লালমনিরহাট

এসএসসি পরীক্ষার্থীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষন, দুই ধর্ষক গ্রেফতার

লালমনিরহাটে এক এসএসসি পরীক্ষার্থী সংঘবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হয়েছে। এ ঘটনায় মঙ্গলবার দিবাগত রাতে বিভিন্নস্থানে অভিযান চালিয়ে দুই ধর্ষককে গ্রেফতার ও বাড়িটি চিহ্নিত করেছে লালমনিরহাট সদর থানা পুলিশ। এ ঘটনায় ধর্ষিতার মা বাদি হয়ে লালমনিরহাট সদর থানায় একটি ধর্ষন মামলা দায়ের করেছেন।

বুধবার (১৪ সেপ্টেম্বর) রাত ৮টার দিকে লালমনিরহাট সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) এরশাদুল আলম দুই ধর্ষককে গ্রেফতার ও বাড়িটি চিহ্নিত করার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

গ্রেফতারকৃত আসামীরা হলেন লালমনিরহাট সদর উপজেলার পৌরসভার ৩নং ওয়ার্ডের স্টেডিয়ামপাড়া(দালালটারী) এলাকার মকবুল হোসেনের ছেলে সামসুল হোসেন বাবলু(৪২) ও একই এলাকার আবুল হোসেন সরকারের ছেলে তসলিম উদ্দিন সরকার(৪০)।

ওই এসএসসি পরীক্ষার্থী হাতীবান্ধা উপজেলার শাহ গরীবুল্লাহ উচ্চ বিদ্যালয় থেকে আসন্ন এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নেবেন বলে প্রবেশপত্র দেখিয়ে একথা জানিয়েছেন তার মা রশিদা বেগম।

মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, হাতীবান্ধা উপজেলার সিন্দুর্ণা ইউনিয়নের জয়নুল হোসেন পরিবারের সদস্যদের ঠিকমত ভরনপোষন দিতে পারেন না। ফলে রশিদা বেগম সন্তানদের নিয়ে ভাইয়ের বাড়ীতে বসবাস করেন। তিনি স্থানীয় এক ব্যক্তির বাড়ীতে কাজ করে সংসার চালান। এই অসহায়ত্বের সুযোগ নিয়ে ওই পরীক্ষার্থীর সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তোলেন প্রতিবেশি ভগ্নিপতি হাফিজুল ইসলাম। প্রেমের এক মাস যেতে না যেতেই তাকে কেনাকাটা করে দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে গত বৃহস্পতিবার (১ সেপ্টেম্বর) লালমনিরহাটে নিয়ে যান দুলাভাই হাফিজুল।

লালমনিরহাটে নিয়ে আসার পর তাকে নারী পাচারকারী চক্রের সদস্য বাবলু নামক এক ব্যক্তির হাতে তাকে তুলে দেন। বাবলু শহরের স্টেডিয়ামপাড়ায় তার ভাই নুরুজ্জামানের বাসায় নিয়ে গিয়ে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ করে চেতনাশক ঔষধ খাইয়ে তাকে নাবিল গাড়ীতে ঢাকায় পাঠান।

ওই শিক্ষার্থী রোমহর্ষক ঘটনার বর্ণনা দিয়ে অভিযোগ করে বলেন, ‘গত এক মাস আগে হাতীবান্ধার সিন্দুর্ণা ইউনিয়নের প্রতিবেশী বোনের স্বামী হাফিজুল ইসলাম আমার সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তোলেন। গত ১ সেপ্টেম্বর বৃহস্পতিবার মোবাইল ও কিছু কেনাকাটা করে দেওয়ার জন্য ট্রেনে করে লালমনিরহাট নিয়ে যায়। পাশ থেকে আসার কথা বলে আমাকে সেনামৈত্রী মার্কেটে ঢাকা বাস স্ট্যান্ডের নাবিল পরিবহনের কাউন্টার ম্যানেজার বাবলুর নিকট বসিয়ে রাখে।

হাফিজুল আমাকে ডাকছে এই কথা বলে সন্ধ্যায় আমাকে একটি রিক্সায় তুলে নেয় বাবলু। পরে স্টেডিয়ামাপাড়ার একটি লোকজনহীন বাসায় আটকে রাখে। পরে তসলিম নামে আরও একজনকে নিয়ে আসে। আগে বাবলু ও পরে তসলিম আমার সাথে শারীরিক সম্পর্ক করে। পরে চা খাওয়ায়। এরপর আর কিছু বলতে পারি না। পরে দেখি আমি ঢাকায়।

ধর্ষকদের গ্রেফতার অভিযানে অংশ নেওয়া লালমনিরহাট সদর থানার ইন্সপেক্টর (তদন্ত) মোজাম্মেল হক বলেন, ‘প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে দুই আসামী মেয়েটি ধর্ষণের কথা স্বীকার করেছে। তাকে ফরিদপুরের এক নারী পাচারকারী সদস্যের নিকট নাবিল গাড়ীতে ঢাকায় পাঠানোর কথাও স্বীকার করেছে। ওই ব্যক্তি তাকে ঢাকার গাবতলীতে নেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু আগেই পরিবারের সদস্যরা খবর পেয়ে তাকে ঢাকা থেকে উদ্ধার করে। পরে তার অসুস্থ্য অবস্থা দেখে মেডিসিন ও নিউরোলজী চিকিৎসককে দেখান। পরে ১৩ সেপ্টেম্বর রাতে আমাদের নিকট লিখিত অভিযোগ দিলে আমরা প্রয়োজনীয় তদন্ত করে ঘটনার সত্যতা পেয়ে রাতেই এজাহার হিসেবে গ্রহণ করে আসামীদের গ্রেফতার করি।

লালমনিরহাট সদর থানার ওসি এরশাদুল আলম বলেন, ‘সংঘবদ্ধ ধর্ষণের শিকার মেয়েটি ধর্ষকদের চিহ্নিত ও ঘটনাস্থল নিশ্চিত হওয়ার পর ১৩ সেপ্টেম্বর রাতে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। মামলা দায়েরের পর ওই রাতেই দুই ধর্ষককে গ্রেফতার করা হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, ‘এটি একটি চাঞ্চল্যকর ঘটনা হিসেবেই আমরা তদন্ত করছি। প্রাথমিক তদন্তে মনে হচ্ছে, মেয়েটিকে পাচার করার উদ্দেশ্যে একটি চক্র সক্রিয় ছিল। আমরা অন্য আসামীদেরও আইনের আওতায় আনার চেষ্টা করছি। ধৃত আসামীদের বিকালে আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে।

সম্পর্কিত সংবাদ

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

Back to top button

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker