জাতীয়

ডলার ট্রিক করতে গিয়ে ধরা ১১ নাইজেরিয়সহ ১২ জন

বিদেশি গিফট আর বিনিয়োগের টোপ দেয়ার পর এবার প্রতারণার তালিকায় যোগ হলো ডলার ট্রিক। যার মাধ্যমে প্রতারিত হচ্ছেন বহু মানুষ।

অভিনব এমন প্রতারণায় জড়িত থাকার অভিযোগে ১১ জন নাইজেরিয়ানসহ ১২ জনকে গ্রেপ্তার করেছে গোয়েন্দা পুলিশ।

মহানগরের গোয়েন্দারা বলছেন, কোনোভাবেই থামছে না অবৈধভাবে বাংলাদেশে বসবাসরত আফ্রিকান নাগরিকদের প্রতারণা।

অভিনব এক ডলার তৈরির মেশিন। অল্প খরচে, স্বল্প সময়ে ডলার বানানোর এই মেশিনটি বাংলাদেশে অবস্থানরত আফ্রিকান নাগরিকদের আবিষ্কার।

যাদের প্রতারণার তালিকায় সবশেষ সংযোজন এটি। যাকে বলা হচ্ছে ডলার ট্রিক। নকল এসব ডলার অর্ধেক দামে তারা বিক্রি করছে কিছু বাংলাদেশি প্রতারকের কাছে।

লিবিয়ায় কর্মরত নারী মেরিন অফিসার হাসপাতালে শয্যাশায়ী। তার বিপুল সম্পদ তিনি দান করতে চান। বাকশ ভর্তি ডলার।

শুধু তাই নয়, ভালোবেসে বন্ধুর নামে তিনি পাঠান মূল্যবান উপহার। তারপর প্রতারকদেরই একজন কাস্টমস কর্মকর্তা সেজে ফোন। সেই পার্সেল ছাড়িয়ে নিতে দিতে হবে টাকা।

এসব প্রতারণার রীতিমতো বাজার খুলে বসেছে বাংলাদেশে অবৈধভাবে বসবাসরত আফ্রিকান নাগরিকরা। রাজধানীতে অভিযান চালিয়ে গ্রেপ্তার করা হয় ১১ জনকে। আর ভুয়া কাস্টমস কর্মকর্তা সাজা এক নারীও আছে এই দলে।

এ সময় তাদের কাছ থেকে একটি ডলার ট্রিক মেশিন, ১৭টি মোবাইল ফোন, দুটি ল্যাপটপ, কেমিক্যালের বোতল এবং বিভিন্ন মামলার ওয়ারেন্টের কপি জব্দ করা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (২১ এপ্রিল) দুপুরে ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার এ কে এম হাফিজ আকতার এই চক্র সম্পর্কে বিস্তারিত জানান।

তিনি বলেন, ভুয়া কাস্টমস কর্মকর্তা হলেন চাঁদনী আক্তার। বাকী সবাই বিদেশি। চক্রটির প্রধান হিসেবে কাজ করেন নাইজেরিয়ান নাগরিক হেনরি ওসিতা ওকেচুকু এবং চিসম ইমানুয়েল।

অন্যান্য বিদেশি সদস্যরা বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে বাংলাদেশি নাগরিকদেরকে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠিয়ে পূর্ব পরিকল্পিত সুন্দর আকর্ষণীয় কথার মাধ্যমে বন্ধুত্ব গড়ে তোলে।

প্রাথমিকভাবে ওকেচুকু’র ডিভাইসে পাঁচটি ফেসবুক অ্যাকাউন্ট এবং চিসমের ডিভাইসে ৩২টি ফেসবুকের অ্যাকাউন্টের তথ্য পাওয়া গেছে।

হাফিজ আক্তার বলেন, উপহার প্রতারণা, ব্যবসায়িক পার্টনার ও বিনিয়োগের কথা বলে প্রতারণা ও ডলার ট্রিক বা ডলার ব্যবহার উপযোগী করার মেশিন দেখিয়ে প্রতারণা করে থাকে চক্রটি।

তারা ভুয়া ডলার বাক্স উল্লেখ করে একটি মেশিন দেখায়। বাক্সে বিভিন্ন ইন্টারন্যাশনাল বড় বড় ব্যাংকের সিলযুক্ত ডলার ব্যবহার উপযোগীর কথা বলে প্রতারণা করা হয়।

সুকৌশলে তারা দুই একটি ডলার ব্যবহার উপযোগী করেছে এমন ভেলকি দেখায়। এরপর তাদের কাছে বিপুল পরিমাণ ডলার আছে বলে জানায়।

সেই ডলারের সমপরিমাণ টাকা পাওয়া গেলে সেসব টাকা ও ডলার একই মেশিনের মধ্যে কয়েক ঘণ্টার জন্য রেখে দিলে টাকাগুলো ব্যবহার উপযোগী ডলার হয়ে যাবার কথা বলে।

এই প্রলোভনে তাদের হাতে টাকা তুলে দিলেই তা নিয়ে সটকে পড়তেন চক্রের সদস্যরা। আর এভাবেই একের পর এক ডলার ট্রিক করে যাচ্ছিলো চক্রটি।

প্রতারণার পাশাপাশি বিশেষত এই আফ্রিকান নাগরিকরা ভিজিট এবং বিজনেস ভিসা নিয়ে বাংলাদেশে এসে পরবর্তীতে অবৈধভাবে অবস্থান করে।

মাদক চোরাচালানসহ মাদক সেবন, মাদক ব্যবসা, অন্যান্য অবৈধ দ্রব্য চোরাচালানের কাজ করে। অপরাধ কার্যক্রমে প্রাপ্ত অর্থ তারা হুন্ডির মাধ্যমে নিজের দেশে পাচার করে থাকে।

তারা যে সব এলাকায় বসবাস করে সেখান পরিবেশ নষ্ট করে। অনেক সময় প্রতিবেশীদের সঙ্গে বিশৃঙ্খল আচরণ করে থাকে।

অনেক বাড়ির মালিক বেশি ভাড়ার আশায় তাদেরকে বাসা ভাড়া দেয়। প্রতারকরা বেশি ভাড়া দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে ভাড়া বকেয়া রেখে কৌশলে বাসা পরিবর্তন করে থাকে।

এছাড়াও প্রতারকরা বিভিন্ন বাংলাদেশি মেয়েদেরকে অল্প সময়ের জন্য বিয়ের কথা বলে তাদের সাথে সম্পর্ক স্থাপন করে এবং পরবর্তীতে তাদেরকে ছেড়ে চলে যায় বলেও অভিযোগ রয়েছে।

এর আগেও চক্রের সদস্যরা গ্রেপ্তার হয়েছে। কিন্তু, জামিনে বেরিয়ে আবারও তারা একই ধরনের অপরাধে জড়িয়ে পড়ে।

সম্পর্কিত সংবাদ

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

এছাড়াও পরীক্ষা করুন
Close
Back to top button

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker