ঠাকুরগাঁও

ঠাকুরগাঁওয়ে ক্রয়কৃত জমিতে সাইনবোর্ড টানাতে গিয়ে হামলার শিকার-নিরুপায় হয়ে সংবাদ সম্মেলন

ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার গড়েয়া বাজারের পাশে বিশাল এক জমি।

মাঠের মতো এ জমিতে খেলাধুলা করে শিশু-কিশোররা। কৃষকরা তাতে ধান, খড়, ভুট্টাসহ বিভিন্ন ফসল শুকানোর কাজ করেন। জমিটির মাঝপথ দিয়ে চলাচলও রয়েছে।

দীর্ঘদিন ধরে এভাবেই ব্যবহার হয়ে আসছিল আনুমানিক ৬০ জন ওয়ারিশের ১৮২ শতক এই জমিটি, তবে সম্প্রতি জমির ১একর ৬০ শতক কিনে ঝামেলায় পড়েছেন স্থানীয় সজল চৌধুরী ও তার ব্যবসায়িক অংশীদার ফখরুল ইসলাম জুয়েল।

সজল চৌধুরীর অভিযোগ, জমি কেনার পর থেকেই তার কাছে চাঁদা চাওয়া হচ্ছে। চাঁদা না দেওয়ায় বিভিন্ন হুমকি-ধামকি শিকার হচ্ছেন তিনি।এ ছাড়া নিজের কেনা জমিতে সাইনবোর্ড টানাতে গিয়ে ৩০ জুলাই হামলার শিকারও হয়েছেন তিনি।

ঘটনার রাতেই ঠাকুরগাঁও সদর থানায় ২১ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত পরিচয় ১০০ জনকে আসামি করে মামলা করেন সজল চৌধুরী।

যার বিরুদ্ধে চাঁদা দাবি ও হুমকি দেয়ার অভিযোগ, তার নাম সোহেল শাহ। জমির ওয়ারিশদের বিরুদ্ধে তিনিও আদালতে মামলা করেছেন। আদালত তাদের বিরুদ্ধে সমনও জারি করেছে।

সোহেল শাহ-র ভাষ্য, তিনি জনগণের স্বার্থে ওয়ারিশদের নামে মামলা করেছেন।

এদিকে হামলার শিকার ও প্রতিনিয়ত হুমকি পাওয়ার কথা জানিয়ে বৃহস্পতিবার ঠাকুরগাঁও প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেন জমির ক্রেতা ও মামলার বাদী সজল চৌধুরী।

সংবাদ সম্মেলনে তিনি অভিযোগ করেন, ‘নিজ জমিতে হামলার শিকার হয়েছি, কিন্তু পুলিশ কোনো এক অদৃশ্য কারণে অভিযুক্তদের গ্রেপ্তার করছে না।

এ বিষয়ে ঠাকুরগাঁও সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কামাল হোসেন মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করে,এবং তিনি আরো বলেন,তারা উভয় পক্ষ আপস-মীমাংসা করবে বলে জানিয়েছেন। তারা সময় চেয়েছেন। আসামি কেন ধরা হচ্ছে না, তাদেরই জিজ্ঞেস করুন।

সব প্রক্রিয়া মেনেই বায়নানামা রেজিস্ট্রি করেছেন বলে দাবি করেন ক্রেতা সজল চৌধুরী। সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘গত এক মাসে ৫ দফায় গড়েয়া বাজারের ডাঙ্গা জমিটি সব ওয়ারিশের কাছে বায়নানামা রেজিস্ট্রি করেছি। এর আগে জাতীয় ও স্থানীয় পত্রিকায় লিগ্যাল নোটিশও দেয়া হয়। পরবর্তী সময়ে যারা যারা অংশীদার, তাদের সবার কাছে বায়নানামা রেজিস্ট্রি নিই।’

সোহেল শাহর বিরুদ্ধে চাঁদা দাবির অভিযোগ তুলে তিনি বলেন, ‘দখলে যাওয়ার সাত দিন আগে সেখানে ঘোষণা দিয়ে নির্ধারিত দিনে আমার কেনা জমিতে সাইনবোর্ড টানাতে গেলে স্থানীয় সোহেল শাহ বাধা দেন এবং আমার ব্যবসায়িক অংশীদার ফখরুল ইসলামের কাছে ৩০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন। আমি চাঁদা দিতে রাজি না হওয়ায় সোহেলের ইন্ধনে আমার ওপর হামলা করা হয়।

আমাদেরকে সাইনবোর্ড টানাতে দেয়া হয়নি। এ সময় দুটি মোটরসাইকেলও ভাঙচুর করে সোহেলের লোকজন। আমি ঘটনায় মামলা দিলে পুলিশ কাউকেই গ্রেপ্তার করছে না। অথচ সোহেল প্রতিনিয়ত নানাভাবে আমাকে প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে আসছেন। ভয়ে আমি বাজারেও যেতে পারছি না।’

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, তিনি টাকা দাবি করাতে প্রথমে ওয়ারিশ ভেবেছিলাম। আমি তার বৈধ কাগজও দেখতে চেয়েছি, কিন্তু তিনি কোনো কাগজ দেখাতে পারেননি এবং জমির ওয়ারিশরা জানান সোহেল শাহ কোনো ওয়ারিশ নয়।

এসব অভিযোগ অস্বীকার করে সোহেল শাহ্ বলেন, ‘স্থানীয়রা তাদের বাধা দিয়েছে। মূলত সেদিনের ঘটনাটি ছিল একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা। আমি সকলকে থামাতে গিয়ে দোষী হয়ে গেছি। হুমকি দেয়া বা চাঁদা দাবি, কোনোটাই আমি করিনি।’

ওয়ারিশদের বিরুদ্ধে মামলার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘গত ২৮ জুলাই জনগণের স্বার্থে আমি জমির মালিকদের বিরুদ্ধে আদালতে একটি মামলা করেছি, যার সমনও দিয়েছে আদালত। তার পরেও তারা জমিতে আসলেন কেন?’

জমির ক্রেতা সজল বলেন, ‘আদালত আমাদের কোনো সমন দেয়নি। সমন দিয়ে থাকলে জমির মালিকদের দিয়েছে। আমি বায়নানামা রেজিস্ট্রি করেছি। জমি দখলে নেব, এটাই স্বাভাবিক,আদালতে যদি মালিকানা না টেকে, আমি জমি ছেড়ে দেব। কারণ আমি আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল, কিন্তু আমার ওপর হামলা করল কেন।’

জমির ওয়ারিশ নুরুল হুদা বলেন সজলের কাছে ২১ শতকজমি বিক্রি করি, বাজারের পাশে আমার বাড়ি। বাড়ির পাশেই এই জমিটির অবস্থান, যেখানে স্থানীয় কৃষকরা তাদের ধান, খড় এসব শুকানোর কাজ করতেন। আমিও করতাম, এখনও করি।

এটি যে শুধু খেলার জন্য তা তো নয়। বাপ-দাদারা এটি কখনোই কাউকে মাঠের জন্য দানও করেননি। গ্রামের কৃষকদের উপকারে আসত, তাই ফাঁকা রেখেছেন। জমির চারপাশে আমি গাছ রোপণ করেছি। এটি আমাদের সম্পদ। আমাদের টাকার প্রয়োজন, তাই বিক্রি করেছি। কোনো রেকর্ডে এটি মাঠ হিসেবে রেকর্ড নেই। আছে এটি একটি ডাঙ্গা জমি; আর এটাই সত্য।’

এই অংশীদার আরও বলেন, ‘অবশ্য আমারও খারাপ লাগছে। পাড়ার ছেলেরা এখানে খেলাধুলা করত। টাকার প্রয়োজনে জমি বিক্রি করতে হচ্ছে। টাকার প্রয়োজন না হলে তো বিক্রি করতাম না।

আমরা ৬০ জনের অধিক ওয়ারিশ। অনেকেরই বর্তমানে আর্থিক অবস্থা ভালো না। তাই সকলে মিলে ১৮২ শতকের মধ্যে ১৬০ শতক জমি বায়নাপত্র করে দিয়েছি।

জমিতে ক্রেতা সাইনবোর্ড টানাতে গেলে স্থানীয়রা বাধা দেয় কেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, স্থানীয়রা নয় একটি ভূমিদস্যু চক্র বাধা দেয় তার বাহিনীকে নিয়ে।

আমাদের সম্পত্তি আমরা বিক্রি করলে যদি আইনত বাধা থাকে, তাহলে যারা বাধা দিচ্ছে, তারা গণস্বাক্ষর করে আদালতে যাক। আইন আমাদের শাস্তি দিক। এভাবে সংঘর্ষ বাধিয়ে, হুমকি দিয়ে যারা বাধা দিচ্ছেন, তারা আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল না।

ওয়ারিশ নুরুল হুদা বলেন, ‘জমির মালিক হিসেবে আদালতের সমন আমরা পেয়েছি। আগামী মাসের ৯ তারিখ শুনানি। যারা বলছে জমির মালিক আমরা না, তাহলে আদালত আমাদের কীভাবে মালিক হিসেবে সমন করেন।’

ওয়ারিশদের মধ্যে জমি বিক্রি করেছেন মঞ্জুরুল রহমানও। তিনি বলেন, ‘জমির মালিক আমরা,অনেক ওয়ারিশ রয়েছে, প্রত্যেকে টাকার প্রয়োজনে জমি বিক্রি করেছি।

স্থানীয়রা অনেকেই জানান, এ মাঠকে তারা খেলার মাঠ হিসেবেই জেনে আসছেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় এক ব্যক্তি বলেন, মাঠটি ব্যক্তি মালিকানার। এখানে ৬০ জনের মতো ওয়ারিশ রয়েছে। তাদের অনেক জায়গা-জমি ছিল। তাই এতদিন এটি এভাবেই ফাঁকা ছিল।

এখানে শুধু যে খেলাধুলা হতো, তা না। আমরা খড়, ধান, ভুট্টা শুকাতেও ব্যবহার করতাম। মানুষ কতদিন আর জমি ফেলে রাখবে?
যা দিনকাল পড়েছে, এক আঙুল জমিও মানুষ ছাড় দেয় না। এত বড় জমি কীভাবে ছেড়ে দেবে?’

এটি খেলার মাঠ হিসেবে সরকারি নথিভুক্ত কি না জানতে চাওয়া হলে সদর উপজেলা ভূমি কর্মকর্তা শাহরিয়ার রহমান বলেন, ‘সরকারি নথিতে এটি কোনো খেলার মাঠ নয় এবং এই জমিটি কোনো সরকারি খাস জমিও নয়। যেহেতু জমি ব্যক্তি মালিকানায়, মালিক চাইলে সেটি আইন মোতাবেক বিক্রি করতে পারেন।

সম্পর্কিত সংবাদ

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

Back to top button

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker