ইতিহাস ও ঐতিহ্য

কিশোরগঞ্জের প্রকৃতির সাথে শৈশব এক রঙ্গময় অধ্যায়

পৃথিবীর চলমান পরিস্থিতিতে ব্যস্ত জীবন ও জীবিকার তাগিদে আমাদের নিরন্তর ছুটে চলা। ক্ষণস্থায়ী এ জীবনে কত মধুর স্মৃতির সঞ্চার হয়, যা ক্ষণে ক্ষণে স্মৃতিপটে ভেসে ওঠে। এর মধ্যে শৈশবের স্মৃতিগুলোই মানুষকে বেশি নাড়া দেয়। জীবনের কোন এক বাঁকে এসে উপলব্ধি হয়, দুরন্ত শৈশবের দিনগুলো কতই না মধুর ছিল! কিশোরগঞ্জের প্রকৃতির সাথে মিশে আছে শৈশবের দুরন্ত পনা, সেই ডাঙ্গুলী খেলা, দাড়িয়াবান্ধা, জোলামাতি, বৌচি, কানামাছি, পুতুল বিয়ে খেলা। মুক্ত মনে সহপাঠীদের সাথে নদীতে ঝাঁপাঝাপি, পরন্ত বিকেলে ডিকবাজি ও গোল্লাছুট।

ছেলেবেলা যেন স্মৃতিগন্ধে ভরপুর। তখন এই প্রজন্মের শিশুদের মতো হাতে ছিল না মুঠোফোন, ছিল না পাবজি, ফ্রি ফায়ারের মত গেমস কিংবা কার্টুনের প্রতি আসক্তি। কেবল ছিল শৈশবের দুরন্তপনা আর এক ভাবনাহীন প্রাণোচ্ছল জীবন। ইট–কাঠের দালানের বিপরীতে চোখের সামনে ছিল দিগন্ত বিস্তৃত মাঠ, পথ-ঘাট, পুকুর, নদী, ফসলের ক্ষেতসহ নির্মল এক প্রাকৃতিক পরিবেশ। আর আমরা ছিলাম নীল পাহাড়ের অবিরাম ছুটে চলা ঝর্নার মতো দুর্বার, নদীর মতো দুরন্ত আর পাখির মতো স্বাধীন।

বাবার দেয়া পাঁচ টাকা নিয়ে বৈশাখী মেলায় গিয়ে কিনে আনতাম পছন্দমত খেলনা ও মাঠির ব্যাংক, সাগরের মত উচ্ছ্বাস নিয়ে মার্বেল খেলে কাটিয়ে দিতাম সারাদিন।

বৃহত্তর ময়মনসিংহের আওতাধীন বর্তমানের ঢাকা বিভাগের প্রকৃতির রাণী, বিশিষ্ট ব্যাক্তি বর্গের জেলা, তেরটি থানা নিয়ে গঠিত কিশোরগঞ্জ জেলা।  ১৯৮৪ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় কিশোরগঞ্জ জেলা। আয়তনে ২৬৮৮.৫৯ বর্গ  কিমি, জনসংখ্যা রয়েছে  ৩০২৮৭০৬ জন ২০১১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী।

৮ টি পৌরসভা আছে, আছে ১৩ টি উপজেলা এবং ইউনিয়ন আছে ১০৮ টি।

৮টি পৌরসভা হলো: কিশোরগঞ্জ, বাজিতপুর, কুলিয়ারচর, হোসেনপুর, করিমগঞ্জ, কটিয়াদি, পাকুন্দিয়া এবং ভৈরব পৌরসভা।

উপজেলাগুলি হল: কিশোরগঞ্জ সদর, বাজিতপুর, কটিয়াদি, নিকলী,কুলিয়ারচর, ভৈরব, অষ্টগ্রাম, ইটনা, মিঠামইন, তাড়াইল, করিমগঞ্জ, হোসেনপুর এবং পাকুন্দিয়া।

ইউনিয়নগুলি হল (পৌরসভাসহ):  কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলায়, বৌলাই, বিন্নাটি, চৌদ্দশত, দানাপাটুলী, যশোদল,  কিশোরগঞ্জ পৌরসভা, কর্ষাকড়িয়াল, লতিফাবাদ, মহিনন্দ, মাইজ খাপন, মারিয়া ও  রশিদাবাদ।

বাজিতপুর উপজেলায়, বাজিতপুর পৌরসভা, বালিয়ার্দী, দিঘীরপাড়, দিলালপুর, গাজীরচর, হালিমপুর, হিলোচিয়া, কৈলাগ, হুমাইপুর, মাইজচর, পিরোজপুর ও সরারচর।

কটিয়াদি উপজেলার ইউনিয়ন সমূহ, আচমিতা, বনগ্রাম,  চান্দগ্রাম, লোহাজুড়ি, জালালপুর, করগাঁও, কটিয়াদি পৌরসভা, মসূয়া, মুমুরদিয়া ও সহাশ্রামধুলদিয়া।

নিকলী উপজেলার,  ছাতিরচর, দামপাড়া, গুড়ই, জারাইতলা, কারপাশা, নিকলী এবং  শিংপুর।

কুলিয়ারচর উপজেলার ইউনিয়ন সমূহ: ছয়সুতি, ফরিদপুর, গোবড়িয়া আব্দুল্লাহপুর, কুলিয়ারচর পৌর, উসমানপুর, রামদী ও সালুয়া।

ভৈরব উপজেলার:  ভৈরব পৌরসভা,  আগানগর,  গজারিয়া,  কালিকা প্রসাদ, সাদেকপুর,  শিমুলকান্দী, শিবপুর ও শ্রীনগর।

অষ্টগ্রাম উপজেলার ইউনিয়ন সমূহ: আদমপুর,  অষ্টগ্রাম, বাংগালপাড়া, দেওঘর, কলমা, কাস্তুল, খায়েরপুর আব্দুল্লাহপুর ও পূর্ব অষ্টগ্রাম।

ইটনা উপজেলার ইউনিয়ন সমুহ: বাদলা, বড়িবাড়ী, চৌগাংগা, ধনপুর, এলংজুড়ি,  ইটনা, জয়সিদ্দি, মৃগা এবং   রায়টুটি।

মিটামইন উপজেলার ইউনিয়ন সমূহ: মিটামইন,  বৈরাটি, ঢাকী, ঘাগরা, গোপেদিগি, কেওরজুড়ি ও কাটখাল।

তাড়াইল উপজেলার ইউনিয়ন সমূহ: তাড়াইল  সাচাইল, দামিহা, ধলা, দিঘদাইর, জাওয়ার, রাউতি ও তালজাংগা।

করিমগঞ্জ উপজেলার ইউনিয়ন সমূহ: করিমগঞ্জ পৌরসভা, বারঘরিয়া, দেহুন্দা, গুজাদিয়া, গুনধরা, জাফরাবাদ, জয়কা, কাদিরজঙ্গল, কিরাটন, নিয়ামতপুর, নোয়াবাদ ও  সুতারপাড়া।

হোসেনপুর উপজেলার ইউনিয়ন সমূহ:  আড়াইবাড়ীয়া, গোবিন্দপুর, হোসেনপুর পৌরসভা, জিনারি, পুমদী, শাহেদল ও সিদলা।

পাকুন্দিয়া উপজেলার ইউনিয়ন সমূহ: বারুদিয়া, চন্ডিপাশা, চর ফরাদি, এগারোসিন্দুর, হোসেন্দি, নারান্দী, জাঙ্গালিয়া, পাকুন্দিয়া পৌরসভা, পাটুয়াভাঙ্গা ও সুখিয়া।

প্রকৃতির কোলে বাধাহীন ছুটে বেড়ানোর দিনগুলোতে জমে আছে কত স্মৃতি। প্রতি সপ্তাহে নিয়ম করে চড়ুইভাতির আয়োজন করা, ঘণ্টার পর ঘণ্টা নদীতে সাঁতার কেটে মায়ের বকুনি খাওয়া, বড়শি দিয়ে মাছ ধরা, নানা রকমের গাছ লাগিয়ে বাড়ির আঙিনা ভরে ফেলা, পুতুলের বিয়ে দেওয়া, মাটির ব্যাংকে টাকা জমানো— এমন স্মৃতির দিনগুলো চাইলেও কি ভুলা যায়?

বৃষ্টিতে ভিজে সবার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে আম কুড়াতে যেতাম। তখন শরিষা ক্ষেত দেখলেই ছবি তুলতে যেতাম না, বরং একদৃষ্টে তাকিয়ে দিগন্তবিস্তৃত হলুদের সমারোহ উপভোগ করতাম। এখন যেমন গোলাপ, কৃষ্ণচূড়া কিংবা কাঠগোলাপ পছন্দ, তখন পছন্দের তালিকায় ছিল বর্ষার কদম কিংবা শরতের শিউলি ফুল।

ছেলেবেলায় কানে হেডফোন গুঁজে গান শোনা হতো না। তবে সাদাকালো টিভিতে আলিফ লায়লা, ছায়াছন্দ কিংবা শুক্রবার বাংলা ছায়াছবি ইত্যাদি দেখার জন্য উৎগ্রীব হয়ে থাকতাম। বিমানের আওয়াজ শুনেই দৌড়ে দেখতে যেতাম আর ভাবতাম আচ্ছা, মানুষ কীভাবে এত উঁচুতে বিমানে চড়ে? আবার বন্যার জলে কলা গাছের বেলায় চড়ে পাড়ার আনাচে- কানাচে ঘুরে বেড়াতাম, কখনো কখনো  স্রোতের টানে ভেসে যেতাম।

সম্পর্কিত সংবাদ

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

Back to top button

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker