বাণিজ্য

১২ বছরে বিদেশি ঋণ বেড়েছে আড়াই গুণ

বাংলাদেশের উন্নয়নের সঙ্গে বৈদেশিক ঋণও বাড়ছে। গত এক যুগে বৈদেশিক ঋণ ১২ গুণ বেড়েছে। ২০২২ সালে বিশ্বের অন্য নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোর সম্মিলিত বিদেশি ঋণের পরিমাণ কমলেও বিপরীতমুখী অবস্থানে বাংলাদেশ। গত বছর নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোর সম্মিলিত ঋণের পরিমাণ ৩.৪ শতাংশ কমলেও বাংলাদেশের বেড়েছে ৬.৫৯ শতাংশ।

বিশ্বব্যাংকের ‘ওয়ার্ল্ড ডেট রিপোর্ট বা বৈশ্বিক ঋণ প্রতিবেদন ২০২৩’-এ এই তথ্য উঠে এসেছে। সম্প্রতি প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়েছে।

সম্পর্কিত সংবাদ

বিশ্বব্যাংক বলছে, ২০২২ সাল শেষে বাংলাদেশের বিদেশি ঋণের পরিমাণ ছিল ৯৭.০১২ বিলিয়ন বা ৯ হাজার ৭১২ কোটি ডলার, ২০২১ সালে যা ছিল ৯১.৪৭ বিলিয়ন বা ৯ হাজার ১৪৭ কোটি ডলারের বেশি। সেই হিসাবে এক বছরে বাংলাদেশের বিদেশি ঋণ বেড়েছে ৬.৯ শতাংশ।

জানতে চাইলে পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘বিশ্বের অন্যান্য নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশে বিদেশি ঋণের পরিমাণ কমলেও বাংলাদেশের বেড়েছে। এর পেছনে অন্যতম প্রধান কারণ হলো অতি উচ্চ ব্যয়ে মেগাপ্রকল্পগুলো হাতে নেওয়া। বর্তমানে আমাদের যেসব মেগাপ্রকল্পের কাজ চলমান এবং যেগুলোর কাজ শেষ হয়েছে, সব প্রকল্প নেওয়া হয়েছিল অন্যান্য দেশের তুলনায় বেশি মূল্যে, যার কারণে প্রকল্পের ব্যয় বেড়েছে এবং ঋণের পরিমাণও বেড়েছে।’

প্রতিবেদনে বিশ্বব্যাংক বলছে, ২০২১ সালে বিশ্বের নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোর সম্মিলিত বিদেশি ঋণের পরিমাণ ছিল ৯.৩ ট্রিলিয়ন বা ৯ লাখ ৩০ হাজার কোটি ডলার।২০২২ সালে ঋণের পরিমাণ কমে দাঁড়ায় ৯ ট্রিলিয়ন বা ৯ লাখ কোটি ডলারে। অর্থাৎ এই সময়ে সম্মিলিতভাবে এসব দেশের বিদেশি ঋণ ৩.৪ শতাংশ কমেছে। ২০১৫ সালের পর ২০২২ সালে প্রথম নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোতে নিট ঋণ প্রবাহ কমেছে। ২০২২ সালে এসব দেশ ঋণ পেয়েছে ১৮৫ বিলিয়ন বা ১৮ হাজার ৫০০ কোটি ডলার, ২০২১ সালে যা ছিল ৫৫৬ বিলিয়ন বা ৫৫ হাজার ৬০০ কোটি ডলার। অর্থাৎ এই এক বছরে নিট ঋণ প্রবাহ কমেছে ৬৬.৭২ শতাংশ।

গত বছর স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি উভয় ধরনের ঋণই কমেছে। বিশ্বব্যাংকের বৈশ্বিক ঋণ প্রতিবেদনের তথ্যানুসারে, ২০১০ সালে বাংলাদেশের মোট বিদেশি ঋণ ছিল ২৬.৫২ বিলিয়ন (দুই হাজার ৬৫২ কোটি) ডলার, ২০১৮ সালে যা ৫৭.১২ বিলিয়ন (পাঁচ হাজার ৭১২ কোটি)  ডলার এবং ২০২২ সালে তা ৯৭ বিলিয়ন (৯ হাজার ৭০০ কোটি) ডলার ছাড়িয়ে যায়।বিশ্বব্যাংকের হিসাব অনুযায়ী, ২০১০ সালের পর ১২ বছরে বাংলাদেশের বিদেশি ঋণ বেড়েছে আড়াই গুণের বেশি। ২০২২ সালে ডলারের বিনিময়হার বৃদ্ধি ও বৈশ্বিক বিনিয়োগের গতি-প্রকৃতি বদলে যাওয়ার পরও বাংলাদেশের বিদেশি ঋণ বেড়েছে। দেশের ঋণ নিয়ে এক ধরনের উদ্বেগ তৈরি হলেও সামগ্রিক ঋণ-জিডিপির অনুপাত এখনো ৪০ শতাংশের নিচে। তবে বিদেশি ঋণের অর্থে যেসব প্রকল্প হচ্ছে, সেখান থেকে বিদেশি মুদ্রা আয়ের তেমন সুযোগ নেই। সেই সঙ্গে টাকার যেভাবে অবমূল্যায়ন হচ্ছে, তাতে সরকারের ঋণ পরিশোধের ব্যয় বেড়ে যাবে।নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশগুলোতে ঋণপ্রবাহ কমে যাওয়ার কারণ হিসেবে কয়েকটি বিষয় চিহ্নিত করেছে বিশ্বব্যাংক। মূল কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে এসব দেশের সরকারি ও বেসরকারি বন্ড থেকে বিনিয়োগ প্রত্যাহার করে নেওয়ার বিষয়টিকে। বলা হয়েছে, বন্ড কমে যাওয়ায় বেসরকারি বিনিয়োগকারীরা এসব দেশ থেকে ১৮৯ বিলিয়ন বা ১৮ হাজার ৯০০ কোটি ডলার তুলে নিয়েছেন। সংস্থাটি বলছে, মূল্যস্ফীতির বিরুদ্ধে লড়াই করতে বিশ্বের সব দেশ নীতি সুদহার বাড়িয়েছে। এতে ঋণের সুদহার বেড়েছে। সে জন্য নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশগুলোর ঋণ করার ব্যয় বেড়েছে।সামগ্রিকভাবে নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশগুলোর বিদেশি ঋণ কমে গেলেও যারা আইডিএ (বিশ্বব্যাংক গ্রুপের প্রতিষ্ঠান আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা) থেকে ঋণ পাওয়ার যোগ্য, সেই দেশগুলোর ঋণের পরিমাণ ২০২২ সালে ২.৭ শতাংশ বেড়েছে। ফলে এই দেশগুলোর মোট বিদেশি ঋণের পরিমাণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১.১ ট্রিলিয়ন বা এক লাখ ১০ হাজার কোটি ডলার।

সম্পর্কিত সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker