জাতীয়

১৪ দলের শরিকরা এখনো ধোঁয়াশায়

আগামী ৩০ নভেম্বরের মধ্যে নির্বাচন কমিশনে দলীয় প্রার্থীদের চূড়ান্ত তালিকা জমা দিতে হবে। সেই হিসাবে আর মাত্র চার দিন সময় হাতে আছে। আওয়ামী লীগ জোটবদ্ধভাবে নাকি এককভাবে নির্বাচন করবে, তা নিয়ে কিছুটা ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে। এর মধ্যেই আজ রবিবার নিজেদের প্রার্থী ঘোষণা করবে দলটি।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটের অন্য শরিক দলগুলোর সঙ্গে এখনো বৈঠকে বসেননি আওয়ামী লীগ সভাপতি, মনোনয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টিও প্রধানমন্ত্রীর সাক্ষাতের অপেক্ষায় আছে। যদিও সদ্য নিবন্ধন পাওয়া দল তৃণমূল বিএনপির সঙ্গে বৈঠক করেছেন তিনি।

জানা গেছে, বিএনপি নির্বাচনে এলে জোটবদ্ধভাবে ভোট করার পরিকল্পনা আগেই নিয়ে রেখেছে আওয়ামী লীগ।

যদি বিএনপি শেষ পর্যন্ত না আসে তাহলে নির্বাচনকে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ করার কৌশল হিসেবে সব আসনে নৌকার প্রার্থী দেওয়া হবে। আবার শরিকদের সঙ্গে আসন ভাগাভাগি করেও প্রার্থী দেওয়া হতে পারে। সে ক্ষেত্রে আজ যদি ৩০০ আসনে নিজেদের প্রার্থীর নাম ঘোষণা করা হয়, সেখান থেকে কিছু প্রার্থী পরে প্রত্যাহার করে নেওয়া হবে। ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মোট প্রার্থী ছিল ২৫৮ জন।

এবারের নির্বাচনে শরিকরা নৌকা প্রতীকের বাইরে নিজ দলের প্রার্থীদের ভোটের মাঠে নামানোর সুযোগ পাবে। কোনো আসনেই যেন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় কেউ নির্বাচিত হতে না পারে সেদিকেও দলের উচ্চ পর্যায় থেকে নজর রাখতে বলা হয়েছে।

আওয়ামী লীগের জোটের জটিলতা নিয়ে ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের এক মন্তব্যের কারণে। আওয়ামী লীগের জোটের বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি জানিয়ে তিনি বলেন, ‘প্রয়োজন না হলে জোট নয়। জোটের বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।

একটি জোটের বিপরীতে আরেকটি জোট হয়। সে ক্ষেত্রে জোটের প্রয়োজন না পড়লে কেন জোট করতে যাব?’

শরিকদের বিষয়ে জানতে চাইলে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘শেখ হাসিনা ১৪ দলীয় জোটের চেয়ারম্যান। আমরা শরিকদের বিষয়ে এখনো ঠিক করিনি। কারণ জোটের বিপরীতে জোট হয়। আমাদের প্রতিপক্ষের যদি একটা বড় জোট হয়, সেটার বিপরীতে আমাদেরও জোট হবে। এ ছাড়া আমরা কেন অহেতুক জোট করতে যাব? প্রয়োজন না থাকলে জোট করব না। জোট করব যাদের নিয়ে, মানুষের কাছে তাদের গ্রহণযোগ্যতা থাকতে হবে।’

ওবায়দুল কাদেরের এমন বক্তব্য প্রসঙ্গে জোটের শরিক দলগুলোর একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তাঁরা বিষয়টিকে গুরুত্ব দিলেও প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনার অপেক্ষায় আছেন। আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনার কথাই ওবায়দুল কাদের বলছেন কি না, সেটিই জানতে আগ্রহী তাঁরা। তবে এমন চূড়ান্ত পর্যায়ে এমন নির্দেশনা পাওয়া গেলে জোটের বাইরে গিয়েই নির্বাচনে অংশ নেবে শরিক দলগুলো।

২০০৮ সাল থেকেই জোটবদ্ধ হয়ে নির্বাচন করছে আওয়ামী লীগ। আওয়ামী লীগ ও শরিক দলগুলোর সমন্বয়কের দায়িত্ব পালন করছেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমু। আওয়ামী লীগ রাজনৈতিক জোট ভাঙার প্রস্তুতি নিচ্ছে কি না, জানতে চাইলে তিনি মন্তব্য করেননি। 

জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের শরিক দল বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন বলেন, ‘জোট প্রসঙ্গে ওবায়দুল কাদের কেন এমন কথা বললেন এটার ব্যাখ্যা উনিই ভালো দিতে পারবেন। আমার সঙ্গে পাঁচ দিন আগেও কথা হয়েছে। তখনো সব কিছু ঠিক ছিল। আওয়ামী লীগ নিজে নির্বাচন কমিশনে চিঠি দিয়ে জোটবদ্ধভাবে নির্বাচন করার কথা জানিয়েছিল। এখন যদি এই পাঁচ দিনের মধ্যে বড় কোনো সিদ্ধান্তের প্রয়োজন হয়, তাহলে সেটা হবে।’

এক প্রশ্নের জবাবে ১৪ দলীয় শরিক জোটের প্রভাবশালী এই নেতা বলেন, ‘আমরা নির্বাচনে যাচ্ছি এটা চূড়ান্ত। আওয়ামী লীগ জোটে না গেলে আমরা জোটের বাইরে নির্বাচন করব। এখন পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী শরিকদের সঙ্গে বসার সময় দেননি। হাতে সময় বেশি নেই। হয়তো উনি (শেখ হাসিনা) খুব বেশি ব্যস্ত। কাল (আজ) সকালে মিটিংয়ের পর দেখি আমাদের সময় দেন কি না।’

আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোটে আছে বাংলাদেশ সাম্যবাদী দল। জানতে চাইলে এই দলের সাধারণ সম্পাদক দিলীপ বড়ুয়া বলেন, ‘উনারা যেটা চাইবেন সেটাই হবে। উনারা যেভাবে খেলতে চাইবেন সেভাবেই খেলা হবে। কী করার আছে, কিছুই করার নাই। এখন দেখার বিষয় কাদের সাহেবের কথা প্রধানমন্ত্রীর কথা কি না। প্রধানমন্ত্রী এটা কিভাবে দেখছেন সেটা জানা জরুরি।’

আজ নৌকার প্রার্থী ঘোষণা

আজ দলীয় প্রার্থী ঘোষণা করবে আওয়ামী লীগ। প্রার্থী বাছাইয়ে এলাকায় জনপ্রিয়তাকেই গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। নৌকার প্রতীক হাতে ভোটে দেখা যাবে অনেক নতুন পরিচিত মুখ। সেই সঙ্গে বর্তমান অনেক সংসদ সদস্যই মনোনয়ন থেকে বঞ্চিত হবেন। 

বিকেল সাড়ে ৪টায় রাজধানীর ধানমণ্ডিতে অবস্থিত আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার রাজনৈতিক কার্যালয় থেকে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে প্রার্থীদের নাম ঘোষণার কথা রয়েছে। দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করবেন।

সারা দেশে ৩০০ সংসদীয় আসনে একসঙ্গে নৌকার প্রার্থী ঘোষণা করার সম্ভাবনা রয়েছে। গত তিন দিনে রংপুর, রাজশাহী, খুলনা, বরিশাল, ময়মনসিংহ ও ঢাকা বিভাগের প্রার্থী চূড়ান্ত করেছে আওয়ামী লীগের সংসদীয় মনোনয়ন বোর্ড। এখনো সিলেট ও চট্টগ্রাম বিভাগের প্রার্থী চূড়ান্ত করা বাকি রয়েছে বলে জানা গেছে।

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নৌকার প্রার্থী হতে সারা দেশে ৩০০ আসনের বিপরীতে মোট তিন হাজার ৩৬২টি মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করা হয়েছে। এতে প্রতি আসনে গড়ে ১১টি করে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করা হয়েছে।


Discover more from MIssion 90 News

Subscribe to get the latest posts to your email.

সম্পর্কিত সংবাদ

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

Back to top button

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker