আবহাওয়া ও জলবায়ু

শিগগিরই কমছে না গরম

সারা দেশে তাপমাত্রা গতকাল রবিবার আগের দিনের তুলনায় কিছুটা কমেছে। তবে তাপপ্রবাহের এলাকাগুলোর পরিস্থিতির তেমন হেরফের হয়নি। গতকালও দেশের ছয় বিভাগে মৃদু থেকে অতি তীব্র তাপপ্রবাহ ছিল। মেহেরপুর ও নরসিংদীতে গরমে অসুস্থ হয়ে দুজনের মৃত্যু হয়েছে।

আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, আগামী অন্তত এক সপ্তাহ চলমান তাপ পরিস্থিতির উল্লেখযোগ্য পরিবর্তনের সম্ভাবনা কম। তাপমাত্রা কখনো কখনো কিছুটা কমলেও তাপপ্রবাহ ও অস্বস্তিকর গরম থাকবে মাসের বাকি দিনগুলোতেও। 

তাপপ্রবাহের কারণে স্বাস্থ্যঝুঁকি এড়াতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে অনলাইনে ক্লাস নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। তাপপ্রবাহ পরিস্থিতি মোকাবেলায় সারা দেশে হাসপাতাল প্রস্তুত রাখার নির্দেশ দিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী সামন্ত লাল সেন।

আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, আজ সোমবার রংপুর ও রাজশাহী বিভাগে দিনের তাপমাত্রা সামান্য কমতে পারে। দেশের অন্যান্য অঞ্চলে তা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে। জলীয় বাষ্পের আধিক্যের কারণে অস্বস্তিকর গরম অব্যাহত থাকতে পারে সারা দেশে।

আবহাওয়াবিদ মো. শাহীনুল ইসলাম বলেন, তাপমাত্রা কিছুটা কমেছে আজ (গতকাল)।

তবে তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে এক থেকে পাঁচ ডিগ্রি বেশি আছে এখনো। আগামী এক সপ্তাহ চলমান পরিস্থিতির উল্লেখযোগ্য পরিবর্তনের সম্ভাবনা নেই। এপ্রিলের বাকি দিনগুলোতেও কমবেশি তাপপ্রবাহ থাকতে পারে। গত বছর এপ্রিল মাসে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪৩ ডিগ্রি পর্যন্ত উঠেছিল। এবারও তেমনটা হতে পারে।

আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, গতকাল পাবনা ও চুয়াডাঙ্গা জেলার ওপর দিয়ে অতি তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে গেছে। রাজশাহী, টাঙ্গাইল, যশোর ও কুষ্টিয়া জেলার ওপর দিয়ে তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে গেছে। এ ছাড়া মৌলভীবাজার ও চাঁদপুর জেলাসহ ঢাকা, রাজশাহী ও খুলনা বিভাগের বাকি জেলা এবং রংপুর, ময়মনসিংহ ও বরিশাল বিভাগের সব জেলার ওপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি তাপপ্রবাহ বয়ে গেছে। আজও এই তাপপ্রবাহ অব্যাহত থাকতে পারে।

গতকাল দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল চুয়াডাঙ্গায়, ৪২.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আগের দিনের তুলনায় দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা কমেছে ০.৪ ডিগ্রি। ঢাকায়ও আগের দিনের তুলনায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা কমেছে ২.২ ডিগ্রি। গতকাল এখানে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৩৮.২ ডিগ্রি। 

আবহাওয়া অধিদপ্তরের হিসাবে, তাপমাত্রা ৩৬ ডিগ্রি থেকে ৩৭.৯ ডিগ্রির মধ্যে থাকলে তা মৃদু তাপপ্রবাহ। ৩৮ থেকে ৩৯.৯ ডিগ্রির মধ্যে থাকলে মাঝারি এবং ৪০ থেকে ৪১.৯ ডিগ্রির মধ্যে থাকলে তীব্র তাপপ্রবাহ বলা হয়। ৪২ ডিগ্রি বা এর বেশি তাপমাত্রা হলে তখন তা অতি তীব্র তাপপ্রবাহ হিসেবে বিবেচিত হয়।

আবহাওয়াবিদরা বলছেন, দেশে বড় পরিসরে বৃষ্টি না হলে চলমান এই তাপপ্রবাহ পুরোপুরি যাবে না।  তবে এখন কালবৈশাখীর সময়। যে অঞ্চলে ঝড় হবে, সেখানে তাত্ক্ষণিকভাবে তাপমাত্রা কিছুটা কমবে।  

আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, আজ ময়মনসিংহ, সিলেট ও চট্টগ্রাম বিভাগের দু-এক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা বা ঝোড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। বিক্ষিপ্তভাবে শিলাবৃষ্টিও হতে পারে।

গরমে জনজীবন বিপর্যস্ত, ২ জনের মৃত্যু

মেহেরপুরের গাংনীতে গরমে হঠাত্ অসুস্থ হয়ে শিল্পী খাতুন (৪৫) নামের এক গৃহবধূর মৃত্যু হয়েছে। পরিবারের সদস্যদের ধারণা, হিট স্ট্রোকে তাঁর মৃত্যু হয়েছে। গতকাল সকাল ৮টার দিকে উপজেলার ষোলটাকা ইউনিয়নের রুয়েরকান্দি গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। শিল্পী খাতুন ওই গ্রামের আবু তাহেরের স্ত্রী। 

শিল্পী খাতুনের ছেলে রওনক হোসেন জানান, গতকাল সকালে বাড়ির কাজ করতে করতে প্রচণ্ড গরমে হঠাত্ অসুস্থ হয়ে পড়েন শিল্পী খাতুন। হাসপাতালে নেওয়ার প্রস্তুতি নিতে নিতে মারা যান তিনি। 

নরসিংদীর মাধবদীতে গরমে অসুস্থ হয়ে সাফকাত জামিল ইবান (৩২) নামের এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে। গতকাল দুপুরে নরসিংদী সদর হাসপাতালে নেওয়ার পথে তাঁর মৃত্যু হয়। সাফকাত সদর উপজেলার মাধবদী থানার ভগীরথপুর এলাকার মৃত জাকারিয়া জামিলের ছেলে।

সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) ডা. মাহমুদুল কবির বাশার বলেন, পরিবারের পক্ষ থেকে জানানো হয়, প্রচণ্ড রোদের মাঝে চলাফেরা করায় এবং প্রচুর ঘাম ঝরায় এক পর্যায়ে অজ্ঞান হয়ে যায় ইবান। পরিবারের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে প্রাথমিকভাবে হিট স্ট্রোক মনে হলেও তাঁর মৃত্যুর সঠিক কারণ নির্ণয় করা যায়নি।

দেশের পশ্চিমের জেলা চুয়াডাঙ্গায় অতি তীব্র তাপপ্রবাহ অব্যাহত রয়েছে। তাপমাত্রা বেশি থাকায় দিনভর ছিল তীব্র গরমের প্রকোপ। জনজীবন ছিল বিপর্যস্ত।

চুয়াডাঙ্গা শহরের সিনেমা হল পাড়ার মো. পলাশ বলেন, টানা তাপপ্রবাহের কারণে খুবই কষ্ট পেতে হচ্ছে সবাইকে। দুই দিন ধরে এই কষ্ট আরো বেড়েছে। বৃষ্টি হয়ে তাপমাত্রা কমলে কিছুটা স্বস্তি মিলবে।

হাসপাতাল প্রস্তুত রাখার নির্দেশ স্বাস্থ্যমন্ত্রীর

তাপপ্রবাহ পরিস্থিতি মোকাবেলায় সারা দেশে হাসপাতাল প্রস্তুত রাখার নির্দেশ দিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী সামন্ত লাল সেন। গতকাল সচিবালয় থেকে সারা দেশের সরকারি হাসপাতালের পরিচালক ও সিভিল সার্জনদের সঙ্গে ভার্চুয়াল সভায় তিনি এ নির্দেশ দেন।

পরে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সম্মেলনকক্ষে ডা. সামন্ত লাল বলেন, ‘হাসপাতাল খালি রাখার জন্য বলেছি। যদি চাপ হয়, তাহলে বাচ্চা এবং বয়স্কদের জন্য যেন ভর্তি করা হয়। হাসপাতালগুলো প্রতিকূল পরিবেশের জন্য প্রস্তুত রাখার নির্দেশ দিয়েছি।’ 

স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘গরমে হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি থাকে। হিট স্ট্রোকের রোগী ব্যবস্থাপনায় নতুন নীতিমালা তৈরি করা হয়েছে এবং হাসপাতালগুলোতে এই নীতিমালা পৌঁছে দেওয়া হয়েছে।’

তাপপ্রবাহের মধ্যে ঢাবি ও জবিতে অনলাইনে ক্লাস 

চলমান তাপপ্রবাহের কারণে স্বাস্থ্যঝুঁকি এড়াতে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অনলাইন ক্লাস হবে। পরীক্ষা যথারীতি চলবে। অন্যদিকে চলতি সপ্তাহের সব ক্লাস অনলাইনে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি) প্রশাসন।

গতকাল দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ দপ্তর থেকে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, বর্তমানে প্রচলিত ১০ শতাংশ অনলাইন ক্লাসের বদলে শতভাগ অনলাইন ক্লাস হবে।

সম্পর্কিত সংবাদ

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

Back to top button

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker