কুড়িগ্রাম

শিক্ষকদের অনিয়মে স্কুল ছাড়ছে শিক্ষার্থীরা

দরিদ্রপীড়িত জেলা কুড়িগ্রামের চরাঞ্চলের দেড় শতাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অধিকাংশ শিক্ষকের বিদ্যালয়ে সময় মতো না যাওয়ার অভিযোগ উঠেছে। শিক্ষকদের এমন অনিয়মে দিন দিন বাড়ছে ঝরে পড়া শিশুর সংখ্যা। এ নিয়ে সন্তানদের অনিশ্চিত ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় অভিভাবকরাও।

কুড়িগ্রাম জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস সূত্র মতে, জেলায় ১২শ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে ৪ শতাধিক চরাঞ্চলে রয়েছে ১৬৯টি বিদ্যালয়। এসব বিদ্যালয়ে প্রায় ৩৩ হাজার শিক্ষার্থী অধ্যয়নরত। এর মধ্যে সদর উপজেলার হলোখানা ইউনিয়নের ছাট কালুয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, চর হলোখানা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, সারডোব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অধিকাংশ শিক্ষক দুর্গম চরের অজুহাতে বিদ্যালয়ে নির্দিষ্ট সময়ে উপস্থিত হন না।

সরেজমিনে সোমবার (২৩ জানুয়ারি) সকাল ৯টায় সারডোব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গেলে দেখা যায়, ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক শাহিনুর আখতার এবং সহকারী শিক্ষক জান্নাতুল ফেরদৌস শিক্ষক মিলনায়তনে বসে আছেন। বিদ্যালয়ে শুধুমাত্র প্রথম শ্রেণির ৩ জন শিক্ষার্থী আপেল, রজিনা ও সুমাইয়া উপস্থিত। ক্লাসে কোনো শিক্ষক না থাকায় খেলাধুলায় ব্যস্ত এসব শিশু শিক্ষার্থীরা।

সকাল ১০টা ৪৫ মিনিটে বিদ্যালয়ে প্রবেশ করেন অপর দুই সহকারী শিক্ষক আরজু আরা ও মাহমুদা আখতার। সংবাদকর্মীদের দেখে ঘাবড়ে যান ওই দুই শিক্ষিকা। এই দুই শিক্ষক সকাল ১০টা ৪৫ মিনিটে এলেও হাজিরা খাতায় সকাল ৯টায় স্বাক্ষর করে উপস্থিতি দেখান।

এলাকাবাসী আজিজুল, মজিবর, মর্তুজা, খোকা, বজলার রহমানসহ আরো অনেকে বলেন, এই বিদ্যালয়ে শিক্ষকরা নিয়মিত আসেন না। মাঝে মধ্যে আসলেও দেরিতে আসেন। যার কারণে বাচ্চারা পড়ালেখায় আগ্রহ হারাচ্ছে। অনেক ছাত্র-ছাত্রী এরইমধ্যে স্কুল থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। কারণ ছাত্র-ছাত্রীরা সময়মতো ক্লাসে এসে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে থাকে। শিক্ষকরা ক্লাসে না আসায় বিরক্ত হয়েই এখন বাচ্চারা স্কুল আসে না।

অভিভাবক মো: একরামুল হক বলেন, স্কুলে শিশুদের পাঠানোর পর দুশ্চিন্তায় থাকতে হয়। সঠিক সময়ে শিক্ষকরা না থাকলে দুষ্টুমি আর মারামারি করে থাকে। এছাড়া জেলার প্রায় চরাঞ্চলগুলোতে শিশুদের পড়তে নৌকা পাড়ি দিতে হয়। ফলে নদী পারাপারের ভয় ও সংসারের অভাব অনটনের কারণেও অনেক শিক্ষার্থী পড়াশোনা বন্ধ করে দেয়।

এ ব্যাপারে বিদ্যালয়ে দেরিতে আসা সহকারী শিক্ষিকা আরজু আরা জানান, তার নিকটাত্মীয়ের মৃত্যুজনিত কারণে বিদ্যালয়ে আসতে দেরি হয়েছে।

বিদ্যালয়ে দেরিতে আসা অপর সহকারী শিক্ষক মাহমুদা আখতার বলেন, আমার বাড়ি হলোখানায়। স্কুল থেকে অনেক দূরে। যে কারণে স্কুলে আসতে দেরি হয়। তাছাড়া পারিবারিক কাজ শেষ করে স্কুলে পৌঁছাতে একটু-আধটু দেরি হয়েই থাকে বলে জানান তিনি।

সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসার মো: ইয়াসিন আলী জানান, চর সারডোব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকদের দেরিতে উপস্থিতির বিষয়টির অভিযোগের সত্যতা পেয়েছি। আমি তাদের বিষয়ে যথাযথ প্রতিবেদন দাখিল করবো।

এ ব্যাপারে কথা হলে কুড়িগ্রাম জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো: শহীদুল ইসলাম জানান, সকাল ৯টার পর শিক্ষকদের বিদ্যালয়ে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। অভিযুক্ত শিক্ষকদের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ সত্য প্রমাণিত হলে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সম্পর্কিত সংবাদ

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

এছাড়াও পরীক্ষা করুন
Close
Back to top button

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker