কিশোরগঞ্জ

স্বামী হারাইয়া তিনডা ছেরি লইয়া খুব কষ্টে আছি-নাছিমা আক্তার

“কোনো বান্দা যতক্ষণ তার ভাইয়ের সাহায্যরত থাকে, আল্লাহ তায়ালাও ততোক্ষণ তাকে সাহায্য করতে থাকেন।” (তিরমিজি)

কিশোরগঞ্জের হোসেনপুরের সাহেবের চর গ্রামের মোছাঃ নাছিমা খাতুন (৪৫), ব্রহ্মপুত্র নদী ভাঙ্গনে সর্বস্ব হারিয়েও স্বামী এবং ৩ কন্যা সন্তান নিয়ে কোনমতে চলছিলো তাদের সংসার। জায়গা-জমি ভিটেমাটি বলতে কিছুই নেই। পরের জায়গায় আশ্র‍য় নিয়ে একচালা একটি ঘরে জীর্ণশীর্ণ ভাবে ওদের বসবাস। স্বামী দিনমজুরের কাজ করে কোনো রকম সংসারটাকে আগলে রেখেছিলো। দিন এনে দিন খেয়ে হাসি খুশিতেই চলছিলো নাছিমার পরিবার। এই হাসিখুশি সংসারেই ঘটে যায় আকস্মিক এক দুর্ঘটনা গত ২০২০ সালে নাছিমার স্বামী ব্রেইন স্ট্রোক করে মৃত্যুবরণ করেন। নিমিষেই পরিবারটিতে নেমে আসে অমানিশার অন্ধকার। এ যেন মরার উপর খাড়ার ঘা। সংসারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি স্বামীকে হারিয়ে স্ত্রী নাছিমা দিশেহারা এবং সন্তানগুলোর জীবন হয়ে যায় এলোমেলো। পুরো সংসারটাই এখন সর্বহারা। সংসারে জীবিকা নির্বাহ এবং আয় উন্নতির কোনো রাস্তা নেই। গ্রাম/পাড়া প্রতিবেশী সেই থেকেই এই পরিবারটির দেখাশোনা করে আসছে। যে যেভাবে পারছে আর্থিক থেকে শুরু করে সব ধরনের সহযোগিতা করে আসতেছে। এলাকাবাসীর সহযোগীতায় চলছে সংসারের খরচ এবং ৩টা মেয়ের লেখাপড়া। কিন্তু এভাবে কতদিন চলবে?আত্ন সম্মান বোধের কারণে নিজের সংসারের দূর অবস্তার কথা সবাইকে বলতেও পারছেনা।

স্থানীয় যুবক সিমনসহ প্রতিবেশী বয়োজ্যেষ্ঠরা বলেন,বড় অসহায় অবস্থায় আছে এ পরিবারটি ৩ মেয়ের মধ্যে বড় মেয়েটা বিবাহ উপযোগী, মেজো মেয়ে ৭ম শ্রেণীতে এবং ছোট মেয়েটা ২য় শ্রেণীতে পড়ে।

সরেজমিনে সোমবার (১০ অক্টোবর) বিকালে উপজেলার সিদলা ইউনিয়নের অন্তর্গত সাহেবের চর গ্রামের মাজার সংলগ্ন ব্রহ্মপুত্র নদের পাড়ে নাছিমার বাড়ী গিয়ে শুনা যায় অসহায়ত্বের নির্মম কাহিনী।

নাছিমা বলেন,আমার পরিবারটা লয়া খুব কষ্টে আছি,সংসারের চিন্তা,ছেইরানের লেহা পড়ার চিন্তা,বিয়া সাদীর চিন্তা, কিবা কি করাম ভাইবা পাইনা।আল্লাহ যদি মাইনষের উসিল্লায় কোনো পথ দেহায় আর কী!স্বামী হারাইয়া তিনটা ছেরি লইয়া খুব কষ্টে আছে,আসমানডা ভাইঙ্গা যেন মাথাত পড়ছে।

সাংবাদিক ও মানবিক ব্যক্তি এস এম মিজানুর রহমান মামুন বলেন, আমি সরেজমিনে গিয়েছি এই মুহুর্তে পরিবারটির থাকার জন্য দরকার একটি ঘর এবং জীবনযুদ্ধে সংগ্রাম করে জীবিকা নির্বাহ করে চলার জন্য দরকার গৃহপালিত গবাদিপশু।

তিনি আরও বলেন,একজন বিধবা নারী এবং ৩টা এতিম মেয়ে তাকিয়ে আছে সমাজের বিত্তবান দানশীল প্রভাবশালী দাতাদের দিকে। আপনাদের পাঠানো অনুদানে হয়তো পরিবারটি দেখতে পাবে একটু সুখের আলো। আমিও তাদের হয়ে বলতে চাই অনেকেই তো আছেন বিভিন্নভাবে বিভিন্ন জায়গায় সাহায্য সহযোগিতা করেন, আপনারা কি পারেননা অসহায় এ পরিবারটির পাশে দাড়াতে? সমাজে অনেক বিত্তবান আছেন, অনেক দাতা দানবীর এবং বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গার বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের অনেক ব্যক্তিবর্গ আছেন, প্রবাসী আছেন আপনাদের সবার কাছে রিকুয়েষ্ট আসুন আমরা সবাই এই পরিবারটির পাশে দাড়াই। এটা আপনার আমার আমাদের সবার দায়িত্ব। এতিমদের পাশে দাড়ালে তাদের মুখে একটু হাসি উপহার দিতে পারলে এর প্রতিদান মহান সৃষ্টিকর্তা নিশ্চই দিবেন।সাংবাদিক মাহফুজ রাজাকে সাথে নিয়ে উক্ত পরিবার এবং এলাকাবাসীর সাথে কথা বলেছি।

স্থানীয় ওয়ার্ড মেম্বার কামরুজ্জামান কাঞ্চন জানান,এই পরিবারটি খুব অসহায় আমি দেখেছি এবং অনেকেই আমাকে বলেছে,আমি নির্বাচিত হবার পর থেকেই সরকারি সুযোগ সুবিধা পরিষদের মাঝে আসলে দিয়ে থাকি তা দিয়ে হয়ত সাময়িক উপকৃত হয় কিন্তু এই পরিবারটির স্থায়ী সমাধান প্রয়োজন দেশ ও প্রবাসের বিত্তবানদের সুদৃষ্টি কামনা করছি এবং ইউনিয়ন পরিষদের মাধ্যমে আসা সর্বোচ্চ সেবা দিতে চেষ্টা করবো।

ইসলামিক অনুসন্ধানে জানা যায়, পবিত্র কোরআনের সূরা আলে ইমরান, আয়াত ১১০ এ, আল্লাহ তায়ালা মানবজাতির পরিচয় এভাবে তুলে ধরেছেন, “তোমরাই শ্রেষ্ঠ জাতি, মানুষের কল্যাণের জন্য তোমাদের সৃষ্টি করা হয়েছে।”

বুখারি শরিফের হাদিস ১২ তে, অভুক্ত ব্যক্তিকে আহার্য দেয়ার ফজিলত বলতে গিয়ে রাসূল (সা.) বলেছেন, মানুষের কল্যাণ-সংশ্লিষ্ট যত কাজ আছে, তার মধ্যে সর্বাপেক্ষা শ্রেষ্ঠ ও সর্বোত্তম হচ্ছে দরিদ্র ও ক্ষুধার্তকে খাবার দান করা।

সম্পর্কিত সংবাদ

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

Back to top button

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker