কিশোরগঞ্জকৃষি ও পরিবেশ

হোসেনপুরে বাণিজ্যিক ভাবে গাছ আলু চাষ: চাষী মোজাম্মেলের বাজিমাৎ

মাহফুজ রাজা, কিশোরগঞ্জ জেলা প্রতিনিধি:

কিশোরগঞ্জের হোসেনপুর উপজেলায় প্রথমবারের মতো বাণিজ্যিকভাবে শুরু হয়েছে মাঁচা পদ্ধতিতে ‘গাছ আলু’ চাষ। সাধারণ আলুর চেয়ে অধিক পুষ্টিগুণে ভরপুর এই আলু চাষ করে আর্থিকভাবে অধিক লাভবান হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন স্থানীয় কৃষকরা। ৭২ শতাংশ জমি গাছ আলু চাষ করে বাজিমাৎ করেছেন শ্রবণ প্রতিবন্ধী চাষী মোজাম্মেল। 

গাছ আলু আঞ্চলিক ভাষায় ‘মেটে আলু কিংবা গড়ালু’ হিসেবেই পরিচিত। একসময় বসতভিটার আনাচে কানাচে ও আশপাশের ঝোপঝাড়ে এটি প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যেত। কালের বিবর্তনে নিরাপদ এই খাদ্য এখন অনেকটাই বিলুপ্তির পথে।

তবে আশার কথা হচ্ছে বিলুপ্তপ্রায় এই গাছ আলু চাষে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করতে উদ্যোগ নিয়েছে কৃষি বিভাগ। 

কৃষি বিভাগের পরামর্শ অনুযায়ী প্রদর্শনী প্লটে চাষ হওয়া এই গাছ আলুতে স্বপ্ন বুনতে শুরু করেছেন হোসেনপুর উপজেলার কৃষকেরা। এরই মধ্যে এলাকার কৃষকদের মধ্যে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে শ্রবণ প্রতিবন্ধী মোজাম্মেলের  প্রদর্শনী খেত।

উপজেলার শাহেদল ইউনিয়নের রহিমপুর  গ্রামের একজন শ্রবণ প্রতিবন্ধী কৃষি উদ্যোক্তা মো: মোজাম্মেল ভূইয়া ৭২ শতাংশ জমিতে ‘গাছ আলু’ চাষ করেছেন। মাঁচা পদ্ধতিতে চাষ করা এই আলু গাছে একেকটি আলু ২ থেকে ৪ কেজি পর্যন্ত হয়েছে। বাজারে এই আলু ২০ থেকে ৪০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে বলে জানা গেছে।এপ্রিল মাসে শুরু করেছিলেন প্রদর্শনী প্লেট। ২০/৩০ হাজার টাকা খরচ করে এ পর্যন্ত আড়াই থেকে তিন লক্ষ টাকা আয় করেছেন। এখনও গাছে অবশিষ্ট যে আলু আছে ২/৩ লক্ষ টাকা বিক্রি করতে পারবেন বলে জানান চাষী মোজাম্মেল। 

জানা গেছে, খাবারের সঙ্গে নিয়মিত এই আলু খেলে হার্ট ভালো হয় এবং শরীরে ক্যালসিয়ামের ঘাটতি পূরণ হয়। 

চাষী মোজাম্মেল ভূইয়া বলেন, এ আলু চাষে যেকোনো গাছের গোড়ার একটু দূরে রোপন করলে আস্তে আস্তে ওই গাছ বেয়ে উপরে উঠে আলু ধরতে থাকে। আলু গাছ রোপণের মাস তিনেক পর থেকেই গাছে আলু ধরতে শুরু করে। গাছের ডগায় ও মাটির নিচে গোড়ায় আলু হয়ে থাকে। প্রায় সারা বছরই আলু ধরে। প্রতিটি গাছে প্রতি সাজে আট থেকে ১০ কেজি আলু পাওয়া যায়।

এ ব্যাপারে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ একেএম শাহজাহান কবির জানান, কৃষি বিভাগের কন্দাল ফসল উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় কৃষক মোজাম্মেলকে একটি প্রদর্শনী প্লট দেওয়া হয়েছে। সাধারণত এ উপজেলায় মাচার উপর গাছ আলু চাষ কৃষকরা করতেন না। এবার প্রদর্শনীর মাধ্যমে অনেকেই গাছ আলু চাষে  কৃষক লাভবান হয়েছেন। তাছাড়া গাছ আলুর পুষ্টি গুণ ও বাজারে চাহিদা ব্যাপক  রয়েছে।তাছাড়া গাছ আলুর একই মাচাতে সাথী ফসল হিসেবে করলা, ধুন্দল, ঝিঙ্গা, চাল কুমড়া ইত্যাদি ফসল ও চাষ করেও কৃষকরা লাভবান হচ্ছেন। তাই আগামীতে এ পদ্ধতিতে সারা উপজেলায় গাছ আলু চাষ বাড়বে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

সম্পর্কিত সংবাদ

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

Back to top button

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker