জাতীয়

বাংলাদেশ আর কখনো পিছনে ফিরে তাকাবে না -প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, এদেশ পিছিয়ে থাকবে না। বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে এগিয়ে যাবে। আমরা যে পদক্ষেপ নিয়েছি এ বাংলাদেশ হবে স্মার্ট বাংলাদেশ।আমরা বাংলাদেশের তথ্যপ্রযুক্তি পদক্ষেপ নিয়েছি। আজকে শতভাগ বিদ্যুত দিতে পেরেছি। স্যাটেলাইট বঙ্গবন্ধু -১ উপক্ষেপন করেছি। আমাদের দেশের মেট্টোরেল চালু হয়েছে। পাতাল রেল চালু হবে। কর্ণফুলি নদীর নিচ দিয়ে টানেল তৈরি হয়েছে। নিজেদের অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ করেছি। প্রতিটি ক্ষেত্রে প্রতিটি স্থাপনায় নিরাপত্তার ক্ষেত্রে আনসার বাহিনী বিশেষ ভাবে জড়িয়ে রয়েছে। বিশেষ করে পার্বত্য চট্টগ্রামের কাজ করছে। তাই বাংলাদেশ আর কখনো পিছনে ফিরে তাকাবে না।

প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, যে সমস্ত গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় আমাদের অন্যান্য বাহিনী নিরাপত্তা নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে, বিশেষ করে প্রতিটি ক্ষেত্রেই নিরাপত্তার ক্ষেত্রে প্রতিটি বাহিনীকে সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে আনসার ভিডিপি বাহিনী।

বাংলাদেশ আনসার ভিডিপি একাডেমীতে শফিপুর গাজীপুরে বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ছয় দফাকে অবলম্বন করে জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমান এবং প্রথম সরকারকে গার্ড অব অনারের ভাস্কর্য একাডেমীর মূল ফটকের দু’পাশে মূরাল নির্মাণ করা হয়েছে। তাছাড়াও গুরুত্বপূর্ণ স্থানে বাহিনীর কর্মকর্তাদের আবাসন সমস্যা দূরীকরণ দৃষ্টি নন্দন আধুনিক যুগপযোগী চারটি অফিসার্স মেস নির্মাণ করা হচ্ছে। প্রতি ব্যাটালিয়ান সদর দপ্তরে পারিবারিক আবাসনও নির্মাণ করা হচ্ছে। জেলা ব্যাটালিয়ান পর্যায়ে অস্ত্রাগারও নির্মাণ করা হচ্ছে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রোববার সকালে গাজীপুরের সফিপুরে অবস্থিত বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর ৪৩তম জাতীয় সমাবেশে প্রধান অতিথির ভাষনে এসব কথা বলেছেন।

প্রধান মন্ত্রী সকাল সাড়ে ১১টার দিকে ইয়ার্ড আলী প্যারেড গ্রাউন্ডে পৌছালে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী আসাদুজামান খান এমপি, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের সিনিয়ন সচিব মোঃ আমিনুল ইসলাম খাঁন,বাহিনীর মহাপরিচালক মেজর জেনারেল একেএম আমিনুল হক,বাহিনীর অতিরিক্ত মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল খোন্দকার ফরিদ হাসান উষ্ণ অভর্যথনা জানান। পরে তিনি প্যারেড কন্টিনজেন পরির্দশন করেন। পরে সাহসিকতার জন্য আট ক্যাটাগরিতে ১শত ৮০জন আনসার সদস্য ও কর্মকতার্দের মরনোত্তর পদক, প্রেসিডেন্ট আনসার পদক, বাংলাদেশ প্রতিরক্ষা দল পদক, প্রেসিডেন্ট গ্রাম প্রতিরক্ষা দল পদক,বাংলাদেশ আনসার সেবা পদক, প্রেসিডেন্ট আনসার সেবা পদক, বাংলাদেশ গ্রাম প্রতিরক্ষা দল ( সেবা) পদক, প্রেসিডেন্ট গ্রাম প্রতিরক্ষা (সেবা) পদক প্রদান করেন।

এ সময় প্রধান মন্ত্রী বলেন,বাংলাদেশের স্বাধীনতার ইতিহাসে আনসার বাহিনীর বিরাট ভূমিকা রয়েছে। আনসার বাহিনী প্রথম জাতির পিতার নেতৃত্বে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশে প্রথম গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার গঠিত হয়েছিল (মুজিব নগর সরকার)। সেখানে আনসার বাহিনী প্রথম গার্ড অব অনার প্রদর্শন করেন। আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রাম ও আন্দোলনে ও বিশেষ করে মুক্তিযুদ্ধে আনসার বাহিনীর বিরাট ভুমিকা রয়েছে। আনসার বাহিনী তাদের অস্ত্রশস্ত্র দিয়ে এবং অনেক সদস্যই জীবন উৎসর্গ করেছিল। গ্রাম পর্যন্ত যেসব আনসার বাহিনী কর্মরত ছিল জাতির পিতার আহ্বানে তারা যা ছিল তাই নিয়ে মুক্তিযুদ্ধে ঝঁাপিয়ে পরে। তারা স্থানীয় জনগণ ও মুক্তিকামী মানুষকে প্রশিক্ষণ দিয়ে মুক্তিযুদ্ধে যেতে সহায়তা করে। আমাদের যুদ্ধটা ছিল একটা জনযুদ্ধ। প্রতিটি এলাকায় এলাকায় প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিল। এদেশের মানুষ প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিল পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে সেখানে আনসার বাহিনী বিরাট ভুমিকা পালন করে। আওয়ামীলীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে বিশেষ করে জাতির পিতা স্বাধীনতার পরবর্তী সময়ে আনসার বাহিনী পুর্নগঠন করেন। আর ৭৫ এর ১৫ আগস্ট জাতির পিতাকে হত্যার পর যখন অবৈধ ভাবে ক্ষমতা দখলের পালা শুরু হয়, প্রতিটি ক্ষেত্রেই উন্নয়নের অগ্রযাত্রা ব্যাহত হতে থাকে। প্রতিটি প্রতিষ্ঠানই ক্ষতিগ্রস্থ হয়।

আনসার বাহিনীর সদস্যদের বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, স্বাধীনতার ২১ বছর পর সরকার গঠন করে আওয়ামীলীগ। সরকার গঠন করার পর আনসার বাহিনীর জন্য নতুন আইন প্রনয়ণ করা, তাদের পোষাক, ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করা, কল্যাণ ট্রাস্ট করে সিড মানি দেয়া, ব্যাটালিয়ান আনসার স্থায়ী করণসহ বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা দিয়েছিলাম। ১৯৯৮ সালে আনসার বাহিনীকে প্রথম পতাকা প্রদান করি। আমাদের হাতেই প্রথম পতাকা পেয়েছে। এ বাহিনীর বিভিন্ন কর্মকর্তাদের গ্রেড উন্নতি করা, পদ উন্নয়নের ব্যবস্থা করা বিদেশে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেছি। তাছাড়া একটি বিশেষায়িত গার্ড ব্যাটালিয়ানসহ নতুন আনসার ব্যাটালিয়ান গঠন, আনসার ব্যাটালিয়ানের তিনটি বেতন গ্রেড উন্নতি করা, অবকাঠামো উন্নয়ন কার্যক্রম আমরা গ্রহণ করেছি। ইতিমধ্যে ১৫টি ব্যাটালিয়ান আধুনিক অবকাঠামো মডেল ব্যাটালিয়ানে রূপ দেয়া হয়েছে। ধীরে ধীরে অন্যান্য ব্যাটালিয়ানে আমরা পদক্ষেপ নিবো। আমাদের কোম্পানী কমান্ডার ইউনিয়ন কমান্ডার ও প্লাটুন কমান্ডারদের মাসিক সম্মানী ভাতা প্রদান করা হচ্ছে। সাধারণ আনসারদের চাল, গম, ডাল, সয়াবিন তেলের সাথে চিনি ও মুগ ডাল সংযোজন করা হয়েছে। ভিডিপি সদস্যদের জন্য আধুনিক ডিজাইনের নতুন শাড়ি এবং হিল আনসার তাদের স্থায়ী করণের কার্যক্রমও শেষ পর্যায়ে রয়েছে। ২০২২ সালে বাহিনীর সদস্যদের জন্য পঁাচটি এসকেএম ব্যারাক ও প্রশিক্ষানার্থীদের জন্য আবাসন সুবিধা বৃদ্ধির ৬টি সেমি পাঁকা ব্যারাক নির্মাণ করা হয়েছে। আধুনিক সুবিধা সম্বলিত দৃষ্টিনন্দন ২৭টি উপজেলা অফিস নির্মাণ কাজ হাতে নেয়া হয়েছে। ৯টির কাজ ইতিমধ্যে শেষ করা হয়েছে। আমরা চাই যুগের সাথে তাল মিলিয়ে যেন আনসার বাহিনী চলতে পারে, সেদিকে লক্ষ্য রেখে আমরা বিভিন্ন কাজ করছি। আনসার ও ভিডিপি একাডেমীতে কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ, ভিআইপি অফিসার্স মেস, সিনিয়র অফিসার্স মেস উর্ধ্বমুখী সম্প্রসারণ কাজ চলমান রয়েছে। তাছাড়া আমরা আনসার বাহিনীর খাদ্য ও অন্যান্য সুযোগ সুবিধা বৃদ্ধি পাওয়ার জন্য ভৌত অবকাঠামো এক দিকে যেমন গড়ে তুলেছি তাছাড়াও কিচেন, ড্রাইনিং রুম তৈরি করে দিয়েছি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি উপস্থিত সবাইকে একটি কথাই বলবো, জাতির পিতার নেতৃত্বে আওয়ামীলীগ এদেশে স্বাধীনতা এনেছে। কাজেই আমাদের কাছে এদেশে দাবি দাওয়ার কোন প্রয়োজন হয়না। কোন কোন ক্ষেত্রে কোন কোন বাহিনীর কি কি প্রয়োজন তা আমরা উপলদ্ধি করতে পারি। আর উপলদ্ধি করতে পারি বলেই, আওয়ামীলীগ যখন ক্ষমতায় আসে তখন প্রতিটি প্রতিষ্ঠানেই উন্নীত সাধন করি। কাজেই সেভাবে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। খেলাধুলায় আনসার বাহিনীর বিশেষ ভূমিকা রেখে যাচ্ছে, তারা অনেক পুরস্কার পাচ্ছে।

প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, নিরাপত্তার পাশাপাশি অগ্নি সন্ত্রাস, জ্বালাও পোড়াও বিএনপি জামায়ত জোট শুরু করেছিল। ট্রেনে আগুন দেয়া থেকে শুরু করে, গাড়ি লঞ্চে আগুন দিয়েছিল। তখন আনসার বাহিনী নিজ নিজ এলাকায় দায়িত্ব পালন করে অগ্নি সন্ত্রাস থেকে দেশের মানুষকে মুক্তি দিতে যথেষ্ট সহায়তা করেছে। তাছাড়াও জঙ্গীবাদ সন্ত্রাস দমনেও যথেষ্ট ভুমিকা পালন করে যাচ্ছে। আজকে বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছে। আমরা সামনের দিকে আরও এগিয়ে যেতে চাই। আমরা বিনা পয়সায় মানুষকে ঘর করে দিয়েছি। আনসার ভিডিপির অনেক সদস্যকে ঘর করে দিয়েছি। আমরা চাই মানুষ নিজের পায়ে দঁাড়াক। কারও কাছে হাত পেতে চেয়ে থাকতে না হয়।

বিশ্ব অর্থনীতি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যেহেতু করোনা মহামারি অর্থনৈতিক বিরাট চাপ সৃষ্টি করেছে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে, তাছাড়া ইউক্রেন রাশিয়ার যুদ্ধ। এ যুদ্ধের কারণে আমাদের দেশ ছাড়াও সারা বিশ্বে অর্থনৈতিক মন্দা দেখা দিয়েছে। কিন্তু আমাদেরকে এখান থেকে মুক্ত রাখতে হবে। সেজন্যই জাতির পিতার পদাঙ্ক অনুসরণ করে আহ্বান করছি, যাতে এক ইঞ্চি জমি যাতে অনাবাদী না থাকে। যত অনাবাদী জমি আছে সব আবাদের ব্যবস্থা করতে হবে। সে ক্ষেত্রে আমি মনে করি, আনসার বাহিনী গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনী বিশেষ ভূমিকা রাখতে পারে। গ্রামের লোকদের শেখানো, তাদের দ্বারা কাজ করানো, ফসল সংরক্ষণ করানোর দায়িত্ব পালন করতে পারে আনসার বাহিনী। আমি চাই আমাদের দেশটা এগিয়ে যাক। আজকে যারা পুরষ্কার পেয়েছেন মেডেল পেয়েছেন তাদেরকে আমি অভিনন্দন জানাই। আমি চাই এভাবেই আপনাদের কাজের স্বীকৃতি কাজে উৎসাহ তৈরি হয় সেই কাজটিই করতে চাই।

অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী আসাদুজ্জামান কামাল, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আকম মোজাম্মেল হক এমপি, রওশন আলী টুশি এমপি, ইকবাল আহমেদ সবুজ এমপি, কুটনৈতিকবৃন্দ, সরকারের পদস্থ কর্মকর্তা এবং আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন বাহিনীর পদস্থ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনা একাডেমির লেকের পাড়ে বাহিনীর সদস্যদের পরিবেশনায় একটি মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান উপভোগ করেন। দুপুরের পর বাহিনীর দরবার হলে উধ্বর্তন আনসার কর্মকতার্দের সাথে বৈঠক করেন।

সম্পর্কিত সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker