ইতিহাস ও ঐতিহ্য

হোসেনপুরে শীতকালীন পিঠা বিক্রির ধুম

ভাপা পিঠারে…… তোরে খাইতে আমার বুকটা জ্বইলা গেলরে…

জিবের ডগায় রুচির পানি যখন টুইটম্বর তখনই কবি মন আনন্দে নেচে উঠে, দুর্বার ছুটে চলে ভাপা পিঠার প্রাপ্তি স্থলে,মায়ের হাতের তৈরি কিংবা স্থায়ী বা ভাসমান দোকানে।

সন্ধ্যা নামলেই কুয়াশার চাদরে ঢেকে যায় কিশোরগঞ্জের হোসেনপুরের গ্রাম অঞ্চলের মেঠোপথ। হালকা শীত এসে শরীরে শিহরণ তোলে জনমনে। জানান দেয় শীতের আগমনী বার্তা। আর এই শীতের সন্ধ্যায় উষ্ণতা নিয়ে হাজির হয় ভাঁপা, চিতই। সঙ্গে মরিচ, ধনিয়া পাতা, শুঁটকি, আর সরিষা ভর্তা।ভাপা পিঠার স্বাদ নিতে হলে অবশ্যই অপেক্ষা করতে হবে পিঠা প্রেমিদের কারন যতক্ষণ চুলায় আগুন আছে ততক্ষনই মানুষের ভিড়।

সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, ছোট্ট চুলায় মাটির পাতিলে পানি ভরে মুখ লেপে ছোট করে তার ওপর পাতলা কাপড়ের আস্তরণ দিয়ে বসে পড়েন পিঠার কারিগর। পাতলা কাপড়ে মুড়ে পাতিলের ওপর বসিয়ে আগুনের তাপে পানির বাষ্প উঠে তৈরি হয় ভাপা পিঠা। প্রতিদিন বিকাল থেকে এসব দোকানে পিঠার স্বাদ নিতে ভিড় জমছে নানা বয়সী মানুষের। বিক্রেতারা পিঠা তৈরি করছেন আর ক্রেতারা দাঁড়িয়ে বা বসে গরম পিঠার স্বাদ নিচ্ছেন। এ যেন শীতকালের আরেক আমেজ। পিঠা প্রেমীরা মজে শীতের আমেজে। মূলত সেখানে ভাপা ও চিতই পিঠা তৈরি হচ্ছে। রিকশাচালক, দিনমজুর, শিশু-কিশোর, চাকরিজীবী, শিক্ষার্থীসহ সব শ্রেণি-পেশার মানুষ এসব পিঠার দোকানের ক্রেতা। কাজ শেষে বাড়ি ফেরার পথে রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে অনেককে পিঠা খেতে দেখা গেল। অনেকে পরিবারের সদস্যদের জন্য পছন্দের পিঠা নিয়ে যাচ্ছেন।

উপজেলার নতুন বাজার, বোর্ডের বাজার,উপজেলা সদরের পোষ্ট অফিস মোড়ে,হাজিপুর বাজারে প্রভৃতি স্থানে ফুটপাতে কিংবা ভাসমান কোনো দোকানে স্বাদ নিচ্ছেন শীতের পিঠার। মৌসুম জুড়েই মেলে রসালো জমকানো  স্বাদের এমন পিঠা। সকালে চাঁদর মুড়ি দিয়ে কিংবা সন্ধ্যার আড্ডায় পিঠাই হয়ে উঠেছে নাস্তার প্রধান উপলক্ষ। শিক্ষার্থীরাও বন্ধুদের সঙ্গে চলে আসছে পাশের কোনো পিঠার দোকানে।

নানা স্বাদের পিঠার সাথে মিলছে বিভিন্ন স্বাদ ও বর্ণের ভর্তা। শুঁটকি, শুকনা মরিচ, কাঁচা মরিচ, সরষে বাটা, রসুন, ধনে পাতা, কালিজিরা, তিলসহ নানান ভর্তার স্বাদ নিতে পারছেন ক্রেতারা। শীতের পিঠা ও রসনাবিলাসের সুযোগটি আরও বাড়িয়ে দিয়েছেন মৌসুমি ব্যবসায়ী কিছু নিম্নবিত্ত নারী। ৫ থেকে ১০ টাকার মধ্যে পছন্দমতো পিঠা ও ভর্তার স্বাদ নিতে পারছেন যে কেউ।

জানা যায়, চালের গুঁড়া পানিতে মিশিয়ে চুলায় তাতানো মাটির হাঁড়িতে বানানো হয় চিতই পিঠা। এই পিঠা বিক্রি চলবে পুরো শীত মৌসুমজুড়ে।

বোর্ডের বাজারে পিঠার দোকানে কথা হয় শালফিন মিয়ার সঙ্গে। তিনি বলেন, চাকরির কারণে এলাকা থেকে দূরে থাকেন। চাইলেই  এলাকার ঐতিহ্যবাহি সুস্বাদু পিঠা, ভর্তা খেতে পান না। ছুটিতে বাড়ী আসলেই শীতের মৌসুমি পিঠা খেতে  পিঠার দোকানে চলে আসি। মাঝে মাঝে লম্বা লাইন পড়েগেলেও বিভিন্ন স্বাদের পিঠা আর বিভিন্ন  পদের ভর্তার লোভ সামলাতে পারেন না তিনি।

উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে আরো কথা হয় ভাসমান পিঠা ব্যবসায়ী, কালাম,মুর্শিদা,আনোয়ারা এবং রতনের সঙ্গে, তারা জানান- ভ্রাম্যমাণ দোকানি তারা। কোনো নির্দিষ্ট জায়গায় স্থায়ীভাবে বসতে পারেন না বলে তিন-চার পদের বেশি পিঠা বানানো সম্ভব হয় না তাদের।  তারা জানান, সব শ্রেণী ও পেশার মানুষ তাদের ক্রেতা।

সম্পর্কিত সংবাদ

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

Back to top button

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker