Uncategorized

টাঙ্গাইলে বিষমুক্ত সবজি চাষ করে ভাগ্যের চাকা ঘুরিয়েছেন আব্দুল হক

আব্দুস সাত্তার,প্রতিনিধি,টাঙ্গাইল:

রাসায়নিক সার ও বিষমুক্ত সবজি চাষ করে ভাগ্যের চাকা ঘুরিয়েছেন আব্দুল হক নামের এক যুবক। বর্তমানে তার রয়েছে ৩টি কৃষি খামার। আব্দুল হক টাঙ্গাইলের কালিহাতী উপজেলার দড়িখশিলা গ্রাামের আব্দুল কাদেরের ছেলে। তাকে দেখে অনুপ্রাণিত হয়ে কৃষিতে যুক্ত হওয়ার আগ্রহী হচ্ছেন অনেকেই।

Image

জানা গেছে,আব্দুল হক এইচ এসসি পাশ করার পর বাপ-দাদার ব্যবসা তাঁত শিল্পকে ধরে রাখতে হাল ধরেন তাঁত শিল্পে শাড়ি উৎপাদন কাজে। করোনা ও বন্যায় বন্ধ হয়ে যায় তার তাঁত ফ্যাক্টরী। বেকার হয়ে পড়েন তিনি। বেকারত্ব ঘুচাতে উপজেলা কৃষি অফিসের পরামর্শে বাড়ির পাশের বাবার এক টুকরো জমিতে সবজি আবাদের উদ্যোগ নেন আব্দুল হক। বিষমুক্ত সবজি উৎপাদনের জৈব সার প্রয়োগ করে শসা, বেগুন, তরমুজ,লাউ, মিষ্টিকুমড়া,চিচিংঙ্গা,ঝিঙা,ঢেঁড়স, করলা, পেঁপে,ডাঁটা, মুলাসহ বিভিন্ন সবজি চাষ করেন। এতে বাম্পার ফলন হওয়ার তাক লাগানো সাফল্য পান তিনি। এর পর আর পিছনে তাকাতে হয়নি তার।

Image

বর্তমানে উপজেলার সহদেবপুর ইউনিয়নের মুন্দইল,দড়িখশিলা,কুকরাইল গ্রামে তিনটি কৃষি খামার রয়েছে তার।প্রতিটি খামারে গড়ে প্রতি মাসে ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকা আয় করে থাকেন তিনি। তার তিনটি খামারে প্রতিদিন ৬ জন শ্রমিক কাজ করে থাকে। বর্তমানে খামার তিনটিতে টমেটো,শসা,করলা,লাউ চাষ করা হয়েছে।আবহাওয়া অনুকুলে থাকলে ভালো ফলনের আশা করছেন আব্দুল হক।

উদ্যোক্তা আব্দুল হক জানান,করোনা ও বন্যার সময় তাদের তাঁত ফ্যাক্টরী বন্ধ হয়ে যায়। বেকার হয়ে পড়েন তিনি। তখন চাষবাসের বিষয়টি মাথায় আসে তার। উপজেলা কৃষি অফিসের পরামর্শে আধুনিক ‘মালচিং’ পদ্ধতিতে চাষাবাদ করেন তিনি। এ পদ্ধতিতে চাষাবাদের জন্য বেড তৈরি করে মাটি দিয়ে এক ধরনের বিশেষ প্লাস্টিকের কাগজ দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয়। নির্দিষ্ট দূরত্বে কাগজ ফুটো করে চারা লাগানো হয়। বিশেষ এ কাগজ মাটির তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ ও গুণগতমান ঠিক রাখে। আগাছা জন্মায় না। জৈব সারের সক্ষমতা ধরে রাখে এক বছর। খামারে তারা কোনো ধরনের রাসায়নিক সার বা কীটনাশক ব্যবহার করেননি। সার-কীটনাশক সব জৈব। পোকামাকড় মারতে ব্যবহার করেন ফেরোমিন ফাঁদ প্রযুক্তি।

Image

জৈব পদ্ধতিতে চাষ শুরু করার পর স্থানীয়রা তাকে নিয়ে অনেকে হাসাহাসি করে নানা ভাবে সমালোচনা করত।এখন তারাই খামার দেখতে আসেন তার। অনেকেই এখন উৎসাহ দিয়ে থাকে। নিজেরাও এভাবে খামার করার আগ্রহ দেখায়। এপদ্ধতিতে উৎপাদিত সবজির চাহিদা ব্যাপক। খামারেই তার উৎপাদিত সবজির প্রায় অর্ধেক বিক্রি হয়ে যায়। বাকি সবজি রামপুর ভাসানী মার্কেট ও পৌজান বাজারে বিক্রি করা হয়। এছাড়াও তিনি চারা উৎপাদন করে নিজের চাহিদা পূরণ করার পর বাকি চারা বিক্রি করে থাকেন।

কৃষি খামার দেখতে আসা স্কুল শিক্ষক পলাশ তালুকদার জানান,কৃষিতে শিক্ষিত বেকার যুবকরা এগিয়ে আসলে বেকারত্ব কমে যাবে,দেশের উন্নয়ন হবে।তিনি খামার দেখতে এসে গাছ থেকে তোলা ২ কেজি শসা কিনে নেন।ৎ

আব্দুল হক শিক্ষিত বেকারদের উদ্দেশ্যে বলেন,বেকার না থেকে কৃষিতে সময় দেন,কর্মসংস্থান সৃষ্টি করেন। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ফারহা না মামুন জানান,উপজেলায় সব চেয়ে বড় সবজি খামারী আব্দুল হক। তিনি নিজ উদ্যোগে খামার গড়ে তোলেন। আমরা তাকে একটি খামার প্রকল্প দিয়েছিলাম প্রদর্শনী করতে। তিনি ভালো করেছেন। আমরা উপজেলা থেকে তাকে সহযোগিতা দিয়ে থাকি। তার কিছু চাহিদা আছে আমরা পরবর্তী প্রকল্পের মাধ্যমে পূরণ করার চেষ্টা করবো।

সম্পর্কিত সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এছাড়াও পরীক্ষা করুন
Close
Back to top button

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker