মতামত

বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীর আমন্ত্রণে টাঙ্গাইলে কাজী নজরুলের আতিথ্য গ্রহণ

স্বাধীন বাংলাদেশে কবি কাজী নজরুল ইসলাম টাঙ্গাইল এসেছিলেন বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীর আমন্ত্রণে।তিনি এসেছিলেন জাহাঙ্গীর স্মৃতি সেবাশ্রমে অতিথি হয়ে।অবশ্য এর আগেও তিনি টাঙ্গাইল এসেছেন। এসেছিলেন ভবঘুরে হয়ে ঘরের সন্ধান করতে।ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যেই মানুষটিকে দেখে বৈরাগ্য থেকে ঘর কাতর হয়েছিলেন,যেই মানুষটিকে দেখার অপরাধে চিরদিনের জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে নিষিদ্ধ হয়েছিলেন,এসেছিলেন সেই মানুষটির সন্ধান করতে।দীর্ঘদিনের লালিত্য ব্যাথার উপশম করতে উঠেছিলেন করটিয়ার নামদার কুমুল্লি গ্রামের ফজিলাতুন্নেছাদের বাড়িতে।দু’দিন অবস্থানও করেছিলেন।পরম মমতায় ফজিলাতুন্নেছার মা যথেষ্ট আদর আপ্যায়নও করেছিলেন।কিন্তু ফজিলাতুন্নেছা মোটেও কবির আগমনে খুশি ছিলেন না।উচ্চাকাঙ্খী ফজিলাতুন্নেছা কবির প্রেমকে প্রশ্রয় দেওয়ার জন্য প্রস্তুত ছিলেন না মোটেও।তাই কবির আগমণ গৃহের অন্যদের ধন্য করলেও তার বিরক্তির কারণ হন।তাই নিজেকে কবি থেকে দূরে রাখার চেষ্টা করেন।তবুও এক সকালে মায়ের অনুরোধে জলখাবার দিতে গেলে কবি একদৃষ্টে চেয়ে থাকেন তার মুখ পানে।এতে রমনী মহা বিরক্ত হয়ে বাজে মন্তব্য করলে সাথে সাথেই কবির মুখ ফেটে বের হয় তার সৃষ্ট অমর কাব্য,”তুমি সুন্দর তাই চেয়ে থাকি, সেকি মোর অপরাধ প্রিয়”।

কবি সে বার যখন টাঙ্গাইল এসেছিলেন তখন ছিলেন সম্পূর্ণ সুস্থ,ছিল মুখে বোল,ছিল অফুরন্ত প্রেমোচ্ছটায় ভরা দীপ্তময় পৌরুষ।এবার যখন এলেন তখন দুরারোগ্য ব্যধিতে জরাজীর্ণ মুখাবয়ব,তাতে ছিলো না কোনো কাব্যের ভাষা,ছিল না প্রাণোচ্ছলতা,ছিল শুধু বিষাদে ভরা দুঃখী জীবনের প্রতিচ্ছায়া। সেদিন তার সফর সঙ্গী হয়ে টাঙ্গাইলে এসেছিলেন নাতনী খিলখিল কাজী।ঢাকা থেকে বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী নিজ গাড়ি বহর নিয়ে প্রটোকল দিয়ে এনেছিলেন।সরাসরি এসেছিলেন বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী প্রতিষ্ঠিত জাহাঙ্গীর স্মৃতি সেবাশ্রমে।তাদের স্বাগত জানাতে নজরুল সেনা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অসংখ্য ছাত্র ও শিক্ষকেরা এসেছিলেন ফুল হাতে নিয়ে।কবিকে একনজর দেখতে জড়ো হয়েছিল টাঙ্গাইলের নানা পেশা ও শ্রেণির হাজারো মানুষ। যদিও কাজী নজরুল ইসলামের আগমনের খবর তেমন ঢালাওভাবে প্রচার করা হয়নি আর এখনকার মতো তখন রেডিও টিভি,ফেসবুক এসব ছিল না তবুও বিদ্রোহী কবির আগমনের খবর জানতে পেরে মানুষ পঙ্গপালের মতো ছুটে এসেছিল এক নজর দেখতে। কবি খুবই অসুস্থ শরীর নিয়ে এখানে এসেছিলেন।তাই সেবাশ্রমে বেশিক্ষণ ছিলেন না।এসে বসেছিলেন মীর মোশারফ হোসেনের কাছাড়ি ঘরে।জাহাঙ্গীর স্মৃতি সেবাশ্রম একসময় দেলদুয়ার এস্টেটের প্রশাসনিক দফতর ছিল।আর এখানকার নায়েব ছিলেন বাংলার কালজয়ী উপন্যাসিক মীর মোশারফ হোসেন।তিনি এই কাছাড়িতে বসেই তার কালজয়ী উপন্যাস ‘বিষাদ সিন্ধু ‘ রচনা করেছেন।তিনি যে ঘরটিতে বসতেন সে ঘরেই জাতীয় কবিকে আপ্যায়ন করানো হয়।সে আপ্যায়নে আমার পিতা জনাব মো. লালমিয়া সব দায়ীত্ব পালন করেন।অতঃপর আপ্যায়ন শেষে এক জাঁকজমকপূর্ণ সংবর্ধনার মাধ্যমে টাঙ্গাইলের আপামর জনতা বাংলার গণমানুষের কবি বিদ্রোহী কবিকে সম্মান জানান ও কাছ থেকে অবলোকনপূর্বক ধন্য হোন।টাঙ্গাইল গর্বিত হয় জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানকে নিজের কাছে আনতে পেরে। পরিশেষে আমার প্রাণের কবি,আমার ভালোবাসার কবি,আমার আদর্শের কবি, যাকে আমি হৃদয়ের গভীর থেকে উপলব্ধি করি গভীরভাবে,যার রূহানী তাওয়াল্লুক সদা আমার হৃদে বাজে,আজকে তার এই মহাপ্রয়াণ দিবসে তার রূহের শান্তি কামনা করছি।তার রূহে শান্তি বর্ষণ হোক আবাদুল আবাদ তক।আমীন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker