Uncategorized

স্বতন্ত্রের আধিক্য রাখা না রাখার চিন্তায় আ. লীগ

বিএনপিসহ বেশ কয়েকটি দল অংশ না নেওয়ায় নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ করতে নিজ দলীয় নেতাদের স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার অনুমতি দিয়েছে আওয়ামী লীগ। আবার ১৪ দলের সঙ্গে জোটও টিকিয়ে রেখেছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত স্বতন্ত্র প্রার্থীর যে সংখ্যা দাঁড়িয়েছে তা নিয়ে আওয়ামী লীগে অস্বস্তি তৈরি হয়েছে। অন্যদিকে নিজেদের প্রার্থী দেওয়া আসনে আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্রদের চায় না শরিকরা।

আওয়ামী লীগের মনোনয়ন না পাওয়া বর্তমান ৭১ সংসদ সদস্যের মধ্যে ৬১ জনও আছেন এই স্বতন্ত্রের তালিকায়। এত দিন এ বিষয়ে একধরনের ছাড় দিয়ে রাখা হলেও আস্তে আস্তে বিষয়টি নিয়ে ভাবতে শুরু করেছে আওয়ামী লীগ। আর শরিক দলের নেতারা বলছেন, আওয়ামী লীগ ঘরের স্বতন্ত্রদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেয় তাঁরা সেটি জানার অপেক্ষায়।

কুষ্টিয়া-২ ও নারায়ণগঞ্জ-৫ আসন ছাড়া বাকি সব আসনেই দলীয় মনোনয়ন দিয়েছে আওয়ামী লীগ।

এর মধ্যে ২২৯টি আসনে (গতকাল শনিবার পর্যন্ত) দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে ভোট করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন আওয়ামী লীগের ৪৫৫ জন স্বতন্ত্র প্রার্থী। দলীয় সূত্রে জানা গেছে, মনোনয়ন প্রত্যাহারের শেষ দিন ১৭ ডিসেম্বরের পর আওয়ামী লীগের বিভিন্ন কমিটিতে রয়েছেন এমন প্রার্থীদের অনেককে নির্বাচন থেকে সরে আসার নির্দেশনা দেওয়া হতে পারে। জাতীয় পার্টিসহ অন্য দলগুলো কোন পথে হাঁটে, তা দেখেই মূলত এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত আসতে পারে।

তবে দলের অভ্যন্তরে এমন আলোচনাও আছে, ভোটের মাঠে যেসব দলীয় স্বতন্ত্র প্রার্থীর বিজয়ী হওয়ার সম্ভাবনা আছে, তাঁদের নির্বাচন থেকে সরিয়ে আনা অতটা সহজ হবে না।

এ নিয়ে আওয়ামী লীগের শীর্ষ এক নেতা কালের কণ্ঠকে বলেন, কোথাও কোনো বিশৃঙ্খলা হচ্ছে কি না, সেটা দেখতে হবে। যদি স্বাভাবিক পরিস্থিতি থাকে, তাহলে তো সমস্যা নেই। সবাই নির্বাচন করবে। কিন্তু পরিস্থিতি খারাপ হলে দলীয় স্বতন্ত্রদের বসে যাওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হবে। না মানলে দলের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

আওয়ামী লীগের গঠনতন্ত্রে বলা আছে, জাতীয় ও স্থানীয় সরকার নির্বাচনে কেউ দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে প্রার্থী হলে দল থেকে তাঁকে বহিষ্কার করা যাবে। তবে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর একজন সদস্য কালের কণ্ঠকে বলেন, দলের সিদ্ধান্তের বাইরে নির্বাচনে অংশে নিয়ে বহিষ্কার হওয়ার নজির যেমন আছে, তেমনি বিজয়ী হওয়ার পর দলে জায়গা পাওয়ার ঘটনাও অনেক। শেষ পর্যন্ত কী হয়, তা এখনই বলা কঠিন।

আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আব্দুর রহমান কালের কণ্ঠকে বলেছেন, ‘অধিক হারে স্বতন্ত্র প্রার্থী থাকলে সেটা দলের কেন্দ্রীয় কমিটির কাছে গ্রহণযোগ্য হবে না।’ 

শরিকদের উদ্বেগ
আওয়ামী লীগের শক্তিশালী বিরোধী প্রার্থীদের নিয়ে চিন্তিত জোটের শরিকরাও। জোটের প্রভাবশালী নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, নৌকা প্রতীক নিয়ে শরিকরা যেসব আসনে নির্বাচন করবেন, সেখানে অন্য দলের প্রার্থী থাকলেও আওয়ামী লীগের যেন স্বতন্ত্র প্রার্থী না থাকেন, সেদিকে আওয়ামী লীগের দৃষ্টি চান তাঁরা।

১৪ দলীয় জোটের নেতা জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের সভাপতি হাসানুল হক ইনু কালের কণ্ঠকে বলেন, আওয়ামী লীগের সঙ্গে বৈঠকে দলীয় বিদ্রোহীদের নিয়ে আলোচনা হবে। আওয়ামী লীগ ঘরের স্বতন্ত্রদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেবে, সেটা জানতে চাওয়া হবে।  

তৃণমূলে বিভ্রান্তি

বরিশাল-৬ ও ময়মনসিংহ-৩ আসনে সবচেয়ে বেশি স্বতন্ত্র প্রার্থী আওয়ামী লীগের। এ দুই আসনে আটজন করে প্রার্থী ভোটে অংশ নিতে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। এর বাইরে মেহেরপুর-২ আসনে সাতজন, নোয়াখালী-২, নওগাঁ-২ ও নওগাঁ-৬ আসনে ছয়জন করে এবং নোয়াখালী-৫, সাতক্ষীরা-১, চুয়াডাঙ্গা-২, কুড়িগ্রাম-৪, সিরাজগঞ্জ-৩, নীলফামারী-৩ ও মানিকগঞ্জ-২ আসনে পাঁচজন করে স্বতন্ত্র প্রার্থী রয়েছেন।

এমন পরিস্থতিতে তৃণমূলে আওয়ামী লীগের কর্মীরা কার পক্ষে ভোটের মাঠে কাজ করবেন, তা নিতে বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে। কর্মীরা দীর্ঘদিন যাঁদের রাজনীতি করেছেন এখন তাঁরা স্বতন্ত্র প্রার্থী। আবার দলের নিজস্ব প্রার্থীও আছেন।

জানতে চাইলে ময়মনসিংহ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এহতেশামুল আলম কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘এখনো কেন্দ্র থেকে কোনো সিদ্ধান্ত পাইনি। কার পক্ষে কাজ করতে হবে, এমন কোনো নির্দেশনা দেওয়া হয়নি। তবে আমরা নৌকার পক্ষে কাজ করছি। কিন্তু কেউ যদি স্বতন্ত্রের পক্ষে কাজ করে তাকে তো জোর করা যাবে না। তারাও আওয়ামী লীগেরই লোক।’

সম্পর্কিত সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এছাড়াও পরীক্ষা করুন
Close
Back to top button

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker