চাকরিশিক্ষা

বদলে যাচ্ছে প্রাথমিক নিয়োগ প্রক্রিয়া, নতুন বিজ্ঞপ্তি মার্চে

সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ‘সহকারী শিক্ষক’ পদে নিয়োগ প্রক্রিয়ায় বড় পরিবর্তন আনা হচ্ছে। নতুন পদ্ধতিতে সারাদেশে একযোগে নিয়োগ পরীক্ষা হবে না। দীর্ঘসূত্রতাও কমিয়ে আনা হবে। এ লক্ষ্যে স্বল্প সময়ে নিয়োগপ্রক্রিয়া শেষ করতে দেশের আট বিভাগকে চার ভাগে বিভক্ত করে আলাদা বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হবে।

এ চার অঞ্চলে নিয়োগ পরীক্ষার আয়োজন করা হবে। ফল প্রকাশও হবে আলাদাভাবে। এতে বছরে অন্তত দুটি করে নিয়োগ পরীক্ষা নেওয়া হবে। এ পদ্ধতি অনুসরণ করে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগে আগামী মার্চের মাঝামাঝি নতুন বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হতে পারে। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর (ডিপিই) সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

অধিদপ্তর সূত্র জানায়, সারাদেশে একযোগে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা আয়োজনে নানা ধরনের প্রতিবন্ধকতা তৈরি হয়। এ পরীক্ষা সুষ্ঠুভাবে আয়োজন করাটাও কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। কেউ কেউ নানান অসাধুপন্থা অবলম্বনের চেষ্টা করে। গত দুটি নিয়োগ পরীক্ষা চলার সময়ে একাধিক জেলায় প্রশ্নফাঁস ও বাইরে থেকে উত্তর জানিয়ে দেওয়ার অভিযোগ ওঠে। এসব ঘটনায় প্রার্থীসহ কয়েকজনকে আটকও করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

সংশ্লিষ্টরা জানান, সারাদেশে একযোগে শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা আয়োজন করতে গেলে লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা শেষ করতে অনেক সময় প্রয়োজন হয়। বিলম্বের কারণে অনেক প্রার্থী আবেদন করেও পরীক্ষায় অংশ নেন না। অনেক বিদ্যালয়ে শূন্যপদ পূরণে নিয়োগপ্রক্রিয়া শুরুর পরও দীর্ঘসূত্রতার কারণে কোনোমতে শিশুদের পাঠদান করানো হচ্ছে। আবার একটি নিয়োগ পরীক্ষা শেষ করতে দুই থেকে তিন বছর লেগে যায়। এ জন্য আগের প্রক্রিয়ায় পরিবর্তন আনার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

জানতে চাইলে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক শাহ রেজওয়ান হায়াত জাগো নিউজকে বলেন, ‘প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়ার দীর্ঘসূত্রতা কমাতে আগের প্রক্রিয়ায় পরিবর্তন আনার প্রস্তাব দেওয়া হয়। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে মৌখিকভাবে এ প্রস্তাব দেই। মন্ত্রণালয় থেকে নীতিগত সিদ্ধান্তও হয়েছে। বর্তমানে লিখিত প্রস্তাব পাঠানো হচ্ছে। ফেব্রুয়ারির মধ্যে এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। নিয়োগপ্রক্রিয়া শুরু করলেও তা শেষ করতে দুই থেকে তিন বছর লেগে যাচ্ছে। শিক্ষক ছাড়া শিশুদের পাঠদান ব্যাহত হচ্ছে। সেটিকে গুরুত্ব দিয়ে শিক্ষক নিয়োগের পদ্ধতিতে পরিবর্তন আনা হচ্ছে।’

May be an image of 14 people, child, people standing and people sitting

আট বিভাগকে চার ভাগে বিভক্ত করে আলাদাভাবে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হবে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘যেসব বিভাগের জন্য বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হবে, তাতে শুধু সংশ্লিষ্ট বিভাগের প্রার্থীরা আবেদন করতে পারবেন। আগামী মাসের (মার্চ) মাঝামাঝি সময়ে দুটি বিভাগের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শূন্যপদে নিয়োগের জন্য বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হবে।’

এদিকে, ২০২০ সালের লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষার ফলাফলের ভিত্তিতে ৩৭ হাজার ৫৭৪ জনকে সহকারী শিক্ষক পদে নিয়োগ দিয়েছে অধিদপ্তর। গত বছরের ১৪ ডিসেম্বর এ ফল প্রকাশ করা হয়। চলতি বছরের জানুয়ারির মধ্যে তাদের যোগদান করানো হয়েছে।

২০২০ সালের ২০ অক্টোবর সহকারী শিক্ষকের ৩২ হাজার ৫৭৭টি শূন্যপদে নিয়োগের জন্য বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। এ নিয়োগ পরীক্ষায় মোট আবেদন করেন ১৩ লাখ ৯ হাজার ৪৬১ জন প্রার্থী।

প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের নিয়োগ শাখা সূত্রে জানা গেছে, সাড়ে ৩৭ হাজার শিক্ষকের মধ্যে ২৬ হাজার জনকে প্রাক-প্রাথমিক স্তরে ও বাকিদের বিষয়ভিত্তিক শিক্ষক হিসেবে যোগদান করানো হয়েছে। বর্তমানে সারাদেশে সাত হাজারের বেশি শিক্ষক পদ শূন্য। পরবর্তীসময়ে নিয়োগের মাধ্যমে এসব পদ পূরণ করা হবে।

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব ফরিদ আহাম্মদ জাগো নিউজকে বলেন, ‘প্রতিনিয়ত শিক্ষক পদ শূন্য হচ্ছে। অনেকে অবসর যাচ্ছেন। এসব পদ পূরণে অনেক সময় লেগে যাচ্ছে। সারাদেশে একসঙ্গে নিয়োগ কার্যক্রম পরিচালিত হওয়ায় দীর্ঘসূত্রতাও তৈরি হচ্ছে। শূন্যপদ পূরণে প্রতিবছর অন্তত দুটি করে নিয়োগ কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে। একসঙ্গে অনেক শিক্ষক নিয়োগে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হবে না। বিভাগভিত্তিক নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে পরীক্ষা নেওয়া হবে। এ পদ্ধতি অনুসরণ করে মার্চের মধ্যে নিয়োগ কার্যক্রম শুরু করা হবে।’

সম্পর্কিত সংবাদ

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

Back to top button

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker