কিশোরগঞ্জ

সবুজ ধানের শীষে রঙিন স্বপ্ন বুনছে কৃষক

সবুজ ধানে ছেয়ে গেছে মাঠের পর মাঠ
কি অপরূপ সাজে সেজেছে আজি মাঠ-ঘাট
দখিনা সমীরণে হেলে দুলে খেলছে সবুজ পাতা
আয়না ছুটে মাঠে তোরা, দেখতে সবুজ কাঁথা।

কবিতার পংক্তি গুলোর মতো এ চলতি মৌসুমে কিশোরগঞ্জের হোসেনপুরে রোপা আমন ধানের আবাদি বিস্তীর্ণ ফসলের মাঠ চারিদিকে সবুজের সমারোহ। সমুদ্রের ছোট ছোট ঢেউয়ের মতো খেলে যাচ্ছে সবুজ ধানের পাতাগুলো। আর এমন সবুজ সমুদ্রের ঢেউয়ে দুলে উঠছে কৃষকের রঙিন স্বপ্ন। সবুজ ধানে ছেয়ে গেছে মাঠ। এবছর আমন ধান চাষ সুখকর ছিল না। অনাবৃষ্টি ও জ্বালানি তেলের সংকটে সঠিক সময়ে অনেকেই ধান চাষ করতে পারেনি। তবে নানান প্রতিকূলতা সত্ত্বেও কোথাও সোনালী ধানের শীষে ঝলমল করছে মাঠের পর মাঠ। রাশি রাশি সোনালী ধানে ভরে উঠবে কৃষাণীর শূন্য গোলা। ধান বিক্রিতে পরিশোধ হবে দেনা ঋণের বোঝা, মিটাবে সংসারের ভরণপোষণ, ছেলেমেয়েদের লেখাপড়ার খরচ ও নতুন জামার বায়না, কৃষাণীর গায়ে জড়াবে নতুন শাড়ি।

কিশোরগঞ্জের হোসেনপুরের চরকাটি হারী গ্রামের প্রান্তিক কৃষক রুক্কুন উদ্দিন তার পাঁচবিঘা জমিতে এবার আমন ধান চাষ করেছেন। সুষ্ঠু সবল সবুজ ধানের চারাগুলো হাতড়াচ্ছিলেন তিনি। এমন সুন্দর চারা দেখে তার মনটা খুশিতে ভরে উঠেছে। প্রত্যুষে কাক ডাকা ভোরে খেতের আইলে- আইলে ঘোরে ধান ফলানোর স্বপ্নে বিভোর। সন্তানের মতো স্নেহের স্পর্শে ধানের চারায় পরিচর্যা করে কাটছে কৃষকের দিন। কৃষাণি ধানের আগমনী বার্তায় ধানের গোলা, কুলো, খাঁচা ইত্যাদি গোছানোর কাজে ব্যস্ত।

এ বছর সার ও জ্বালানি তেলের সংকট থাকায় আমন ধানের কম আবাদ করেছেন। কিন্তু খুবই ভালো ফলনের আশা করছেন তিনি। কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে আমন প্রতি বিঘায় অন্তত ৩৫ থেকে ৪০ মণ ধান উৎপাদন হবে বলে জানান তিনি।

একই গ্রামের কৃষক গোলাপ চার বিঘা জমিতে আমন ধান লাগিয়েছেন। নিজ জমিতে বালাইনাশক দিতে গিয়ে বলেন, সিত্রাং প্রভাবে ধানের ব্যাপক ক্ষতি হয়ছে। তবুও ফলন খুব ভালো হবে।

উপজেলার সিদলা ইউনিয়নের সাহেবের চর গ্রামের প্রান্তিক কৃষক নজরুল ইসলাম, চর বিশ্বনাথ পুর গ্রামের আব্দুস সালাম, দক্ষিণ পুমদী গ্রামের সবুজসহ অনেকেই বলেন, এবছর সারের কোনো সংকট হয়নি। যে কারণে ফসলের চেহারা অনেক সুন্দর হয়েছে। সবল-সতেজ চারাগুলো দেখে মনে হয় ধানের ব্যাপক ফলন হবে।

তারা আরও বলেন, এ অঞ্চল আমন চাষের ওপর নির্ভরশীল। ভালোভাবে এ ফসল ঘরে তুলতে পারলে তাদের সারা বছরের চাহিদা পূরণ হয়। এ কারণেই আমনকে ঘিরেই স্বপ্ন দেখে এ অঞ্চলের চাষিরা।

যথাসময়ে সার, বালাইনাশক ও সেচ দিতে পারায় প্রাথমিকভাবে চারাগুলো উজ্জীবিত রয়েছে। ধান গাছে শীষ গজানো থেকে শুরু করে ধান পাকার আগ পর্যন্ত আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে যে কোনো সময়ের চেয়ে ভালো ফলন হবে বলে জানান কৃষকেরা।

তবে বাজারে ধানের পর্যাপ্ত মূল্য থাকায় আনন্দ প্রকাশ করেছেন চাষিরা। কৃষকদের দাবি, এক বিঘা জমিতে ধান উৎপাদনে যে পরিশ্রম আর ব্যয় করা হয়, সে তুলনায় ধানের মূল্য তারা পাচ্ছেন না । তাদের দাবি সরকার যেমন করে সার-বীজ, কীটনাশক ও বিদ্যুতের ঘাটতি মিটিয়েছে, তেমনই ধানের সঠিক মূল্য নির্ধারণ করলে প্রান্তিক চাষিদের দুঃখ-দুর্দশা ঘুচে যাবে।

কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, এবছর উপজেলায় ৭হাজার তিনশ’ হেক্টর জমিতে আমন ধানের আবাদ হয়েছে। গত বছরের তুলনায় এ বছর বেশি পরিমাণে ধান আবাদ করেছে কৃষক। এবার এখন পর্যন্ত বোরো চাষে কোনো প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি হয়নি। আবহাওয়া অনুকূলে রয়েছে। সার, বীজ ও বালাইনাশক সংকট ছিল না।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ ইমরুল কায়েস জানান, এবছর উপজেলায় ৭হাজার তিনশ’ হেক্টর জমিতে আমন ধানের আবাদ হয়েছে। গত বছরের তুলনায় এ বছর কম আমন আবাদ হয়েছে। পরবর্তী আবহাওয়া অনুকূলে থাকলেও কোনো প্রকার প্রাকৃতিক বিপর্যয় না ঘটলে হোসেনপুরে রেকর্ড পরিমাণ ধান উৎপাদন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানান তিনি।

সম্পর্কিত সংবাদ

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

Back to top button

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker