জাতীয়

অবশ্যই যন্ত্র দিয়ে নাট বল্টু খোলা হয়েছে: সিআইডি

পদ্মা সেতুর রেলিংয়ের নাট-বল্টু কোনো যন্ত্রাংশ ছাড়া শুধু হাত দিয়ে খোলার কথা নয় বলে দাবি করে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) বলেছে, আটক বায়েজিদ তালহা আগেই যন্ত্র দিয়ে নাট খুলে পরে খালিহাতে সেটি খোলার ভিডিও করেছেন বলে ধারণা করছে তারা।

সোমবার দুপুরে রাজধানীর মালিবাগে অবস্থিত সিআইডির কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে সিআইডির সাইবার ইন্টেলিজেন্স অ্যান্ড রিস্ক ম্যানেজমেন্ট বিভাগের বিশেষ পুলিশ সুপার রেজাউল মাসুদ এসব কথা বলেন।

তিনি বলেন, বায়েজিত তালহা পরিকল্পিতভাবেই এই কাজটি করে থাকতে পারে। তাকে পুরো ঘটনা সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। এক্ষেত্রে কোন ধরনের রাজনৈতিক পরিচয় নয়, শুধু অপরাধের গুরুত্ব সবচেয়ে বেশি বিবেচনায় নেয়া হয়েছে।

রেজাউল মাসুদ আরও বলেন, তিনি বলেন, কোনো যন্ত্রাংশ ছাড়া শুধুমাত্র হাত দিয়ে পদ্মা সেতুর নাট-বল্টু খোলা সম্ভব নয়। এটি একটি অন্তর্ঘাতমূলক কাজ। পদ্মা সেতুর যারা নাট-বল্টু খুলেছে তাদের আইনের আওতায় আনা হবে।

এর আগে পদ্মা সেতুর রেলিংয়ের নাট খুলে টিকটক ভিডিও তৈরি করে ভাইরাল হওয়া ৩০ বছর বয়সি যুবক বায়েজিদ তালহাকে বিকালে রাজধানীর শান্তিনগর আটক করা হয়। তার বাড়ি পটুয়াখালীতে। বর্তমানে ঢাকার শান্তিনগরে থাকে। তার বিরুদ্ধে মামলা তদন্ত করবে সিআইডি।

গোয়েন্দা কর্মকর্তা মাসুদ জানান, বায়েজিদকে সিআইডি কার্যালয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। কেন তিনি পদ্মা সেতুর নাট খুললেন, তা জানতে চাওয়া হবে। তার বিরুদ্ধে মামলার প্রস্তুতি চলছে। সোমবার এ বিষয়ে সংবাদ সম্মেলনে বিস্তারিত জানানো হবে।

তিনি বলেন, রেজাউল মাসুদ বলেন, পদ্মা সেতুতে দাঁড়ানো বা ছবি তোলা নিষেধ হলেও প্রথম দিনে শিথিলতার সুযোগে বায়েজিদ তালহা নামের এক যুবক অসৎ উদ্দেশে খুলে নিয়েছেন পদ্মা সেতুর নাট-বল্টু যা তার নিজস্ব টিকটক অ্যাকাউন্টে ভাইরাল হয়।

তিনি আরও বলেন, তার (বায়েজিদের) কাছে এবং বাসায় তল্লাশি করে বেশকিছু ডিভাইস উদ্ধার করা হয়েছে যেগুলো এই মামলাটির সাথে সংশ্লিষ্ট। এই ঘটনায় তার উদ্দেশ্য মূলত কী ছিল, তার ওপর নির্ভর করবে সে দোষী কিনা।

সিআইডির এই কর্মকর্তা বলেন, তার অতীত অপরাধ-কর্মকাণ্ডসহ সবকিছু বিবেচনায় নিয়েই তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সবকিছু তদন্ত করা হবে। অপরাধীরা অপরাধ করার পর যেসব কর্মকাণ্ড করে এই যুবকও তাই করেছে। তার গিল্টি মাইন্ড রয়েছে।

এই নাট-বল্টু কোনোভাবেই হাত দিয়ে খোলার কথা নয় উল্লেখ করে মাসুদ বলেন, এটি অবশ্যই কোনও ইনস্ট্রুমেন্টস (যন্ত্র) ব্যবহার করে খোলা হয়েছে, তাদের কোনও পরিকল্পনা আছে। তবে আমরা এখনই এ বিষয়ে বলতে পারবো না। তদন্ত করেই সবকিছু জানানো হবে।

তিনি বলেন, বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় স্থাপনা পদ্মা সেতু। তার কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে বড় ধরনের কোনও দুর্ঘটনা ঘটতে পারতো। সেতুতে কোনও ঘটনা ঘটলে তার উচিৎ ছিল সেতু কর্তৃপক্ষ বা ওখানে থাকা পুলিশকে জানানো। কিন্তু সে সেটা করেনি। এটা অনেক বড় অপরাধ।

এই ঘটনায় ওই যুবক তিনটি অপরাধ করেছে উল্লেখ করে বলেন, সে (বায়েজিদ) মানুষের অনুভূতিতে আঘাত করেছে, রাষ্ট্রের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করেছে এবং অন্তর্ঘাতমূলক কাজ করেছে। এখানে তার একটি গিল্টি মাইন্ড আছে। এটা অপরাধ।

ঘটনার সময় তার সঙ্গে আরও একজন ছিল উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমাদের কাছে অনেক তথ্য আসছে, এখন পর্যন্ত আমরা দুজনের সম্পৃক্ততা পেয়েছি। হয়তো আরও সম্পৃক্ততা আসতে পারে। তাই আমরা এখনই নির্দিষ্ট করে বলতে পারি না কতজন জড়িত। ভিডিওটি আপলোড হওয়ার এক ঘণ্টার মধ্যে আমাদের মনিটরিংয়ে চলে আসে। আমরা এসব মনিটরিং করছি।

সিআইডির এই কর্মকর্তা বলেন, ভিডিওটি মুহূর্তে টিকটকসহ অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে; যা নিয়ে বিভিন্ন অনলাইন নিউজ পোর্টালেও রিপোর্ট হয়। ভিডিওতে দেখা যায় পদ্মা সেতু নিয়ে যুবকটি তুচ্ছ তাচ্ছিল্য এবং ব্যঙ্গাত্মক অঙ্গভঙ্গি এবং হাসাহাসি করছে।

৩৪ সেকেন্ডের ভাইরাল ভিডিওতে দেখা গেছে- পদ্মা সেতুর রেলিংয়ের দুটি নাট-বল্টু খুলতে সে বলতে থাকে, এই হলো পদ্মা সেতু, আমাদের পদ্মা সেতু। দেখো আমাদের হাজার হাজার কোটি টাকার পদ্মা সেতু। এই নাট খুইলা এহন আমার হাতে।

এ সময় ভিডিও ধারণকারীকে বলতে শোনা যায়, এই লুজ দেহি, লুজ নাট, আমি একটা ভিডিও করতেছি, দেহ। আর পাশে থেকে আরেক ব্যক্তি বলেন, ভাইরাল কইরা ফালায়েন না।

এক প্রশ্নের জবাবে গোয়েন্দা কর্মকর্তা মাসুদ বলেন, অনেক তথ্য আছে, তা সবসময় পাবলিকলি বলা যায় না। তদন্তাধীন বিষয় নিয়ে এখনই মন্তব্য করা ঠিক না। অপরাধী এখন কী বলছে, তা বিবেচ্য বিষয় না। তার মোবাইলটি জব্দ করা হয়েছে। একজন অপরাধী অপরাধ করার পরে যা করে, সেই সব কাজ সে করেছে।

সম্পর্কিত সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker