বাণিজ্য

ঋণ-সুদ-চাঁদা পরিশোধে সরকারের বাড়তি খরচ ৪০৪২ কোটি

ডলারের দাম অস্বাভাবিক বেড়ে যাওয়ায় বৈদেশিক লেনদেনে খরচ বাড়ছে সরকারের। কারণ ডলার কিনতে সরকারকে বেশি টাকা ব্যয় করতে হচ্ছে। চলতি অর্থবছরের বাজেটে বৈদেশিক ঋণ, সুদ ও আন্তর্জাতিক সংস্থার চাঁদা পরিশোধের জন্য যে টাকা বরাদ্দ দেওয়া ছিল, ডলারের দাম বেড়ে যাওয়ায় সে টাকায় এখন আর হচ্ছে না। এই তিন খাতের অর্থ পরিশোধে সরকারের এখন চার হাজার ৪২ কোটি টাকা বেশি খরচ হচ্ছে।

চলতি বাজেটে এই খাতগুলোর জন্য ৩৭ হাজার ৭৭৫ কোটি ৬১ লাখ টাকা বরাদ্দ করা ছিল। এখন লাগছে ৪১ হাজার ৮১৫ কোটি টাকা। খরচ বেড়ে গেছে প্রায় ১০.৭০ শতাংশ।

সম্পর্কিত সংবাদ

সম্প্রতি অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) সচিব মো. শাহরিয়ার কাদের ছিদ্দিকীর সভাপতিত্বে চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের সংশোধিত বাজেট প্রাক্কলন সংক্রান্ত বাজেট ব্যবস্থাপনা কমিটির সভা হয়।

সেখানে এই বাড়তি খরচের হিসাব উপস্থাপন করা হয়।ইআরডির সংশোধিত উন্নয়ন বাজেট বা আরএডিপির তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, ইআরডির ফরেন এইড বাজেট অ্যান্ড অ্যাকাউন্টস (ফাবা) এবং আইসিটি সেল অনুবিভাগ থেকে চলতি অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটে বৈদেশিক ঋণ খাতে ২৬ হাজার ২৯৬ কোটি টাকা চাওয়া হয়েছে। এডিপিতে বরাদ্দ ছিল ২৪ হাজার ৭০০ কোটি টাকা। অর্থাৎ এই খাতে বরাদ্দ বাড়ছে এক হাজার ৫৯৬ কোটি টাকা, শতাংশের হিসাবে ৬.৪৬।

বৈদেশিক ঋণের ওপর সুদ খাতে সংশোধিত এডিপিতে ১৪ হাজার ৮০০ কোটি টাকা বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে। এর জন্য বরাদ্দ ছিল ১২ হাজার ৩৭৬ কোটি টাকা। অর্থাৎ বরাদ্দ বাড়ছে দুই হাজার ৪২৩ কোটি টাকা বা ১৯.৫৮ শতাংশ। দুই খাতে মোট বৃদ্ধি চার হাজার ১৯ কোটি ৯৮ লাখ ৯৩ হাজার টাকা, যা বাজেট বরাদ্দের ১০.৭০ শতাংশ বেশি।

ইআরডিকে প্রতি অর্থবছরে কিছু আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানে চাঁদা ও শেয়ার মূলধন পরিশোধ করতে হয়।

চলতি অর্থবছরে চাঁদা ও শেয়ার মূলধন পরিশোধ বাবদ ৬২০ কোটি ৬৯ লাখ ৯৩ হাজার টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। অপরিশোধিত অন্যান্য সংস্থার চাঁদা বা শেয়ারের চাহিদা এবং টাকার বিপরীতে ডলারের বিনিময় হার বৃদ্ধি পাওয়ায় এক মার্কিন ডলার ১১৫ টাকা ধরে অতিরিক্ত ২১ কোটি ৪১ লাখ ১০ হাজার টাকা বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে।

ইআরডি সূত্রে জানা গেছে, চলতি অর্থবছরের সংশোধিত বাজেট প্রাক্কলনে পরিচালন ব্যয়ে ৪১ হাজার ৮১৫ কোটি ১২ লাখ ৫৫ টাকা এবং উন্নয়ন ব্যয়ে ৪৮ কোটি ৬২ লাখ ৬৬ হাজার টাকার প্রস্তাব করা হয়। সংশোধিত বাজেট প্রাক্কলনে পরিচালন ব্যয়ে অতিরিক্ত চার হাজার ৩৯ কোটি ৫১ লাখ ৫৫ হাজার টাকা এবং উন্নয়ন ব্যয়ে ১৬ কোটি ৯৮ লাখ ৩৪ হাজার টাকা কম প্রস্তাব করা হয়েছে। এ ছাড়া ইআরডির সংশোধিত বাজেট প্রাক্কলনে সচিবালয় অংশে বরাদ্দকৃত ৪৬ কোটি ৩১ লাখ টাকার বদলে সংশোধিত বাজেটে ৫১ লাখ পাঁচ হাজার টাকা কমিয়ে ৪৫ কোটি ৭৯ লাখ ৯৫ হাজার টাকা প্রস্তাব করা হয়েছে।

দূতাবাসের খরচ

ইআরডির বিদেশে অবস্থিত দূতাবাসগুলোতে ৯টি অর্থনৈতিক দপ্তরের মধ্যে নিউ ইয়র্কের অর্থনৈতিক দপ্তরের ব্যয় বাজেটে বরাদ্দ করা তিন কোটি ৩৭ লাখ ৮০ হাজার টাকার সঙ্গে অতিরিক্ত ৩৫ লাখ ৭৭ হাজার টাকা বাড়তি প্রস্তাব করা হয়েছে। অন্য আটটি অর্থনৈতিক দপ্তরে খাতওয়ারি বরাদ্দ হ্রাস-বৃদ্ধি করা হলেও মোট বরাদ্দকৃত বাজেট থেকে এক কোটি ৭৩ লাখ ২০ হাজার টাকা কমিয়ে ৩০ কোটি ৯৮ লাখ ৫৭ হাজার টাকা প্রস্তাব করা হয়েছে।

উন্নয়ন প্রকল্প

ইআরডির এডিপিভুক্ত চারটি উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য বাজেটে আরপিএ অংশে পাঁচ কোটি ২৩ লাখ টাকা, ডিপিএ অংশে ৪২ কোটি ৭৯ লাখ টাকা, জিওবি অংশে ১৭ কোটি ৫৮ লাখ টাকা এবং অননুমোদিত প্রকল্পের জন্য সংরক্ষিত এক লাখ টাকা মিলিয়ে বরাদ্দ আছে ৬৫ কোটি ৬১ লাখ টাকা। সংশোধিত বাজেটে আরপিএ অংশে পাঁচ কোটি ৮৭ লাখ টাকা, ডিপিএ অংশে ৩২ কোটি ৮০ লাখ ৭৩ হাজার টাকা এবং জিওবি অংশে ৯ কোটি ৯৪ লাখ ৯৩ হাজার টাকাসহ মোট ৪৮ কোটি ৬২ লাখ ৬৬ হাজার টাকা প্রস্তাব করা হয়েছে। অর্থাৎ উন্নয়ন ব্যয় খাতে মোট বরাদ্দকৃত বাজেট থেকে ১৬ কোটি ৯৮ লাখ ৩৪ হাজার টাকা কম প্রস্তাব করা হয়েছে।

ইআরডির সংশ্লিষ্ট উইংয়ের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা কালের কণ্ঠকে বলেন, ডলারের বিনিময়হার বেড়ে যাওয়ার কারণে বৈদেশিক ঋণ ও সুদ পরিশোধে টাকা বেশি লাগছে। মূল এডিপিতে প্রতি ডলারের দাম ধরা ছিল ১০৪ টাকা। এখন ধরা হয়েছে ১১৫ টাকা।

সংশোধিত বাজেট প্রাক্কলন সংক্রান্ত ব্যবস্থাপনা কমিটির সভায় গত অর্থবছরের প্রকৃত খরচ এবং চলতি অর্থবছরের অবশিষ্ট সময়ে যে পরিমাণ অর্থ ব্যয় করা সম্ভব হবে সে অনুয়ায়ী সংশোধিত বাজেট চূড়ান্তকরণের ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়।

এ বিষয়ে বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন কালের কণ্ঠকে বলেন, যেহেতু ডলারের দাম বেড়েছে সেহেতু টাকার পরিমাণ বাড়বেই, এটা স্বাভাবিক। তবে ডলারের দাম যে ১১৫ টাকা ধরা হয়েছে তা তো সরকারের বর্তমান হারের (১০৯ টাকা) চেয়ে অনেক বেশি। তিনি বলেন, ডলারের দাম ও মূল্যস্ফীতি বাড়ার ফলে অর্থনীতিতে একটা সংকট তৈরি হয়েছে। এই মুহূর্তে অপ্রয়োজনীয় বা কম গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প বাদ দেওয়া উচিত। আর গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পগুলোতে প্রয়োজনে বরাদ্দ বাড়িয়ে দ্রুত শেষ করা উচিত।

সম্পর্কিত সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker