ঠাকুরগাঁও

উদ্ধার হওয়া বস্তাবন্দি ছাত্রীকে নদীতে ফেলে হত্যাচেষ্টা, থানায় অপহরণ মামলা!

ঠাকুরগাঁওয়ে এক কিশোরীকে বস্তাবন্দি করে নদীতে ফেলে হত্যাচেষ্টার অভিযোগ উঠেছে। বৃহস্পতিবার (২১ জুলাই) ভোরে শহরের টাংগন নদীর পাশ থেকে ওই কিশোরীকে বস্তাবন্দি অবস্থায় উদ্ধার করা হয়।

উদ্ধারকৃত বস্তাবন্দি জীবিত মাদ্রাসার ছাত্রীকে হাসপাতালে ভর্তি করে স্থানীয়রা।
এ ঘটনায় ওই নারীর বড়ভাই বাদী হয়ে থানায় একটি অপহরণ মামলা করেছেন।

শুক্রবার (২২ জুলাই) রাত সাড়ে ১২ টার দিকে মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেন ঠাকুরগাঁও সদর থানা (ওসি) কামাল হোসেন।

ওসি কামাল হোসেন বলেন, ওই ছাত্রী বড় ভাই বাদী হয়ে চার জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরো ৩/৪ জনের বিরুদ্ধে থানায় একটি অপহরণ মামলা করেছেন।

এতে মামলার প্রধান আসামি করা হয় ওই নারীর কথিত স্বামী সাহাবুল ইয়ামিনকে। এছাড়াও আসামি করা হয় সাহাবুল ইয়ামিনের বাবা মোঃ আমির হোসেন, তার মা ও গুলজান বেগম নামের এক মহিলাকে।

উদ্ধার ছাত্রীর নাম মাহফুজা আক্তার (১৭)। সে দিনাজপুর জেলার বীরগঞ্জ উপজেলার কবিরাজহাট এলাকার বিজয়পুর গ্রামের মোস্তফা কামালের মেয়ে। সে ঠাকুরগাঁও খাতুনে জান্নাত কামরুন্নেছা কাওমি মহিলা মাদ্রাসায় কিতাব বিভাগের শিক্ষার্থী

উদ্ধারের পর ওই তরুণী বলেন, আমাদের গ্রামের বাড়িতে গুলজান নামের এক মহিলা ভাড়া থাকতেন। তিনি গোপনে আমার কিছু খারাপ ছবি তুলে আমাকে ব্ল্যাকমেইল করে আসছিলেন। আমাকে পাচার করে দেওয়ার হুমকি দিতেন। বিষয়টি আমার পরিবারকে জানালে তাদের পরামর্শে মে মাসের শেষদিকে ঠাকুরগাঁও শহরের একটি মাদ্রাসায় ভর্তি হই।

বৃহস্পতিবার রাত ৩টার দিকে তাহাজ্জুদ নামাজের জন্য অজু করতে বের হই। অজু শেষে দেখি চারজন ছেলে আমার সামনে দাঁড়িয়ে। তারা বলে, ছবিগুলো নিতে চাইলে হাত বাড়াও। আমি হাত বাড়ানো মাত্রই তারা আমাকে ধরে নিয়ে মুখ চেপে ধরে মারধর করে। একপর্যায়ে তারা আমাকে বস্তায় ঢুকিয়ে ফেলে। তারপর তারা আমার সাথে কী করেছে তা বলতে পারি না।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, এক মাস আগে মাহফুজা আক্তারকে লেখাপড়ার উদ্দেশে ঠাকুরগাঁওয়ের খাতুনে জান্নাত কামরুন্নেছা কাওমি মহিলা মাদ্রাসায় ভর্তি করানো হয়। ভর্তির পর ঈদের ছুটি কাটিয়ে কয়েকদিন আগে মাদ্রাসায় ফিরে মাহফুজা। হঠাৎ বৃহস্পতিবার (২১ জুলাই) দিবাগত রাতে মাহফুজাকে একদল যুবক কৌশলে ডেকে নিয়ে যায়। পরবর্তীতে তাকে নির্যাতন করে হত্যার উদ্দেশে হাত-পা বেঁধে বস্তায় ভরে শহরের টাংগন নদীতে ফেলে দেয়। কিন্তু বস্তা গড়িয়ে নদীর ধারে আটকে থাকে। বৃহস্পতিবার ভোর সকালে স্থানীয়রা বস্তাবন্দি অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে। পরে আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাকে ঠাকুরগাঁও জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়।

মাদ্রাসার এক শিক্ষিকা বলেন, ফজরের নামাজে যখন তাকে পাওয়া যায়নি, তখন তাকে মাদ্রাসার সবখানে অনেক খোঁজাখুঁজি করেছি। ভোরে জানতে পারি বস্তাবন্দি মরদেহ নদীর ধারে পড়ে আছে। তখনও আমরা জানি না সে আমাদেরই ছাত্রী। পরে একজন ছবি দেখালে আমরা নিশ্চিত হই। তার সঙ্গে কী ঘটছিল তা আমরা জানতাম না। এমনকি সে যে বিবাহিত, সে খবরও গোপন রেখেছিল সে।

মামলার বাদী বলেন, আমাদের বাসায় ভাড়া থাকতেন গুলজান বেগম। তিনি কুপরামর্শ দিয়ে আমার বোনকে গ্রামের সাহাবুল ইয়ামিন নামের এক কিশোরের সঙ্গে যোগাযোগ করিয়ে দেন। তিনিই ইয়ামিনকে গত রমজান মাসে একদিন সেহেরির পর আমার বোনের ঘরে ঢুকিয়ে দেন। সে সময় পরিবারের লোকজন ইয়ামিনকে আটক করলে, পরে স্থানীয়দের মধ্যস্থতায় তার সঙ্গে আমার বোনের এভিডেভিড করে বিয়ে হয়।

তিনি আরও জানান, অপ্রাপ্তবয়স্ক হওয়ায় বোনের বিয়ের খবর গোপন রেখে তাকে বাড়ি থেকে দূরে রাখার জন্য ঠাকুরগাঁওয়ে মাদ্রাসায় ভর্তি করা হয়। এসব ঘটনার জেরেই গুলজান, ইয়ামিন ও তার বাবা-মা মিলে আমার বোনের সাথে এমন করেছে।

মাদ্রাসার অধ্যক্ষ হজরত আলী বলেন, শিক্ষার্থীর পূর্বের ঘটনা পরিবারের পক্ষ থেকে জানানো হয়নি। জানালে আমরাও সতর্ক থাকতাম তার বিষয়ে।

ঠাকুরগাঁও সদর থানার(ওসি), বিষয়টি তদন্ত করা হচ্ছে ও অভিযুক্তদের গ্রেফতার করার জন্য অভিযান চলছে


Discover more from MIssion 90 News

Subscribe to get the latest posts to your email.

সম্পর্কিত সংবাদ

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

Back to top button

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker