শিক্ষাসাহিত্য

বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে লেখা প্রবন্ধ অনলাইন পোর্টাল থেকে চুরির অভিযোগ

সপ্তম শ্রেণির পাঠ্যবই নিয়ে বিতর্কের রেশ এখনো কাটেনি। এর মধ্যেই নতুন বিতর্ক উঠেছে ষষ্ঠ শ্রেণির ‘শিল্প ও সংস্কৃতি’ বই নিয়ে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে একটি অনলাইন নিউজ পোর্টালে ‘টুঙ্গিপাড়ার সেই ছেলেটি’ শিরোনামে প্রকাশিত প্রবন্ধ হুবহু বইয়ে তুলে দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। ঢাকা কলেজের বাংলা বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী নাসরুল্লাহ শাকুরি দাবি করেছেন, তার লেখাটি বইয়ে তুলে দেওয়া হয়েছে। অথচ কোথাও তার নাম উল্লেখ করা হয়নি।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০২০ সালের ১৫ আগস্ট ‘জাতীয় শোক দিবস’ উপলক্ষে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে ‘টুঙ্গিপাড়ার সেই ছেলেটি’ শিরোনামে একটি প্রবন্ধ লেখেন নাসরুল্লাহ শাকুরি। অনলাইন নিউজ পোর্টাল ‘পূর্বপশ্চিমবিডিডটকমে’ তা প্রকাশিত হয়। লেখাটির কিছু অংশ বাদ দিয়ে একই শিরোনামে ২০২৩ সালে ষষ্ঠ শ্রেণির ‘শিল্প ও সংস্কৃতি’ বইয়ে প্রবন্ধ হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। তবে এতে মূল লেখকের নাম উল্লেখ করা হয়নি।

নাসরুল্লাহ শাকুরি বলেন, ‘একজন লেখকের একটি লেখা পাঠ্যবইয়ে অন্তর্ভুক্ত হওয়া তার জন্য সম্মানের, অত্যন্ত গৌরবের। দুঃখজনক হলেও সত্য যে, এখানে লেখকের নাম উল্লেখ না করে পূর্বানুমতি ছাড়াই লেখাটির কয়েকটি শব্দ পরিবর্তন করে, কয়েকটি লাইন উলট-পালট করে প্রকাশ করা হয়েছে, যা কাঙ্ক্ষিত নয়।’

তিনি বলেন, ‘আসলে লেখালেখি একটি শিল্প। এ শিল্পের শিল্পীকে আমাদের মূল্যায়ণ করতে হবে। লেখককে তার প্রাপ্য সম্মান থেকে বঞ্চিত করা উচিত নয়। এতে লেখক উৎসাহ হারিয়ে ফেলেন। ফলে দেশ ও জাতি সৃজনশীলতার দিক দিয়ে পিছিয়ে পড়ে। আমার অনুরোধ থাকবে, আগামী সংস্করণে লেখকের নামসহ লেখাটি প্রকাশের জন্য এনসিটিবি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।’

পাঠ্যবইয়ে চৌর্যবৃত্তির অভিযোগ নিয়ে জাতীয় পাঠ্যক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড: মো ফরহাদুল ইসলাম বলেন, ‘জাতীয় পর্যায়ে দুটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত করে তারা যে রিপোর্ট দেবেন, তার আলোকে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

পাঠ্য বইয়ে ভুল সংশোধন বিষয়ে দুটি জাতীয় তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। একটি জাতীয় তদন্ত কমিটির প্রধান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক ড: আব্দুল হালিম। তিনি বলেন, ‘এমন ঘটনা কাম্য নয়। বিষয়টি দুঃখজনক। যদি প্রয়োজনীয় লেখা কপি পেস্ট করতে হয়, তবে সেখানে উল্লেখ করতে হবে যে, আমি ওমুক লেখকের লেখাটি এখানে উল্লেখ করেছি। অথবা লেখাটি যদি হুবহু নেওয়া হয়ে থাকে, তবে মূল লেখকের নামেই সেটি প্রকাশিত হবে। এ বিষয়গুলো আমরা খতিয়ে দেখছি।’

ষষ্ঠ শ্রেণির ‘শিল্প ও সংস্কৃতি’ বইয়ের সম্পাদক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক নিসার হোসেন। তিনি চৌর্যবৃত্তির অভিযোগের বিষয়টি স্বীকার করেছেন। অধ্যাপক নিসার হোসেন বলেন, ‘লেখাটির মধ্যে প্লেজারিজম রয়েছে। আসলে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে লেখা এত বেশি পরিমাণে রয়েছে যে, বিখ্যাত লেখকদের লেখাগুলো আমরা ঠিক করে দিয়েছিলাম। পরে এসব লেখা সময়ের অভাবে পুনরায় যাচাই-বাছাই করে দেখা সম্ভব হয়নি।’

তিনি বলেন, ‘এরকম সমস্যা আরও বের হওয়ার শঙ্কা রয়েছে। তবে এ ধরনের কাজ কখনই কাম্য নয়। কেননা এসব বিষয়ে আমরা লেখকদের আগেই ওয়ার্কশপ করিয়েছি। যাদের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ আসবে, তাদের শুধু বই থেকেই বাদ দেওয়াই নয় কী ধরনের শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া যায়, তা প্রক্রিয়াধীন।’

মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক নেহাল আহমেদ বলেন, ‘বিষয়টি দুঃখজনক। পঠ্যবইয়ের ভুল নিয়ে একাধিক তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। অনেক সময় অনিচ্ছাকৃতভাবে এমন ভুল হয়ে থাকে। তবে কেউ যদি ইচ্ছাকৃতভাবে ভুল করে থাকেন, তার দায়ভার তাকেই নিতে হবে।’

সম্পর্কিত সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এছাড়াও পরীক্ষা করুন
Close
Back to top button

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker