রাজনীতি

বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয় এড়াতে সতর্ক আওয়ামী লীগ

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন যেন প্রশ্নবিদ্ধ না হয় এবং যতটা সম্ভব বিতর্ক এড়ানো যায়, সে জন্য নির্বাচনের মাঠে বেশি প্রার্থীর উপস্থিতি রাখতে চায় আওয়ামী লীগ। এর অংশ হিসেবে কোনো আসনেই কেউ যেন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হতে না পারেন তা নিশ্চিত করতে চেষ্টা করবে দলটি। আর সংসদ যাতে অংশগ্রহণমূলক হয় তা নিশ্চিত করতে বেশ কিছু আসনে নৌকা প্রতীকে প্রার্থী না রাখার কৌশল নিয়েও দলের ভেতরে আলোচনা হচ্ছে। 

তবে এখন পর্যন্ত আসন ভাগাভাগির বিষয়ে ১৪ দলীয় জোImageটের শরিকদের সঙ্গে আলোচনায় বসেননি আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা।

 

 

 

 

সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টিও প্রধানমন্ত্রীর সাক্ষাতের অপেক্ষায় আছে। যদিও সদ্য নিবন্ধন পাওয়া দল তৃণমূল বিএনপির সঙ্গে গত রবিবার রাতে বৈঠক করেছেন তিনি।   

আগামীকাল বৃহস্পতিবার আওয়ামী লীগের মনোনয়ন বোর্ডের প্রথম বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। আগামী ৩০ নভেম্বরের মধ্যে দলের প্রার্থীর তালিকা চূড়ান্ত করে নির্বাচন কমিশনে জমা দেওয়ার বাধ্যবাধকতা রয়েছে।

আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায়ের একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, নির্বাচন উৎসবমুখর করতে দলের পক্ষ থেকে মাঠে কাজ করা হবে। কোনোভাবেই যেন নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ না হয় সে জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা বাড়ানোর নির্দেশনাও আছে। নৌকা প্রতীকের বাইরে থাকা শরিকদের সমর্থন দেওয়ার পাশাপাশি স্বতন্ত্র ও দলের বিদ্রোহী প্রার্থীর প্রতিও থাকতে পারে মৌন সমর্থন।

কৌশলের অংশ দলীয় প্রতীকও ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মোট প্রার্থী ছিলেন ২৫৮ জন।

এর বাইরে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকে আরো ১৪ জন নির্বাচন করেন। এর মধ্যে বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির পাঁচজন, জাসদের (ইনু) তিনজন, তরীকত ফেডারেশনের দুজন, যুক্তফ্রন্ট-বিকল্প ধারার তিনজন এবং জাসদের (বাদল) একজন নৌকা প্রতীকে নির্বাচন করেন এবং বিজয়ী হন। 

প্রতীকের বিষয়ে এবারও অনেকটা কাছাকাছি পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছে আওয়ামী লীগ। গত নির্বাচনে মাঠের প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিএনপি ছিল। কিন্তু এবার বিএনপি অংশ নেবে কি না তা এখনো পরিষ্কার নয়।

বিএনপি যদি নির্বাচনে নাও আসে সে ক্ষেত্রে নির্বাচনকে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ করতে প্রতীকটাকেও গুরুত্বপূর্ণ ভাবছে আওয়ামী লীগ। 

আওয়ামী লীগের একাধিক সূত্র বলছে, প্রতিদ্বন্দ্বিতা বাড়ানোর জন্য এবার নৌকাহীন আসনের সংখ্যা বেশি রাখতে পারে আওয়ামী লীগ। এর মাধ্যমে এসব আসনে অন্যদের বিজয়ী হয়ে আসার সুযোগ নিশ্চিত করা হবে। বিশেষ করে যেসব আসনে বিএনপির ভোটার তুলনামূলক বেশি থাকে সেসব আসন শরিকসহ অন্য দলের জন্য ছেড়ে দেওয়া হবে।

জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ কালের কণ্ঠকে বলেন, নির্বাচনে দলের অনেক কৌশল থাকে। প্রকাশ হয়ে গেলে সেগুলো আর কৌশল থাকে না। মনোনয়ন চূড়ান্ত হওয়ার আগে অনেক হিসাব মেলাতে হয়। সেগুলো আপাতত প্রকাশ না পাওয়াই ভালো।

আওয়ামী লীগ সূত্রে জানা গেছে, লাঙল প্রতীকে জাতীয় পার্টির জন্য ২৫ থেকে ২৭টি আসন, জোটের শরিকদের জন্য ১০ থেকে ১২টি আসন, বিকল্পধারা বাংলাদেশের জন্য দুটি ও তৃণমূল বিএনপির জন্য আট থেকে ১০টি আসন ছেড়ে দেওয়ার বিষয়ে বিচ্ছিন্নভাবে আলোচনা আছে। তবে কোনো কিছু এখনই চূড়ান্ত নয়। তবে যেসব দল বর্তমানে সংসদে আছে তারা বর্তমানের চেয়ে বেশি আসন পাওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করছে।

শরিক চায় ভরসা

১৪ দলীয় জোটের শরিকদের সঙ্গে আসন ভাগাভাগি নিয়ে এখনো আলোচনায় বসেনি আওয়ামী লীগ। গত নির্বাচনের চেয়ে এবার নৌকা প্রতীকে বেশি আসন আশা করছে শরিকরা। তবে এখনই এ নিয়ে প্রকাশ্যে কথা বলতে চাচ্ছে না শরিক দলগুলো। যদি শেষ পর্যন্ত বিএনপি নির্বাচনে না আসে তাহলে বেশি আসনের জন্য দাবি তুলবে তারা।

জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলের সমন্বয়ক ও মুখপাত্র আমির হোসেন আমু কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘এখন আমাদের নিজেদের আর বসার কিছু নেই। শরিক দলের নেতাদের সঙ্গে নেত্রী (শেখ হাসিনা) সরাসরি বসবেন। তফসিল অনুযায়ী হাতে সময় কম। নেত্রী আমাকে দ্রুত জানাবেন বলেছেন। আবার তিনি সরাসরি তাঁদের সঙ্গে কথা বলেও বৈঠকে বসতে পারেন।’

আওয়ামী লীগের নির্বাচনী শরিক বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘বিএনপি নির্বাচনে এলো কি এলো না, সেটা বিবেচনা করে আমরা পরিকল্পনা করছি না। আমরা আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোটবদ্ধভাবে নির্বাচন করব। জোটের বাইরে বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি নির্বাচনে ৩০ জন প্রার্থী দেবে।’

এক প্রশ্নের জবাবে রাশেদ খান মেনন বলেন, ‘আলোচনায় বার্গেনিং হবে। মনের কথা আলোচনার জন্য তুলে রাখতে চাচ্ছি। আওয়ামী লীগের সঙ্গে আলোচনায় সুযোগ বুঝে নিজেদের অবস্থান তুলে ধরা হবে।’    

ছোট দলগুলো চায় বড় সমর্থন

বড় দলের বাইরে এবার নির্বাচনে আসছে সদ্য নিবন্ধন পাওয়া দলগুলো। এসব দল প্রকাশ্যে বা গোপনে নৌকার ছায়া চায়। তাদের দল থেকে যে জায়গায় প্রার্থী দেওয়া হবে সেখানে নৌকা থেকে যেন প্রার্থী দেওয়া না হয় তেমন আলোচনাও রয়েছে।

গত রবিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করেছেন তৃণমূল বিএনপির মহাসচিব তৈমূর আলম খন্দকার। জানতে চাইলে গতকাল তৈমূর আলম খন্দকার কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে আমরা একটি অংশগ্রহণমূলক পার্লামেন্টের নিশ্চয়তা চেয়েছি। উনি (শেখ হাসিনা) আমাদের আশ্বস্ত করেছেন। আমরা ৩০০ আসনে নির্বাচন করার পরিকল্পনা করছি। বাংলাদেশ পিপলস পার্টি, ১৫ ইসলামী দলসহ অন্য যারা আমাদের সঙ্গে নির্বাচনে আসবে তাদের নিয়ে আগামীকাল (আজ) বৈঠক আছে। সেখানে নিজেদের আসন বণ্টন নিয়ে কথা হবে।’ 

তবে এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের ভাবনা এখনো জানা যায়নি। দলের পক্ষে ছোট দলগুলোকে সমর্থন দেওয়ার বিষয়ে কথা বলা হচ্ছে না। আবার সমঝোতায় ছাড় দেওয়ার বিষয়টিও নাকচ করা হচ্ছে না।

আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল একজন নেতা কালের কণ্ঠকে বলেন, এখনো পরিষ্কার করে বলার সময় আসেনি। আগে নিজেদের দলের মনোনয়ন চূড়ান্ত হবে। তারপর দলীয়ভাবে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। 

শক্তিশালী স্বতন্ত্র ও বিদ্রোহীরা পাবে মৌন সমর্থন

গত চার দিনে তিন হাজার ৩৬২ জন আওয়ামী লীগের মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন। সবার লক্ষ্য নৌকা প্রতীকে নির্বাচন করা। কিন্তু যাঁরা দলের মনোনয়ন পাবেন না এমন অনেকেই শক্তিশালী বিদ্রোহী প্রার্থীতে পরিণত হতে পারেন—এমন ভাবনাও আছে আওয়ামী লীগের মধ্যে।

গত নির্বাচনে সারা দেশে এক হাজার ৮৪৮ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। যার মধ্যে ১২৮ জনই ছিল স্বতন্ত্র। দলের বিদ্রোহীর বাইরে স্থানীয় পর্যায়ে জনপ্রিয়তা রয়েছে এমন ব্যক্তিও শক্তিশালী প্রতিদ্বন্দ্বী হতে পারেন ভোটের মাঠে।

আওয়ামী লীগের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী, বিদ্রোহী প্রার্থী হলে দল থেকে বহিষ্কার হতে হবে। তবে ভোটে জিতে আসার সম্ভাবনা রয়েছে এমন বিদ্রোহী প্রার্থীরা শাস্তি পেলেও নির্বাচনে পাবেন দলের মৌন সমর্থন। একই সঙ্গে নির্বাচনকে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ করতে যেখানে নৌকার প্রতীক নেই সেখানে শক্তিশালী স্বতন্ত্র প্রার্থীদের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগের কোনো অবস্থান থাকবে না।

সম্পর্কিত সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এছাড়াও পরীক্ষা করুন
Close
Back to top button

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker