কিশোরগঞ্জের হোসেনপুরে কালের পরিক্রমায় হারিয়ে যাচ্ছে বকপাখি।
"ওই দেখা যায় তাল গাছ, ওই আমাদের গাঁ। ওই খানেতে বাস করে কানা বগীর ছাঁ’
ছোট বেলায় পাঠ্য বইয়ের পাতা উল্টিয়ে যখন কবিতার চরণগুলো পড়তাম, তখন উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের খাল-বিল কিম্বা ছোট নদীর ধারে একদল বকপাখি খেলা করছে, এমন দৃশ্য ভেসে ওঠতো।
এই তো কয়েক বছর আগেও ছিল বকপাখির বিচরণ। সকাল বেলা পুকুর পাড়ে, বিল ও খালের ধারে, ক্ষেতের পাশে শিকারের অপেক্ষায় নিশ্চুপ বসে থাকা বকপাখিটি দেখে মনের অজান্তেই ভাললাগা শুরু হতো। মিনিট পাঁচেক অপেক্ষার পর বকটি টোপ করে তার লম্বা ঠোঁটে পুঁটিমাছ শিকার করে নিতো। আর তখনই কবির ভাষায় নিজের কল্পনাতে আঁকা ‘ও বগী তুই খাস কি? পান্তা ভাত চাস কি? পান্তা আমি খাই না পুঁটিমাছ পাই না, একটা যদি পাই অমনি ধরে গাপুসগুপুস খাই’ এই চরণগুলোর জ্যান্ত দৃশ্য দেখার সুযোগ হতো। তবে এখন আর কবিতার চরণের সঙ্গে বাস্তবে হোসেনপুরের গ্রামের খাল-বিলে সেই দৃশ্যপট চোখে পড়ে না। কেননা, সেই লম্বা ঠোঁটের অধিকারী বকের আবাসস্থলে মানুষ দিচ্ছে হানা। আর এতেই ধীরে ধীরে বিলুপ্ত হচ্ছে ‘বক’।
সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত এখন আর খাবারের সন্ধ্যানে বিল-নদী জলাশ্বয়ে আসা সাদা বকের খুব বেশি আর দেখা মেলেনা এ উপজেলায়। বনভূমি উজার আর কিছু অসাধু পাখি শিকারীদের দৌরাত্ম্যে হারিয়ে যেতে বসেছে এই বক। অথচ আমাদের বাংলা কবিতা ও সাহিত্যের বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিশাল জায়গা দখল করে আছে বিভিন্ন রকমের বক। কখনও মেঘাচ্ছন্ন আকাশে ঝাঁক বেঁধে উড়ে চলা, কখনও দিগন্ত বিস্তৃত মাঠের সবুজ গালিচার সৌন্দর্য্য বাড়িয়ে দিত ঝাঁকে ঝাঁকে এই সাদা বক। আবার কখনও দলবদ্ধ হয়ে উড়তে উড়তে একসময় মিশে যেত দূর আকাশ নিলীমায়। আর এই উড়ে যাওয়া মানেই প্রস্থান নয়। এক বিল থেকে অন্য বিলে অথবা দিন শেষে কোন বন কিম্বা বাঁশঝাড়ে নিজ নীড়ে ফিরে যেত এই বকগুলো। প্রকৃতিক নান্দনিক পাখি বক, বকের কলরব এখন শুধুই স্মৃতি হোসেনপুরে।
Discover more from MIssion 90 News
Subscribe to get the latest posts to your email.