ব্রাহ্মণবাড়িয়া

হত্যার পর স্ত্রীর স্ট্যাটাস ‘বিদেশ পৌঁছে গেছে আজিজুল’

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ উপজেলার চরচারতলা গ্রামের মো. আজিজুল হক রবিন (২২) নামের যুবক নিখোঁজ হননি, তাকে হত্যা করা হয়েছে। নরসিংদীর জেলার রায়পুর উপজেলায় পানির নিচে খুঁটিতে বাঁধা অবস্থায় যে লাশটি পাওয়া যায় সেটিই আজিজুলের।

স্ত্রী সুইটি আক্তার এ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছেন বলে নিজেই আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। গত শনিবার ব্রাহ্মণাবড়িয়ার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক আফরিন আহমেদ হ্যাপির কাছে ১৬৪ ধারার জবানবন্দিতে স্বামীকে হত্যার পরিকল্পনার কথা জানান সুইটি।

এর মধ্য দিয়ে প্রায় পাঁচ মাস পর আজিজুল ‘নিখোঁজ’ রহস্য উন্মোচিত হলো। স্ত্রী সুইটির রহস্যজনক আচরণে সন্দেহ হলে পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে। সুইটির দেওয়া তথ্য অনুযায়ী হত্যাকাণ্ডে জড়িত বাদল ও দিদারকেও গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

আদালতে দেওয়া স্বীকারোক্তি অনুযায়ী, দিদার নামে এক স্বজনের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক স্বামী আজিজুল সহ্য করতে না পারার কারণে সুইটি এ হত্যাকাণ্ড ঘটান। হত্যাকাণ্ডের সময় দিদারসহ বাদল নামে এক ভাড়াটে খুনি উপস্থিত ছিলেন। পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী এ হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয়। এরপর লাশ গুম করার জন্য শরীরে ইট বেঁধে নদীর মাঝখানে একটি খুঁটি পুঁতে বেঁধে দেওয়া হয়।

আশুগঞ্জ থানার উপপরিদর্শক (এসআই) ও ঘটনার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আনোয়ার হোসাইন কালের কণ্ঠকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। রবিবার সন্ধ্যায় তিনি বলেন, স্বজন দিদারের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক ছিল আজিজুলের স্ত্রী সুইটির। এ নিয়ে আজিজুল ও সুইটির মধ্যে বিরোধ দেখা দেয়। আজিজুল এড়িয়ে চলতে থাকেন সুইটিকে। এতে ক্ষুব্ধ সুইটি তার স্বামীকে হত্যার পরিকল্পনা করেন।

তিনি আরো বলেন, পরিকল্পনা অনুযায়ী গত ২২ মে আজিজুলকে নবীনগরের বাবার বাড়িতে নিয়ে যান সুইটি। পরদিন মাজার জিয়ারত ও সুইটি খালার বাড়িতে যাওয়ার জন্য লালপুর বাজার নৌঘাটে আসেন। সেখানে পূর্বপরিচিত দিদার ও ভাড়া করা খুনি বাদল একটি নৌকা নিয়ে অপেক্ষা করছিলেন। তাদের সঙ্গে ছিল ঘুমের ওষুধ মিশানো মিষ্টি। পথে আজিজুলকে মিষ্টি খাওয়ার প্রস্তাব দেন দিদার। কিন্তু আজিজুল এতে রাজি হননি। কিছুক্ষণ পর মাঝি নৌকার ইঞ্জিন বন্ধ করে দেন। তখন ভাড়াটে খুনি বাদল নৌকার ইঞ্জিন স্টার্ট দেওয়ার যন্ত্র দিয়ে আজিজুলের মাথায় আঘাত করলে তিনি অচেতন হয়ে পড়েন। নৌকায় থাকা সকলে মিলে আজিজুলের লাশ গুম করার জন্য তার শরীরে ইট বেঁধে নদীর মাঝখানে খুঁটি পুঁতে বেঁধে দেন। পরে সেখান থেকে ফিরে সুইটি তার স্বামীকে পাচ্ছেন না বলে খবর ছড়ান। এ ঘটনায় আজিজুলের বাবা আলমগীর হোসেন থানায় নিখোঁজ ডায়েরি করেন।

পুলিশ কর্মকর্তা আনোয়ার আরো বলেন, ‘সুইটি বিভিন্ন আচরণ আমাদের সন্দেহ হতে থাকে। তার স্বামী আজিজুল বিদেশ ভালোভাবে পৌঁছে গেছেন বলেও ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেন। অন্যদিকে আজিজুলের ব্যবহৃত মোবাইল ফোনটি আশুগঞ্জ এলাকাতেই ব্যবহার হচ্ছে বলে নিশ্চিত হওয়া যায়। আরো কিছু সন্দেহ থেকে আজিজুলের স্ত্রী সুইটিকে দুদিন আগে গ্রেপ্তার করা হলে হত্যাকাণ্ডের বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া যায়। ’

এ ঘটনায় আজিজুলের বাবা বাদী হয়ে আশুগঞ্জ থানায় মামলা দায়ের করেছেন। বাদী আলমগীর খান সাংবাদিকদেরকে বলেন, ‘আমার ছেলের লাশটাও দেখতে পারিনি। এমন নিষ্ঠুর হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে যারা জড়িত তাদের সবাইকে গ্রেপ্তার করে দ্রুত আইনের আওতায় এনে বিচারের দাবি জানাচ্ছি। ’

সম্পর্কিত সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এছাড়াও পরীক্ষা করুন
Close
Back to top button

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker