নবায়নযোগ্য জ্বালানিভিত্তিক বিদ্যুতকেন্দ্রগুলো সরকারের কাছ থেকে উচ্চমূল্যে ট্যারিফ (বিদ্যুতের দাম) আদায় করছে। নবায়নযোগ্য বিদ্যুতের বেসরকারিখাতে প্রতি কিলোওয়াট বিদ্যুতের দাম ১৩ সেন্ট, যেখানে সরকারি প্রকল্পগুলো থেকে কিলোওয়াট প্রতি ১০ সেন্ট খরচ হচ্ছে। অযৌক্তিক ট্যারিফের মাধ্যমে অনৈতিক ফায়দা লুটতে নবায়নযোগ্য জ্বালানির সম্ভবনা নষ্ট করা হচ্ছে।
আজ বৃহস্পতিবার ‘বাংলাদেশে নবায়নযোগ্য জ্বালানি অর্থায়ন অনুসরণ’ শীর্ষক দ্বি-বার্ষিক এক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে জলবায়ু, পরিবেশ এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানি ও অর্থায়ন বিষয়ক বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান চেঞ্জ ইনিশিয়েটিভ।
গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহারে বিশ্বের ১৯০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১১১তম।
বাংলাদেশের নবায়নযোগ্য বিদ্যুতের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের ব্যাপারে আশঙ্কা করে মো. জাকির হোসেন খান বলেন, ‘রিনিউবল এনার্জি পলিসি প্ল্যান (আরইপি-২০০৮) অনুযায়ী ২০২০ সালে বাংলাদেশ ১০ শতাংশ নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহারের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছিল। সেখানে ২০২৩ সাল পর্যন্ত অর্জিত হয়েছে ৪.৫৯ শতাংশ। এখনো লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৫.৪১ শতাংশ পিছিয়ে আছে।
আবার অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় ২০২৫ সালের মধ্যে ১০ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে। মুজিব ক্লাইমেট প্রোসপারিটি প্লান (এমসিপিপি) অনুযায়ী ২০৩০ সালের মধ্যে ৩০ শতাংশ এবং ২০৪১ সালের মধ্যে ৪০ শতাংশ নবায়নযোগ্য জ্বালানি ও ক্লিন এনার্জি থেকে নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। অপরদিকে ইন্ট্রিগ্রেটেড এনার্জি অ্যান্ড পাওয়ার মাস্টার প্লান (আইইপিএমপি-২০২৩) অনুযায়ী ২০৫০ সালে ৪.৪ শতাংশ লক্ষামাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘এসব পরিকল্পনার মধ্যে সমন্বয় নেই। যে কাজে পরিকল্পনাগত সমন্বয় নেই সেটি কীভাবে অর্জিত হবে? একেকটি পরিকল্পনায় একেক ধরনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। যা বেশি না হয়ে বরং কমেছে। নবায়নযোগ্য শক্তির প্রসার বৃদ্ধিতে বিভিন্ন দেশ এগিয়ে আসছে। এই বিনিয়োগের সুযোগকে কাজে লাগাতে হবে। সেজন্য সরকারকে সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে এগিয়ে যেতে হবে।’
বিদ্যুতের ট্যারিফ নির্ধারণের কথা জানিয়ে জাকির হোসেন খান আরো বলেন, ‘প্রতিবেশী দেশগগুলোর তুলনায় বাংলাদেশে সৌর বিদ্যুতের ট্যারিফ এখনও উচ্চ। বিদ্যুতকেন্দ্র নির্মাণে প্রতিযোগিতামূলক দরপত্র এবং ট্যারিফের ক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনকে (বিইআরসি) পাশ কাটিয়ে বিদ্যুত্ক্রয় চুক্তি হচ্ছে। এসব অনিয়ম ও প্রতিবন্ধকতা পাশ কাটাতে হবে। নতুবা আগামীতে সৌর বিদ্যুতের যে লক্ষ্যমাত্রা তা পূরণ হবে না।’
চেঞ্জ ইনিশিয়েটিভের এমডি আরো বলেন, ‘দেশের অর্থনৈতিক উন্নতি করতে হলে বিদ্যুতের বিকল্প নেই। সে ক্ষেত্রে বিদ্যুতের দাম কমাতে হবে। কেননা বিদ্যুতের দাম বেশি হলে সব পণ্য উত্পাদনেই দাম বাড়বে।’