মাহফুজ হাসান, কিশোরগঞ্জ জেলা প্রতিনিধি
বাংলাদেশের অসংখ্য নদ নদীর মাঝে অন্যতম নদ ব্রহ্মপুত্র । কখনো শান্ত, কখনো ভয়ংকর সর্বানাশা রুপ নিয়ে আবহমান কাল থেকে জেগে আছে জলরাশি। উক্ত জলরাশীর নেপথ্যে বুকটান বিকশিত বিচরণ বিভিন্ন প্রজাতির মাছ। যুগে যুগে আবিষ্কার হয়েছে মাছ ধরার বহুল আলোচিত সরঞ্জামাদী।
কিশোরগঞ্জের হোসেনপুরে ব্রহ্মপুত্র নদে দেখা মিলল, মনোরম অভিনব কায়দায় মাছ ধরার শৈল্পিক কৌশল। ছোট ডিঙ্গি নৌকার (১৪-১৮ ফুট দৈর্ঘ্য ৩ ফুট প্রস্থ) এক পাশ অথবা উভয় পাশেই সাদা রঙ্গের টিনের শীট ( ১৮” ইঞ্চি ব্যাসযুক্ত) লাগিয়ে। বড় পাথরের ওজনে নৌকা এক পাশে হেলিয়ে মাছ শিকারী আপন মনে বৈঠা চালায়। আর নৌকার পাশে সাদা শীট দেখে ধুম্রমায়ায় ফেঁসে আনন্দে লাফিয়ে নৌকায় পড়ে চেলা মাছ। বছরের ঘূর্নিপাকে চেলা মাছ শিকার এখন যেন শুধুই স্মৃতিকথা।
ময়মনসিংহ জেলার ত্রিশাল থেকে গাজীপুর জেলার শ্রীপুর অবধি মাছ ধরার এ কৌশলটি “চেলার নৌকা” হিসেবে পরিচিত।
আপন মনে গুন গুনিয়ে ভাটিয়ালী গান গেয়ে বৈঠা দিয়ে নদের বুকে রাতভর মৃদু আঘাত হানতে কমই দেখা মিলে এখন শিকারীদের। বাংলার ঐশ্বর্যশীলা আরেক বৈচিত্র্যময় রুপ, মন ছুয়ে, নুয়ে পড়া প্রীতির শুভ্র আমেজ এখন বিলুপ্তির কোটায়।
এ পদ্ধতিতে সাহেবের চর গ্রামের মাছ শিকারী রুমান মিয়া ও সজিব বাবু জানান, এ পদ্ধতিতে এখন ভাটা পড়েছে, অনেকেই আর নদীতে আসেনা। আগে যেখানে সাহেবের চর গ্রামেরই ৩০/৩৫ জন ছিল বর্তমানে ৩/৪ জন মাছ ধরে।
সূত্রমতে জানতে পারি, ২০২১ সালেও পূর্ণ যৌবন ছিল এ পদ্ধতিতে মাছ ধরা, তখন দৈনিক ৩ হাজার থেকে ৫ হাজার টাকার মাছ ধরা যেতো। বছর দুয়েকের ব্যবধানে বিলুপ্তপ্রায় চেলা মাছ ধরা।দৈনিক এখন ৩শ থেকে ৪শ টাকার মাছ ধরা যায়। চেলা মাছ ধরার ডিঙি নৌকা কেবল ব্রহ্মপুত্র মোহনায় বাঁধা থাকতেই চোখে পড়ে এখন।
বন্যার পানি এখন নদের যৌবন ফেরাতে ব্যর্থ, প্রচন্ড দাবদাহে নদের পানি শুকিয়ে যাওয়া মূলত ইত্যাদি কারণেই বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে চেলা মাছ সংশ্লিষ্টদের মতে।
মাছ আড়ৎ এর সুত্র অনুযায়ী জানা যায়- প্রতি কেজি চেলা মাছ সিজনানুযায়ী ৫০০ থেকে ৮শ টাকা হয়ে থাকে। গত দু’বছর আগে চেলা মাছে বাজার গমগম করতো। এখন হাতেগোনা কয়েকজনকে পাওয়া যায় এ মাছ নিয়ে বাজারে আসতে।