বরগুনা

কনডেম সেলে বন্দি মিন্নির ফের জামিন আবেদন

জামিন পেতে ফের হাইকোর্টে আবেদন করেছেন বরগুনার আলোচিত রিফাত শরীফ হত্যার দায়ে মৃত্যুদণ্ড পাওয়া আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নি। এ আবেদনটির শুনানি করতে রবিবার বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ ও বিচারপতি বিশ্বজিৎ দেবনাথের হাইকোর্ট বেঞ্চে ম্যানশন স্লিপ দেন তার আইনজীবীরা।

মিন্নির আইনজীবী জামিউল হক ফয়সাল কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আবেদনটি যাতে শুনানির জন্য কার্যতালিকায় তোলা হয় সে জন্য মেনশন স্লিপ দেওয়া হয়েছে। আশা করছি এই সপ্তাহেই আবেদনটি শুনানির জন্য কার্যতালিকায় উঠবে।’

এক প্রশ্নে মিন্নির আরেক আইনজীবী মো: শাহিনুজ্জামান বলেন, ‘মৃত্যুদণ্ডের আসামিদের জামিনের নজির নেই। তবে কোথাও নিষেধও নেই যে মৃত্যুদণ্ডের আসামিরা জামিন পেতে পারেন না। সাধারণত অপরাধের গুরুত্ব বিবেচনা করে এসব আসামিদের জামিন চাওয়া হয় না। কিন্তু এ মামলার বিষয়টা ভিন্ন। আবেদন মঞ্জুর হলে একটা নজির সৃষ্টি হবে। ’

২০১৯ সালের ২৬ জুন ভরদুপুরে বরগুনা জেলা শহরের কলেজ রোডে প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যা করা হয় রিফাত শরীফকে। ওই হত্যাকাণ্ডের একটি রোমহর্ষক ভিডিও ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়ে। সেই ভিডিওতে দেখা যায়, দুই যুবক রামদা হাতে রিফাতকে একের পর এক আঘাত করে চলেছে। আর তার স্ত্রী আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নি স্বামীকে বাঁচানোর জন্য হামলাকারীদের ঠেকানোর চেষ্টা করছেন।

ওই ঘটনায় রিফাতের বাবা দুলাল শরীফ বাদী হয়ে ১২ জনকে আসামি করে বরগুনা থানায় হত্যা মামলা করেন। মামলায় রিফাতের স্ত্রী বরগুনার সরকারি কলেজের ডিগ্রি প্রথম বর্ষের ছাত্রী মিন্নিকে ১ নম্বর সাক্ষী করা হয়।

রিফাত হত্যার ঘটনা বরগুনা শহরে ‘কিশোর গ্যাংয়ের’ দৌরাত্ম্যের বিষয়টি প্রকাশ্যে আনে। এই সব কিশোর-তরুণের পেছনে রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতার খবর গণমাধ্যমে এলে হত্যার কারণ নিয়ে নানামুখী আলোচনা চলতে থাকে।

মিন্নি সে সময় হামলাকারী সবাইকে চিনতে না পারার কথা জানালেও নয়ন বন্ড, রিফাত ফরাজী ও রিশান ফরাজীর নাম বলেন। পরে ওই বছর ২ জুলাই মামলার প্রধান সন্দেহভাজন সাব্বির আহম্মেদ ওরফে নয়ন বন্ড পুলিশের সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে নিহত হন।

এক পর্যায়ে মিন্নির শ্বশুরই হত্যাকাণ্ডে পুত্রবধূর জড়িত থাকার অভিযোগ তুললে আলোচনা নতুন মোড় নেয়। ওই বছরের ১৬ জুলাই মিন্নিকে বরগুনার পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে ডেকে নিয়ে দিনভর জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। পরে রাতে তাকে রিফাত হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়।

পরদিন আদালতে হাজির করা হলে বিচারক তাকে পাঁচ দিনের রিমান্ডে পাঠান। রিমান্ডের তৃতীয় দিনেই মিন্নিকে আদালতে হাজির করা হয়। পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়, ওই তরুণী হাকিমের কাছে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।

তবে মিন্নির বাবা মোজাম্মেল হোসেন কিশোরের অভিযোগ, নির্যাতন করে ও ভয়ভীতি দেখিয়ে মিন্নিকে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিতে বাধ্য করেছে পুলিশ। এর পেছনে স্থানীয় প্রভাবশালী রাজনীতিবিদদের হাত আছে বলেও তিনি দাবি করেন। পরে ২৯ আগস্ট হাইকোর্ট মিন্নির জামিন মঞ্জুর করেন।

হত্যাকাণ্ডের দুই মাসের মাথায় মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পরিদর্শক মো: হুমায়ুন কবির বরগুনার আদালতে মিন্নিসহ ২৪ জনকে আসামি করে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। দুই খণ্ডে বিভক্ত ওই অভিযোগপত্রের এক অংশে মোট ১০ জনকে আসামি করা হয়। অন্য অংশে রাখা হয় অপ্রাপ্তবয়স্ক ১৪ জনের নাম।

২০২০ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর বরগুনার জেলা ও দায়রা জজ মো: আছাদুজ্জামান প্রাপ্তবয়স্ক ১০ জনের বিচারের রায় ঘোষণা করেন। রায়ে রিফাত শরীফের স্ত্রী আয়শা সিদ্দিকা মিন্নিসহ ছয় আসামির মৃত্যুদণ্ড হয়, বাকি চার আসামি বেকসুর খালাস পান।

মৃত্যুদণ্ড পাওয়া অন্য পাঁচ আসামি হলেন রাকিবুল হাসান রিফাত ফরাজি (২৩), আল কাইউম ওরফে রাব্বি আকন (২১), মোহাইমিনুল ইসলাম ওরফে সিফাত (১৯), রেজওয়ান আলী খান ওরফে টিকটক হৃদয় (২২) ও মো: হাসান (১৯)। মৃত্যুদণ্ডের পাশাপাশি ছয় আসামির সবাইকে ৫০ হাজার টাকা করে জরিমানা করা হয়।

রায়ের পর নিয়ম অনুযায়ী দণ্ডিতদের মৃত্যুদণ্ডাদেশ অনুমোদনের (ডেথ রেফারেন্স) জন্য নথি হাইকোর্টে পাঠানো হয়। অন্যদিকে খালাস চেয়ে হাইকোর্টে আপিল করেন মিন্নি। সে সময় হাইকোর্ট তার আপিল গ্রহণ করে তা নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত বিচারিক আদালতের দেওয়া ৫০ হাজার টাকার অর্থদণ্ড স্থগিত করেন। এরপর চলতি বছর মে মাসে হাইকোর্টে জামিন চেয়ে আবেদন করেন মিন্নি। তখন সংশ্লিষ্ট আদালতের এখতিয়ার পরিবর্তন হওয়ায় আবেদনটির আর শুনানি হয়নি। ফলে ফের জামিন চেয়ে আবেদন করেন মিন্নি।

সম্পর্কিত সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker