ইতিহাস ও ঐতিহ্যকিশোরগঞ্জ

পাগলা মসজিদের দান বাক্সে মিলেছে এক মায়ের চিঠি

কথিত আছে, কিশোরগঞ্জের পাগলা মসজিদে মানত করলে মনের বাসনা পূর্ণ হয়- এমন ধারণা থেকে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবাই এখানে দান করে থাকেন। একই ভাবে ছেলেকে হাফেজ বানাতে সাত মাদরাসায় ভর্তি করিয়েও পড়ায় মনোযোগ বসাতে না পেরে পাগলা মসজিদের দানবাক্সে প্রার্থনামূলক চিঠি দিয়েছেন এক মা।

সন্তানকে হাফেজ বানাতে চিঠিতে মা লিখেছেন,

“আমার ছেলের নাম মো: মোরসালিন। বয়স ১৪ বছর। ছোটবেলা থেকে ইচ্ছে ছিল তাকে মাদারাসায় লেখাপড়া করিয়ে একজন হাফেজ বানানো, কিন্তু আমি এই পর্যন্ত সাতটি মাদারাসা পরিবর্তন করেও তার মনোযোগ পড়ায় বসাতে পারিনি। এখন আপনারা আমার ছেলের জন্য একটু দোয়া করে দেবেন, যেন সে একজন হাফেজ হতে পারে।”
Mother’s letter given in the donation box of Pagla Masjid

গতকাল শনিবার , কিশোরগঞ্জের ঐতিহাসিক পাগলা মসজিদের ৮ টি দান বাক্স খোলা হয়, তাতে এবার রেকর্ড পরিমাণ অর্থ, স্বর্নলংকারের পাশাপাশি পাওয়া গেছে মনস্কামনা পুরনের উদ্দেশ্যে বিভিন্ন চিঠি। এর মাঝে এক মায়ের মিনতি সম্বলিত চিঠিও পাওয়া গেছে।

শনিবার (৬ নভেম্বর) সকাল ৯ টায়, মসজিদের ৮টি দান বাক্স খোলার সাড়ে ৯ ঘন্টা পর সন্ধ্যা সাড়ে ৬ টায় গণনা শেষ হয়। গণনা শেষে দান বাক্সগুলোতে মোট তিন কোটি ৭ লাখ ১৭ হাজার ৫৮৫ টাকা পাওয়া গেছে।

যা দান বাক্স থেকে পাওয়া দানের হিসাবে এ যাবৎকালের সর্বোচ্চ। এর আগে দান বাক্স থেকে পাওয়া সর্বোচ্চ দান ছিল, দুই কোটি ৩৮ লাখ ৫৫ হাজার ৫৪৫ টাকা। চলতি বছরের ২৩ জানুয়ারি দান বাক্স খোলার পর ওই টাকা পাওয়া গিয়েছিল।

সাধারণত তিন মাস পর পর পাগলা মসজিদের দান বাক্স খোলা হয়। কিন্তু বৈশ্বিক মহামারি করোনা ভাইরাসের কারণে দান বাক্স খোলার সময়ের ব্যবধান বাড়ানো হয়েছে। এবার ৪ মাস ১৭ দিন পর এসব দান বাক্স খোলা হয়েছে।

সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, শনিবার (৬ নভেম্বর) সকাল ৯টায় জেলা প্রশাসনের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাগণের উপস্থিতিতে মসজিদের ৮টি দান বাক্স খোলা হয়। দান বাক্স থেকে টাকা খুলে প্রথমে বস্তায় ভরা হয়। এবার বড় বস্তায় ১২ বস্তা টাকা হয়েছে।

এরপর শুরু হয় দিনব্যাপী টাকা গণনা। টাকা গণনায় স্বাস্থ্যবিধি মেনে মসজিদ মাদরাসার শতাধিক ছাত্র শিক্ষক, রূপালী ব্যাংকের ৫০ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী, ১০ জন আনসার এবং মসজিদ পরিচালনা কমিটির সদস্য ও সার্বক্ষণিক দায়িত্বরত কর্মকর্তা-কর্মচারিরা অংশ নেন।

পাগলা মসজিদ পরিচালনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক, কিশোরগঞ্জ পৌরসভার মেয়র মাহমুদ পারভেজ, কিশোরগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) মোহাম্মদ গোলাম মোস্তফা, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ফারজানা খানমের তত্ত্বাবধানে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট শফিকুল ইসলাম, মো: শিহাবুল আরিফ, অর্ণব দত্ত ও মাহামদুল হাসান, পাগলা মসজিদের প্রশাসনিক কর্মকর্তা বীর মুক্তিযোদ্ধা মো: শওকত উদ্দীন ভূঞা, রূপালী ব্যংকের এজিএম মো: রফিকুল ইসলাম প্রমুখ টাকা গণনার কাজ তদারকি করেন।

টাকা গণনার এই এলাহী কাণ্ড নিজ চোখে অবলোকন করতে শহরের বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গসহ নানা শ্রেণিপেশার মানুষ মসজিদে ছুটে যান।

কথিত আছে, খাস নিয়তে এই মসজিদে দান করলে মনোবাসনা পূর্ণ হয়। সেজন্য দূর-দূরান্ত থেকেও অসংখ্য মানুষ এখানে দান করে থাকেন।

গতবছর করোনাভাইরাস সংক্রমণ শুরুর পর লকডাউনের সময়ে মসজিদে মুসল্লিদের চলাচল সীমিত করে দেয়া হয় এবং মহিলাদের প্রবেশাধিকার বন্ধ করে দেয়া হয়। তখনকার পরিস্থিতিতেও মসজিদটিতে মানুষ দান অব্যাহত রাখেন।

টাকা গণনা কার্যক্রম তদারকির দায়িত্বে থাকা অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ফারজানা খানম জানান, পাগলা মসজিদের দান সিন্দুক খুলে এবার তিন কোটি ৭ লাখ ১৭ হাজার ৫৮৫ টাকা পাওয়া গেছে। টাকাগুলো রূপালী ব্যাংকে জমা করা হয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন দেশের মুদ্রা ও স্বর্ণালঙ্কার পাগলা মসজিদের দান বাক্সে জমা পড়েছে।

ঐতিহাসিক পাগলা মসজিদ কমিটির সভাপতি জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শামীম আলম বলেন, পাগলা মসজিদকে একটি অন্যতম আধুনিক ইসলামিক স্থাপত্য হিসেবে গড়ে তোলার পরিকল্পনা রয়েছে। এ লক্ষ্যে কাজ চলছে।

কিশোরগঞ্জ শহরের ঐতিহাসিক স্থাপনার মধ্যে পাগলা মসজিদ অন্যতম একটি প্রতিষ্ঠান। শহরের পশ্চিমে হারুয়া এলাকায় নরসুন্দা নদীর তীরে মাত্র ১০ শতাংশ ভূমির ওপর এই মসজিদটি গড়ে উঠেছিল। সময়ের বিবর্তনে আজ এ মসজিদের পরিধির সাথে সাথে বেড়েছে এর খ্যাতি ও ঐতিহাসিক মূল্যও। মসজিদকে কেন্দ্র করে একটি অত্যাধুনিক ধর্মীয় কমপ্লেক্স এখানে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। সম্প্রসারিত হয়েছে মূল মসজিদ ভবন।

দেশের অন্যতম আয়কারী ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান হিসেবে স্বীকৃত মসজিদটিকে পাগলা মসজিদ ইসলামী কমপ্লেক্স নামকরণ করা হয়েছে। এ মসজিদের আয় দিয়ে কমপ্লেক্সের বিশাল ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে মসজিদটিকে ঘিরে চলছে ব্যাপক উন্নয়নযজ্ঞ। এছাড়া মসজিদের আয় থেকে বিভিন্ন সেবামূলক খাতে অর্থ সাহায্য করা হয়।

সম্পর্কিত সংবাদ

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

Back to top button

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker