কিশোরগঞ্জকৃষি ও পরিবেশ

হোসেনপুরে পানির অভাবে পাট জাগ দিতে না পেরে দিশেহারা কৃষক

মাহফুজ হাসান, কিশোরগঞ্জ জেলা প্রতিনিধি:

দীর্ঘ খরায় বর্ষা কালেও খাল-বিল, নদী-নালা ও ডুবায় পর্যাপ্ত পানি না থাকায় কিশোরগঞ্জের হোসেনপুরে কৃষকেরা পাট গাছ জাগ দিতে না পেরে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন।

স্থানীয় কৃষকরা জানান, চলতি শ্রাবণ মাসে বৃষ্টিপাত কম হওয়ায় পাট গাছ পচানোর জন্য পর্যাপ্ত পানি পাচ্ছেন না জলাধারগুলোতে। ফলে এ বছর আবহাওয়ায় পাটের উৎপাদন ভালো হলেও লোকসান গুনতে হবে তাদের। সূত্র মতে, পাট একটি অর্থকরী ফসল। দেশ-বিদেশে পাটের অনেক চাহিদা রয়েছে। বাংলাদেশ পাট রপ্তানি করে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা আয় হয়। তাই পাটকে সোনালি আঁশ বলা হয়। হোসেনপুর উপজেলার বেশিরভাগ এলাকা ব্রহ্মপুত্র ও নরসুন্দা নদের উপকূল বেষ্টিত হওয়ায় এখানকার কৃষকরা যুগ যুগ ধরে পাট চাষ করে আসছেন। এ বছর নদ-নদী, খাল বিল ও ডোবাতে পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি না থাকায় পাট জাগ দিতে না পেরে চরম বিপাকে পড়েছেন। তাছাড়া একদিকে যেমন শ্রমিক সংকট, অন্য দিকে এবার বর্ষা মৌসুমে বৃষ্টিপাত কম হওয়ায় ক্ষেতেই শুকাচ্ছে কর্তনকৃত পাট গাছ। ফলে পাটের কাঙ্খিত উৎপাদন ও ন্যায্য মূল্য নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন পাট চাষীরা।

স্থানীয় কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, হোসেনপুর উপজেলার ছয়টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভায় চলতি বছর পাট চাষের লক্ষ্য মাত্রা  দুই হাজার ৩৫০ হেক্টর নির্ধারণ করা হলেও চাষ হয়েছে আরো বেশি জমিতে।

Image

সরেজমিনে তথ্য সংগ্রহ কালে উপজেলার চরকাটিহারী গ্রামের পাটচাষী আবুল কালাম বলেন, চলতি বছর আমার এক বিঘা জমিতে পাটের আবাদ রয়েছে। পাটের ফলন ১৪-১৬ মণ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। বর্তমানে বাজারে দামও ভালো। আমি পানির অভাবে পাট জাগ দেয়া নিয়ে চিন্তার মধ্যে আছি। এবার এখনো তেমন ভারী বৃষ্টিপাত না হওয়ায় এলাকায় নিচু জলাশয়ে পানি জমেনি।

সাহেবের চর গ্রামের কৃষক, শাকিল, লাল মিয়া এর সাথে কথা হলে জানান, পুকুরে কিংবা গর্তে স্যালো মেশিনের মাধ্যমে পানি দিয়ে পাট জাগ দিতে অনেক খরচ। তবে শেষ পর্যন্ত যদি পাট জাগ দেয়ার মতো বৃষ্টিপাত না হয়, তাহলে মাঠ থেকে দূরে ব্রম্মপুত্র নদে  পাট নিয়ে সেখানে জাগ দিতে হবে। সে ক্ষেত্রে উৎপাদন খরচ বেড়ে যাবে।

উপজেলার মেছেরা গ্রামের শহিদ, মঙ্গোল, জয়নাল, হারুন, হুমায়ুন, সুরুজ, হিরু, অহিদ আফাজ উদ্দিন জানান, এ বছর বৃষ্টির পানির অভাবে পাট জাগ দিতে সমস্যা হচ্ছে। এ সময় ধান ও পাটের জন্য বৃষ্টির পানির খুবই প্রয়োজন। এ বছর আষাঢ় শেষে শ্রাবণ শুরু হলেও পাট জাগ দেয়ার মতো বৃষ্টিপাত হয়নি।

Image

এ বছর বৃষ্টিপাত তেমন একটা না হওয়ায় মাঠ-ঘাট প্রায় পানি শূন্য। আমাদের এলাকার জমির পাট কাটার উপযোগী হলেও বৃষ্টির পানির অভাবে পাট জাগ দেয়া চলতি বছর প্রতি বিঘা জমিতে চাষ থেকে শুরু করে পাট উৎপাদন পর্যন্ত ২০-২২ হাজার টাকা খরচ হচ্ছে। বর্তমানে বাজারে পাটের যে দাম চলছে, তা অব্যাহত থাকলে প্রতি বিঘা জমির পাট বিক্রি করে ৪০-৫০ হাজার টাকা আয় হবে।

এ ব্যাপারে উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ একেএম শাহ জাহান কবির বলেন, উপজেলায় দেশি, তোষা, মেস্তা এবং কেনাফপাট চাষ হয়েছে এখনও সব যায়গায় কর্তন হয়নাই যেদিকে পানি পর্যাপ্ত সরবরাহ আছে সেদিকে পাট কাটা হচ্ছে। তবে দু-তিন দিন ধরে যে বৃষ্টি হচ্ছে তা অব্যাহত থাকলে আশা করি কৃষকদের সমস্যা হবে না।আমরা সার্বক্ষণিক কৃষকদের খুঁজ খবর নিচ্ছি।

সম্পর্কিত সংবাদ

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

Back to top button

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker