বিশ্ব

ইসরায়েলি ‘আগ্রাসন’ বন্ধের দাবি আরব-মুসলিম বিশ্বের

রিয়াদে গতকাল শনিবার শীর্ষ সম্মেলনে বসা আরব ও মুসলিম নেতারা গাজায় ইসরায়েলের আগ্রাসন বন্ধ করতে জাতিসংঘের একটি বাধ্যতামূলক প্রস্তাব দাবি করেছেন। সম্মেলনের পর এক চূড়ান্ত ঘোষণায় নেতারা গাজায় সামরিক অভিযান ও বিমান হামলার ন্যায্যতা হিসেবে ইসরায়েলের আত্মরক্ষার যুক্তিও প্রত্যাখ্যান করেছেন।

এদিকে গাজার প্রধান হাসপাতাল আল-শিফাসহ কয়েকটি চিকিসাকেন্দ্রের বাইরে প্রচণ্ড লড়াই অব্যাহত ছিল। ইসরায়েলি হামলায় আল-শিফার ইনটেনসিভ কেয়ার অংশের শেষ জেনারেটরটি অচল হয়ে যাওয়ায় একাধিক শিশুর মৃত্যু হয়েছে।

সিরিয়ার বাশার আল আসাদ এবং ইরানের ইব্রাহিম রাইসিসহ আরব লীগ ও অর্গানাইজেশন অব ইসলামিক কো-অপারেশনের ৫৭ জন নেতা অবরুদ্ধ ফিলিস্তিনি ছিটমহল গাজায় ইসরায়েলের টানা ধ্বংসাত্মক বোমাবর্ষণের বিষয়ে আলোচনা করার জন্য রিয়াদে সমবেত হন।

সম্মেলনে নেতারা গাজা উপত্যকার অবরোধ তুলে নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। সম্মেলনে সৌদি আরবের যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান, ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি, তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়িপ এরদোয়ান, মিসরের প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাত্তাহ এল-সিসি, ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস, সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদ ও কাতারের আমির তামিম বিন হামাদ আল থানিসহ বিভিন্ন দেশের নেতারা অংশ নেন।

এক বিবৃতিতে আরব নেতারা গাজায় ত্রাণ সহায়তা প্রবেশের অনুমতি দেওয়া এবং ইসরায়েলে অস্ত্র রপ্তানি বন্ধের দাবি জানান।

গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসন, যুদ্ধাপরাধ, বর্বরতা ও অমানবিক গণহত্যার নিন্দা জানান সম্মেলনে অংশ নেওয়া নেতারা। এই সম্মেলনে অংশ নেওয়া নেতাদের ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করার আহ্বান জানিয়েছেন গাজার শাসকগোষ্ঠী হামাসের মুখপাত্র ওসামা হামদান।

ঘিরে থাকা ইসরায়েলি ট্যাংক ও সেনার কবল থেকে বাঁচতে গাজা সিটির আল-শিফা হাসপাতাল থেকে পালানোর সময় ফিলিস্তিনিদের ওপর গুলি চালানো হয়েছে বলে অভিযোগ করেছে চিকিৎসকদের আন্তর্জাতিক দাতব্য সংগঠন ডক্টরস উইদাউট বর্ডারস। উপত্যকার এই বৃহত্তম হাসপাতালের পরিচালক জানিয়েছেন, তাঁদের পরিষেবা পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেছে।

কেউ নড়াচড়া করলেই লক্ষ্যবস্তু বানাচ্ছে ঘিরে থাকা ইসরায়েলি বাহিনী।

আল-শিফা হাসপাতালের এক চিকিৎসক জানিয়েছেন, হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র (আইসিইউ) গোলার হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ভেন্টিলেশনে থাকা শিশুসহ দুই রোগী মারা গেছে। এরই মধ্যে হাসপাতালের জ্বালানি, খাবার ও পানি ফুরিয়ে গেছে। বাইরে ক্রমাগত গোলাগুলি ও বোমা পড়ছে।

আল-শিফা হাসপাতালে দুটি নবজাতকের মৃত্যুর খবর জানিয়েছে খোদ ইসরায়েলি চিকিৎসকদের বেসরকারি সংগঠন ফিজিশিয়ান ফর হিউম্যান রাইটস, ইসরায়েল। সংগঠনটি বলছে, ইসরায়েলি হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে আল-শিফা হাসপাতালের এনআইসিউ বন্ধ হয়ে গেছে।

এ বিষয়ে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) বলেছে, নির্দিষ্ট সামরিক অভিযান সম্পর্কে স্পষ্ট করে বলা যাচ্ছে না। এর আগে আইডিএফ বলেছিল, তারা হাসপাতালে হামলা চালাবে না। তবে গতকাল তারা স্বীকার করেছে, ওই এলাকায় হামাসের সঙ্গে তাদের তুমুল লড়াই হয়েছে। ইসরায়েলি সেনাবাহিনী বলেছে, যারা হাসপাতাল ছাড়তে চায় তাদের জন্য করিডর উন্মুক্ত রাখা হয়েছে।

এ ছাড়া স্থানীয় সময় গতকাল সন্ধ্যায় নগরের আরেক হাসপাতাল আল-কুদসের ৬৫ ফুটের মধ্যে অবস্থান করছিল ইসরায়েলি ট্যাংক। হাসপাতালটিতে ১৪ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি আশ্রয় নিয়েছে।

গাজায় গতকাল পর্যন্ত একমাত্র সচল হাসপাতাল হিসেবে আল-আহলি হাসপাতাল সেবা দিয়েছে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।

লেবানন রণাঙ্গন সক্রিয় থাকবে

ইরান সমর্থিত সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহর নেতা সায়েদ হাসান নাসরাল্লাহ বলেছেন, ইসরায়েলের বিরুদ্ধে অপারেশনাল কার্যক্রমে পরিবর্তন আনা হয়েছে। অপারেশনের সংখ্যা, আকার ও লক্ষ্যবস্তু বাড়ানোর পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের অস্ত্রের ব্যবহারও বাড়ানো হয়েছে। হিজবুল্লাহর পালন করা শহীদ দিবসের ভাষণে তিনি এ কথা বলেন।

ভেঙে পড়েছে খাদ্য সহায়তা প্রকল্প

বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির (ডাব্লিউএফপি) সহায়তা প্রকল্পের অধীনে গাজাবাসীকে খাদ্য সরবরাহ করা প্রতিটি দোকানের আটাসহ সব মৌলিক উপকরণ শেষ হয়ে গেছে। ডাব্লিউএফপির ভাউচার প্রকল্পের মাধ্যমে পাঁচ লাখ গাজাবাসীকে খাদ্য সহায়তা দেওয়া হতো। জাতিসংঘের সংস্থাটি প্রতিদিন ঘুরে দেখত দোকানগুলো এখনো কাজ করছে কি না। ডাব্লিউএফপির মুখপাত্র আলিয়া জাকি বলেছেন, শুক্রবার শতভাগ দোকান জানিয়েছে তারা আর ওই প্রকল্পে খাবার সরবরাহ করতে পারবে না। গাজার খাদ্য উৎপাদন ও বিতরণ ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। ডাব্লিউএফপি যে ২৩টি বেকারির সঙ্গে কাজ করে আসছিল তার কোনোটিই গতকাল খোলেনি। লোকজন রুটির জন্য পাঁচ থেকে ছয় ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে খালি হাতে ফিরে যায়।

লন্ডনে পাল্টাপাল্টি মিছিল নিয়ে উত্তেজনা

যুক্তরাজ্যের রাজধানী লন্ডনে গতকাল ফিলিস্তিনিদের সমর্থনে এ পর্যন্ত সবচেয়ে বড় মিছিলের পরিকল্পনা করা হয়েছিল। হাইড পার্কের কাছে শান্তিপূর্ণভাবে ফিলিস্তিনপন্থী মিছিল শুরুও হয়। মিছিলকারীরা ‘অবিলম্বে যুদ্ধবিরতি চাই’সহ নানা স্লোগান দেয়। এ মিছিলে বিঘ্ন ঘটানোর জন্য একদল লোক মধ্য লন্ডনে পাঁয়তারা করছিল বলে অভিযোগ করা হয়। পুলিশ তাদের মধ্যে কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করে। প্রসঙ্গত, গতকাল ১১ নভেম্বরই ছিল প্রথম বিশ্বযুদ্ধের অস্ত্রবিরতি দিবস বা আর্মিস্টিস ডে। এ উপলক্ষেও শোভাযাত্রা বের হয় বলে পুলিশ ছিল বাড়তি চ্যালেঞ্জের মুখে। তবে মেট্রোপলিটন পুলিশ বলেছে, ফিলিস্তিনপন্থী মিছিলে সম্ভাব্য বাধা ঠেকাতে তারা সম্ভাব্য সব ক্ষমতা ও কৌশল প্রয়োগ করবে।

সম্পর্কিত সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এছাড়াও পরীক্ষা করুন
Close
Back to top button

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker