কিশোরগঞ্জ

অসহায়ের বন্ধু মানবিক চঞ্চল

মাহফুজ হাসান, কিশোরগঞ্জ জেলা প্রতিনিধি

পৃথিবীময় হানাহানি, মানুষে মানুষে হিংসা। মানবতা বিপন্ন যেন কালো গালিবে জড়ানো, মুখ লুকিয়ে থাকে স্বার্থের প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সুস্থ বিবেক। দর কষাকষির ভিরে মুখ থুবড়ে পরে থাকে সামাজিক ঐক্য। একদিকে ক্ষুধার্থ মৃত্যুপথযাত্রী মানুষ, অভাব অনটনে জীবনের কাছে পরাজয় মেনে নেওয়া মানুষ। অন্যদিকে দামি গাড়িতে চড়ে যাওয়া সাহেব। পৃথিবীর চিত্রই আজ এরকম।

রাস্তায়-ফুটপাতে কিম্বা কোনো গ্রামের পরতে পরতে থাকা অসুস্থ, ক্ষুধার্ত মানুষের আর্তনাদ। এইসব অসহায় মানুষের আর্তনাদ শুনার মতো যেন সময়ই নেই কারো কাছে। এমন প্রশ্ন বর্তমানে ভিত্তিহীন বলা যায় কারণ প্রতিটি সমাজেই জাগ্রত বিবেকের সংস্পর্শে গড়ে উঠেছে মানবিক সংগঠন।

কিশোরগঞ্জের হোসেনপুরে অসহায়দের নিয়ে কাজ করা অসংখ্য মানবিক সংগঠন রয়েছে। রয়েছে সাবেক অধ্যাপক এবিএম ছিদ্দিক চঞ্চল এর মতো মানুষ। একটি সাদাসিধে মুখায়ব, সাদাসিধে পোশাক আর সঙ্গে সাদাসিধে মন এই নিয়ে এবিএম ছিদ্দিক চঞ্চল। নিঃসংকোচে মানবতার হাত বাড়িয়ে দেন রোগে, শোকে, অভাবে দিশেহারা মানুষজনের প্রতি।

তার ঠাঁই হয়েছে মানুষের মণিকোঠায়। তার সারাটি জীবনে কেবল মানুষের সেবাই করে গেছেন। মানুষের সেবা করতে করতে এখন তাকে মানবিক চঞ্চল নামেই ডাকে সবাই। তার কাছে নেই কোনো ভেদাভেদ। জাতি ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে সবাইকে আপন করে নেন। মানুষের সেবায় নিজেকে বিলিয়ে দিয়ে অমর হয়ে থাকতে চান মানবকুলে।

ধর্মপ্রাণ মুসলিমদের জন্য এবিএম ছিদ্দিক চঞ্চল এর প্রচেষ্টায় গড়ে উঠেছে ৭ টি মসজিদ, ২ টি মাদরাসা। অসংখ্য ঠিকানাহীন মানুষের হয়েছে মাথা গোঁজার ঠাঁই। তিনি দরিদ্র্য ঘরের বহু মেয়ের করেছেন বিবাহের ব্যবস্তা। অসহায় অসুস্থ মানুষের চিকিৎসার ব্যবস্থা করার জন্যই যেন তার জন্ম।

এবিএম ছিদ্দিক চঞ্চল হোসেনপুর আদর্শ স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা প্রধান শিক্ষক ছিলেন। অনেক প্রতিকূলতা ও চ্যালেঞ্জের মোকাবেলা করে স্কুল প্রতিষ্ঠায় ব্যাপক অবদান রাখেন। তিনি মাধখলা সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসার পরিচালনা পর্ষদে সম্পাদকের দায়িত্ব পালনকালে প্রতিষ্ঠানের প্রভূত উন্নতি সাধন করেন। একই পর্ষদের সভাপতি থাকাকালীন সময়ে প্রতিষ্ঠানের অনিয়ম দূর করে লেখাপড়াসহ সকল ক্ষেত্রে শৃঙ্খলা আনয়ন করেন। নিজ উপজেলায় ঋণ সালিশি বোর্ডের বিচারক হিসেবে দায়িত্ব পালন কালে হোসেনপুরে বহুপারিবারিক জটিলতার মিমাংশা করেন। তাঁর দক্ষতা ও অভিজ্ঞতা বরাবরই তিনি অসহায় বঞ্চিত মানুষের জন্য কাজে লাগান।

হোসেনপুর সরকারি কলেজের অধ্যাপক ছিলেন,বেশ সুনামের সহিত হোসেনপুর সরকারি কলেজে শিক্ষকতা জীবন সমাপ্ত করেন।অবসরের জীবনটা যেখানে নাতিপুতি নিয়ে গল্প করে আয়েশে কাটানোর কথা, তিনি তা না করে পুরো সময়টাই ব্যয় করে থাকেন সমাজ ও মানুষের চিন্তায়।

এবিএম ছিদ্দিক চঞ্চল জন্ম গ্রহণ করেন, ৩১ মে ১৯৫৮ খ্রি. তার পিতা: মরহুম আ: হাফিজ ভূঞা, মাতা: মরহুমা শামসুন নাহার বেগম। কিশোরগঞ্জ জেলার হোসেনপুর উপজেলার মাধখলা গ্রামে তার জন্ম।

শিক্ষা জীবনের হাতেখড়ি স্বীয় জননীর হাতে, প্রাথমিক শিক্ষা: ১ম থেকে ৩য় শ্রেণি, মাধখলা সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসা। ৩য় শ্রেণি থেকে ৫ম শ্রেণি হোসেনপুর ১নং সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়।

স্কুল জীবন: হোসেনপুর সরকারি মডেল স্কুল এন্ড কলেজ। এসএসসি ১৯৭৩ সালে, এইসএসসি ১৯৭৪। BA (hon) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

এমএ শেষ করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে।

পেশা হিসেবে শিক্ষক হলেও নেশা তার মানবসেবা।

অসহায়দের জন্য অর্থ জোগাড় করতে মানুষের দ্বারে দ্বারে যান।সর্বস্তরের মানুষের কাছে তিনি অত্যন্ত বিশ্বাসী তাই উনার একটি কথাতেই দানের ভান্ডার খুলে দেন বিত্তবানরা। তার প্রতিষ্ঠিত “হ্যালো গোবিন্দপুর” সংগঠনটি আর্ত মানবতার সেবায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে।এছাড়াও এবিএম ছিদ্দিক চঞ্চল এর শ্রম, মেধা ও পরামর্শে অসংখ্য মানবিক সংগঠন গড়ে উঠেছে, স্বেচ্ছাসেবীদের নিঃশ্বার্থ রক্তদাতা সংগঠন “রক্ত কমল তরুণ দল” সহ বহু সংগঠনের প্রধান উপদেষ্টা তিনি।

প্রবন্ধ, নিবন্ধ, কবিতা, গান, নাটক ইত্যাদি বাংলা সাহিত্যে তার জোর দখল রয়েছে। এবিএম ছিদ্দিক চঞ্চল এর অনুপ্রেরণায় হোসেনপুরের স্বেচ্ছাসেবীরা যেন প্রাণ ফিরে পান নিঃস্বার্থ স্বেচ্ছাসেবাই। তার নির্দেশনায় সমাজ বিনির্মাণের প্রত্যয়ে উপজেলায় অসংখ্য তরুণ নিরবে নিভৃতে কাজ করে যাচ্ছেন। আত্মপ্রচার নয়, আত্মতৃপ্তিই যাঁদের মূল উদ্দেশ্য। মানবতার কল্যানে নিজেকে বিলিয়ে দেয়া তেমনই একজন এবিএম ছিদ্দিক চঞ্চল।

এবিএম ছিদ্দিক চঞ্চল মনে করেন, ধর্মীও বিধি বিধান এর পাশাপাশি মানবতার সেবায় মহান স্রষ্টার সন্তুষ্টি অর্জন দুর্লভ কিছু নয়! তিনি বলেন, যার যার অবস্থান থেকে যদি প্রতিটি মানুষ সাধ্যমত অসহায়ের জন্য কাজ করে তবে সহজেই সমাজ থেকে বিপন্নতা দূরীভূত হবে। তিনি আরও বলেন, মানুষের জন্য কাজ করলে মনে যে প্রশান্তি আসে তা অন্যথায় মিলা দুষ্কর!

সম্পর্কিত সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker