দড়িতে বাঁধা ভাঙা দরজা। নেই লুকিং গ্লাস, জানালার কাচ। হর্নের বদলে হাত দিয়ে আঘাত করা হয় টিনে। জীর্ণ কাঠের পাটাতন, তার ওপর প্লাস্টিকের আবরণ। এভাবেই তৈরি হয়েছে বসার আসন। সেই আসনের নিচে অরক্ষিতভাবে রাখা আছে গ্যাসের সিলিন্ডার। অনেক সময় এই যান চালাতে চাবিও লাগে না। দুই তারের ঘষাই যথেষ্ট। নেই চালকের লাইসেন্স, বৈধ রুট পারমিট।
রাজধানীর মহল্লা থেকে শুরু করে প্রধান সড়কগুলোতে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে এই যানবাহন। এটি হিউম্যান হলার হলেও ‘লেগুনা’ নামেই বহুল পরিচিত। ২০১৮ সালের ৪ সেপ্টেম্বর থেকে রাজধানীর প্রধান সড়কগুলোতে লেগুনার চলাচল নিষিদ্ধ করে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)। কিন্তু লেগুনার চলাচল বন্ধ হয়নি। লেগুনাসহ ছোট যান চলাচলের অনুমতি বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) দেয় না। অনুমতি দেওয়ার এখতিয়ার রয়েছে আঞ্চলিক পরিবহন কমিটির (আরটিসি)। ঢাকা মেট্রো আঞ্চলিক পরিবহন কমিটির প্রধান ডিএমপি কমিশনার।
জানতে চাইলে ডিএমপি কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক বলেন, ‘আমি আসার পর আরটিসির কোনো বৈঠক হয়নি। এর আগে সিদ্ধান্ত কী ছিল, তা জানি না। আমার সময় কোনো লেগুনার অনুমতি দেওয়া হয়নি।’
গুলিস্তান থেকে যাত্রাবাড়ী, শনির আখড়া, চকবাজার, লালবাগ, নিউ মার্কেট, চাঁদনী ঘাট, হাজারীবাগ, পোস্তা, আজিমপুরসহ ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) ভবন (নগর ভবন) থেকে পুরান ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় লেগুনা চলাচল করে। ফার্মগেট থেকে বিজিবি ১ নম্বর গেট, জিগাতলা, মিরপুর-১০ নম্বর, মানিক মিয়া এভিনিউ হয়ে নিউ মার্কেট, ট্যানারি মোড় থেকে নিউ মার্কেট, মোহাম্মদপুর থেকে শ্যামলী, ৬০ ফুট রাস্তার মিরপুর প্রান্ত থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত লেগুনা চলে।
সরেজমিনে গুলিস্তান থেকে বিভিন্ন রুটে চলা লেগুনাগুলোতে দেখা যায়, চালকের আসনের সামনে স্টিয়ারিং ছাড়া একটি মোটরযানে যা থাকা দরকার তার কিছুই নেই। কিছু লেগুনার সামনে প্লাস্টিক বা কাচের বদলে লাগানো আছে পলিথিন। লুকিং গ্লাস নেই। দুই পাশের দরজার হাতল নেই। আটকানোরও নেই ব্যবস্থা। তাই দড়িই ভরসা। ইঞ্জিন চালু করার জন্য নেই চাবি। দুটি তার একটি আরেকটির সঙ্গে ঘষেই কাজটি করেন চালক। থাকে না হর্ন। দরজায় চালকের হাতের আঘাতের শব্দেই অন্যরা বুঝে যায়, আসছে লেগুনা। গাড়ির সামনে দুটি ফুটো থাকে ঠিকই, কিন্তু তাতে থাকে না ওয়াইপার। সামনে চালকের সঙ্গে দুজন যাত্রী বসানোয় একজনের রানের ফাঁকে থাকে গিয়ার। যারা লেগুনা চালায় তাদের বেশির ভাগেরই ড্রাইভিং লাইসেন্স নেই। অনেক চালকের বয়স ১৮ বছরের নিচে।
Discover more from MIssion 90 News
Subscribe to get the latest posts to your email.