ছুটি না পেয়ে অসুস্থ হয়ে ফ্লোরে পড়েই শ্রমিক জাহিদুল ইসলামের (২৭) মৃত্যু হয়। গাজীপুরের শ্রীপুরের সীমান্তবর্তী বাঘের বাজার এলাকার গোল্ডেন রিফিট গার্মেন্টস কারখানার বিরুদ্ধে অসুস্থ শ্রমিককে ছুটি না দেওয়ার অভিযোগ করেন ওই কারখানার শ্রমিকরা।
গতকাল সোমবার (৪ জুলাই) বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে কারখানায় এ ঘটনা ঘটে। গাজীপুর শিল্প পুলিশের সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) মোনায়েম হোসেন বিষয়টি আরটিভি নিউজকে নিশ্চিত করেছেন।
নিহত জাহিদুল ইসলাম কুড়িগ্রাম জেলার নাগেশ্বরী উপজেলার চন্ডিপুর গ্রামের মোহাম্মদ আলীর ছেলে। তিনি গোল্ডেন রিফিট গার্মেন্টস কারখানায় সুইং অপারেটর হিসেবে চাকরি করত।
কারখানার একাধিক শ্রমিকেরা জানান, গত চার থেকে পাঁচদিন ধরে জাহিদুল ইসলাম শারীরিকভাবে অসুস্থ ছিলেন। বারবার ছুটি চাইলেও কারখানার লাইন চিফ কামরুল ইসলাম জানায় প্রশাসন বিভাগ থেকে ঈদের আগে কাউকে ছুটি দেওয়া হবে না। কারখানা কর্তৃপক্ষ অসুস্থ শরীর নিয়ে তাকে কাজ করতে বাধ্য করেন।
গতকাল সোমবারও অসুস্থতা নিয়ে জাহিদুল ইসলাম কারখানায় কাজে যোগ দেয়। দুপুর সাড়ে ১২টায় অসুস্থতার জন্য পুনরায় লাইন চিফ কামরুলের কাছে ছুটি চাইলে শিপমেন্টের চাপ আছে বলে ছুটি দেওয়া যাবে না বলে জানিয়ে দেওয়া হয়। দুপুরে বিরতির পর জাহিদ কারখানায় এসে পুনরায় অসুস্থ হয়ে পড়ে। পরে আবার লাইন চিফ কামরুলের কাছে ছুটি চাইতে গেলে কামরুল জানায় মরে গেলেও ছুটি দেওয়া যাবে না। অসুস্থ শরীর নিয়েই জাহিদ উৎপাদন ফ্লোরে গিয়ে পুনরায় কাজে যোগ দেয়। একপর্যায়ে সে কাজ করার সময় বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে ফ্লোরে পড়ে যায়। পরে তার সহকর্মীরা তাকে উদ্ধার করে কারখানার মেডিকেল সেন্টারে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে বাইরে কোনো হাসপাতালে নেওয়ার পরামর্শ দেয়। পরে কারখানার প্রশাসন সহকারী (টাইম কিপার) মনির হোসেনকে সঙ্গে নিয়ে মাওনা আলহেরা হাসপাতালে পাঠায় কারখানা কর্তৃপক্ষ। সহকর্মীরা জাহিদের মৃত্যুর খবর শুনে কাজ বন্ধ করে কারখানার বাহিরে এসে বিক্ষোভ করে পাশের ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে অবস্থান নেওয়ার চেষ্টা করে।
মাওনা আলহেরা হাসপাতালে জরুরি বিভাগের চিকিৎসক আলীম বিশ্বাস জানান, গোল্ডেন রিফিট গার্মেন্টস কারখানার সুইং অপারেটর জাহিদুল ইসলামকে মৃত অবস্থায় এখানে আনা হয়েছে। গাজীপুর শিল্প পুলিশের সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) মোনায়েম হোসেন আরটিভি নিউজকে জানিয়েছেন, খবর পেয়ে শিল্প পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে নিহত জাহিদের পাওনা টাকা ও দাফন কাফনের জন্য সব ব্যবস্থা করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে শ্রমিকদের বুঝিয়ে মহাসড়ক থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়।
কারখানার মানবসম্পদ ব্যবস্থাপক (এডমিন ম্যানেজার) আরিফুর রহমান রাহাত জানান, জাহিদুল ইসলাম কয়েকদিন যাবত শারীরিক অসুস্থতা নিয়ে কাজ করতেছিল। সোমবার বিকেল সাড়ে তিনটার দিকে সে কাজ করা অবস্থায় ফ্লোরে পড়ে যায়। সহকর্মীরা তাকে উদ্ধার করে কারখানার মেডিকেল সেন্টারে নিয়ে যায়। পরে চিকিৎসকের পরামর্শে জাহিদকে মাওনা চৌরাস্তা আলহেরা হাসপাতালে নিয়ে গেলে ওই হাসপাতালের চিকিৎসক জাহিদকে মৃত ঘোষণা করেন।
Discover more from MIssion 90 News
Subscribe to get the latest posts to your email.