ছোটবেলার স্কুলজীবনে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকলে তা ঈদের দিনের মতো মনে হতো। ছুটি পেলেই হৈ-হুল্লোড়, বন্ধুদের সাথে খেলাধুলা, নানু বাড়ি বেড়াতে যাওয়া সহ আরো কতো মজার ছক আঁকা হতো সেই বন্ধকে ঘিরে তার ইয়ত্তা ছিল না। মাজে মাঝে স্কুল পলায়নও করতাম এইসব মজার ব্যাপারগুলোর জন্য। কিন্তু তা ছিল নিছক দু-একদিনের জন্য। বেশি বন্ধ পেলে স্কুলে ফেরার জন্য মনটা ছটফট করতো, ভেতরটা উদাস উদাস লাগতো।
বৈশ্বিক মহামারী করোনায় স্কুল-কলেজ বন্ধ আছে প্রায় দেড় বছর। শুরুর দিকটায় বন্ধের দিনগুলি আমোদে কাঁটলেও পরবর্তী সময়গুলো শিক্ষার্থীদের কাছে এটি বিরক্তি বৈ আর কিছু মনে হয়নি। কথায় বলে -অতি মিঠাও যেমন ভালো না তেমনি অতি তিতাও নয়, বিষয়টি সেরকম। আবার “চিড়ে দিয়ে যেমন ভাতের ক্ষুধা মেটে না তেমনি বিদ্যালয়ে না গিয়ে শুধু বাসায় বসে অনলাইনে ক্লাস করলে বা এসাইনমেন্ট করলেই পড়ালেখা হয় না”। আমরা জাত হিসেবে তেমন একটা সৌখিন নই বলে মোটের উপর বাধ্য না করলে আমরা পড়াশুনায় মোটেও মনোনিবেশ করতে ইচ্ছুক নই, তাই পড়াশোনা যা হবার আমাদের কোমলমতিদের তাই হচ্ছে।
তাছাড়া দীর্ঘ বন্ধের ফলে আড্ডার পরিমানও অতিরিক্ত বেড়েছে যা আমাদের সমাজের জন্য মঙ্গলময় না। সারাদিন বন্দিদশায় থাকলে মানসিক ইনফ্যালেন্টাইল গ্যাস্ট্রিওলোজিতে ভোগা আমাদের জন্য বিচিত্র কিছু নয়, তাই বাচ্চারা বাহিরে যেতে চাইলে না করারও উপায় থাকে না। ফলে কোমলমতি শিক্ষার্থীরা আড্ডায় পড়ে নেশা সহ নানা অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে। বাড়ছে মারামারি, ইভটিজিং, কিশোরগ্যাং, যৌন অপরাধ সহ নানা কিশোর অপরাধ। আর এতে চরম হতাশাগ্রস্ত অভিভাবক মহল।
দীর্ঘ বন্ধে সবাই এখন বিরক্ত, রুষ্ট। তাছাড়া দেশের সকল সেক্টর যখন খোলা ও স্বাভাবিক হয়ে আসছে তখন কেও চায় না শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকুক। পরিবহন, সংস্কৃতি, যাত্রা, থিয়েটার, সিনেমা, রাজনীতি, ভোটাভুটিসহ সকল প্রাতিষ্ঠানিক দ্বার যেখানে উন্মুক্ত সেখানে স্কুল কলেজ বন্ধ থাকার কোন যৌক্তিকতাও নেই। তাই সুশীল সমাজের প্রতিনিধি হিসেবে আমার অভিমত দেশের সকল স্কুল কলেজ পূনরায় চালু করা হোক, গতিশীল করা হোক দেশের স্বাভাবিক শিক্ষাব্যবস্থা।
এ বছরের শুরু থেকে সরকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার বারবার ঘোষণা দিয়েও নানা অযুহাতে তা বন্ধ রেখেছে, যা দেশের সাধারণ মানুষ বা সুশীল সমাজ কেও স্বাভাবিকভাবে মেনে নেয়নি। এ নিয়ে গণমাধ্যমসহ নানা জায়গায় সরকারের প্রতি ক্ষোভ ফেটে পরেছে। নানা জায়গায় আন্দোলনও হয়েছে। তারপর করোনার দ্বিতীয় ঢেও আসায় আবারও তা পিছিয়ে যায়।
করোনায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় সবচেয়ে বেশ ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও তাদের শিক্ষক কর্মচারীবৃন্দ। সরকারি আধা-সরকারি ও স্বায়ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠান সরকারি বেতন ভাতা পেলেও চরম দূরাবস্থায় কাটিয়েছে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো। দেশের কিন্ডার গার্টেন, প্রাইভেট স্কুল কলেজের সাথে সম্পৃক্ত প্রায় দু’লক্ষাধিক শিক্ষক ও কর্মচারী। ইতিমধ্যে এসব প্রতিষ্ঠানের অনেককেই মানবেতর জীবন যাপন সহ নিম্নমানের কাজের সাথে সম্পৃক্ত হতে দেখা গিয়েছে। কেও কেও রিক্সা, অটোরিক্সা চালানোর কাজও নিয়েছে।
সরকার অনেকবারই ঘোষণা দিয়েও বন্ধ রেখেছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। তবে এবারের ঘোষণা অন্যবারের চেয়ে শক্ত বলেই মনে হয়েছে। ফলে শিক্ষক, কর্মচারীদের মনে যেমন আশা সঞ্চার হয়েছে তেমনি শিক্ষার্থী অভিভাবক মহলও আশান্বিত হয়েছে।
তাই ব্যক্তিগতভাবে আমার অভিমত যে, সরকারের বর্তমান ঘোষণাটি যেন নতুন করে কোন অযুহাত বা প্রতিবন্ধকতা দ্বারা পরিবর্তন না হয় সেদিকে সংশ্লিষ্ট মহলের প্রতি বিশেষ অনুরোধ রইলো।
শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলুন,
কোমলমতিদের বাঁচান।