁধে তাদের পায়ে লবণ-পানি মাখিয়ে দিতেন কর্মকর্তারা। তার পর বন্দিদের শুইয়ে তাদের সামনে ছেড়ে দেওয়া হতো ছাগল।

বন্দিদের পায়ে মাখানো সেই লবণ-পানি ছাগলে চেটে খেতে শুরু করলে প্রথমে কাতুকুতুর অনুভূতি হতো। তবে ক্রমাগত পা চাটতে থাকায় এক সময় সেই পা শুকিয়ে যেত। তার পর বন্দিদের পায়ে আবারো লবণ-পানি মাখানো হতো। তখনই অস্বস্তিতে পড়তেন বন্দিরা। বার বার এই পদ্ধতিতে বন্দিদের ওপর অত্যাচার চলত। যদিও সত্যিই এভাবে নির্যাতন চলতো, নাকি সবই কল্পনাপ্রসূত; তা যাচাই করা যায়নি।

সম্পর্কিত সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker