ব্রাহ্মণবাড়িয়া

নাকের চিকিৎসা করাতে গিয়ে মৃত্যুর কোলে কলেজছাত্র ইশতিয়াক

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় নাকের চিকিৎসা করাতে গিয়ে পৌর ডিগ্রী কলেজের ছাত্র ইশতিয়াক আহমেদ (২১) মারা গেছেন। স্বজনদের অভিযোগ, ভুল চিকিৎসায় সে মারা যায়। ঘটনার পর ইশতিয়াকের স্বজনরা অভিযোগ উঠা হাসপাতালে ভাঙচুর চালায়। পরে তার বন্ধুরা মানববন্ধনও করে। মারা যাওয়া ইশতিয়াক সদর উপজেলার বুধল ইউনিয়নের চান্দিয়ারা গ্রামের বাচ্চু মিয়ার ছেলে।

স্থানীয় লোকজন, নিহতের পরিবার ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, ইশতিয়াকের নাকের মাংস বেড়ে গিয়েছিল। নাকের অস্ত্রোপচারের জন্য গতকাল শুক্রবার সকাল ১১টার দিকে জেলা শহরের পুরাতন জেলরোডস্থ আল খলিল হসপিটাল অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার নামের একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি হন ইশতিয়াক। প্রতি শুক্রবার আসা ঢাকার স্যার সলিমুল্লাহ মেডিক্যাল কলেজ মিডফোর্ট হাসপাতালের নাক, কান ও গলা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. রাফিউল আলমের অধীনে চিকিৎসা নিতে তাকে ভর্তি করা হয়। 

শুক্রবার বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে ওই হাসপাতালের অস্ত্রোপচার কক্ষে ইশতিয়াককে নেওয়া হয়। সেখানে তাকে অচেতন করার ইনজেকশন দেন অবেদনবিদ (এনেস্থেশিস্ট) ফৌজিয়া মমতাজ সুপ্তি। অস্ত্রোপচারের পর কক্ষ থেকে অচেতন ও আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাকে ওয়ার্ডে স্থানান্তরিত করা হয়। পরে বিষয়টি জানতে পেরে রোগীর মা শরিফা বেগম ও তাঁর ভাবি ভয় পেয়ে চিৎকার-চেচামেচি শুরু করেন। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাকে পুনরায় অস্ত্রোপচার কক্ষে নিয়ে যান। এরপর থেকে রাত পর্যন্ত স্বজনরা বার বার ইশতিয়াককে দেখার চেষ্টা করলেও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ দেখতে দেননি। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ইশতিয়াক ভালো আছেন বলে বার বার স্বজনদের আশ্বস্ত করেন। এক পর্যায়ে সন্ধ্যায় অস্ত্রোপচার কক্ষ থেকে রোগীর স্বজনকে না জানিয়ে অচেতন অবস্থায় ইশতিয়াককে জেলা শহরের কুমারমীল মোড়ের ব্রাহ্মণবাড়িয়া আইসিইউ স্পেশালাইডজ অ্যান্ড জেনারেল হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে স্থানান্তর করে সেখান থেকে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ পালিয়ে যান। শনিবার সকালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ইশতিয়াকের মৃত্যু হয়।

এদিকে বেলা ১১টার দিকে স্বজন ও বন্ধুরা আল খলিল হসপিটাল এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে গিয়ে ভাঙচুর চালান। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে আল খলিল হসপিটাল এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারের পরিচালক ও তত্ত্বাবধায়ক নাজমুল সাকিব (৩২), কর্মী আরিফুল ইসলাম (২৮) ও এমদাদুল বাছির (৩৩)কে আটক করে থানায় নিয়ে আসেন। বেলা ১২টার দিকে নিহতের লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়। দুপুর দেড়টার দিকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রেস ক্লাবাবের সামনে জড়িতদের শাস্তির দাবিতে নিহতের স্বজন ও বন্ধুরা বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধন করেন। সেখানে জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি মাসুম বিল্লাহসহ নিহতের বন্ধুরা বক্তব্য রাখেন। ভুল চিকিৎসায় ইশতিয়াকের মৃত্যুর অভিযোগ এনে নিহেতর বড় ভাই বাচ্চু মিয়া বাদী হয়ে আল খলিল হাসপাতালের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান খলিলুর বশির, চিকিৎসক রাফিউল আলম ও ফৌজিয়া আক্তার টিকলিকে আসামি করে সদর থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেন।

নিহতের ভাবী আরজিনা আক্তার অভিযোগ করেন, ইশতিয়াককে সুস্থ অবস্থায় অস্ত্রোপচার কক্ষে নেওয়া হয়। চিকিৎসক রাফিউল আলম তার অস্ত্রোপচার করেন। বিকাল ৪টায় অস্ত্রোপচার কক্ষ থেকে অচেতন অবস্থায় তাকে বেডে নেওয়া হয়। কিছুক্ষণ পর পর তাকে ডাকতে ও নাড়াচাড়া করানোর কথা বলেন চিকিৎসক। এক পর্যায়ের তার হাত-পা ঠান্ডা ও কালো হলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানানো হয়। পরে তাকে পুনরায় অপারেশন থিয়েটারে নেওয়া হয়। আমাদেরকে কিছু না বলে তাকে অন্য হাসপাতালের আইসিউতে নিয়ে যায় ওই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। শনিবার বেলা ১২টায় আইসিইউ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ইশতিয়াকের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেন।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া আইসিইউ স্পেশালাইডজ এন্ড জেনারেল হাসপাতালের পরিচালক (প্রশাসন) মো. আবু কাউসার বলেন, ‘ইশতিয়াককে আইসিইউতে অচেতন অবস্থায় আনা হয়। শনিবার সকাল সোয়া ৭টার দিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।’

ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোহাম্মদ এমরানুল ইসলাম জানান, ভুল চিকিৎসায় ইশতিয়াকের মৃত্যুর বিষয়ে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন তার ভাই বাচ্চু মিয়া। এরই মধ্যে তিনজনকে আটক করা হয়েছে। নিহতের লাশ ময়নাতদন্তের পর পরিবারের কাছে বুঝিয়ে দেওয়া হয়। 

সম্পর্কিত সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এছাড়াও পরীক্ষা করুন
Close
Back to top button