বিদেশ থেকে বাংলাদেশে আসা যে কোন যাত্রীকে বিমানবন্দরে দেখাতে হবে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে পাওয়া হেলথ ডিক্লারেশন কার্ড। সরকারি ওয়েবসাইট থেকে ফর্ম পূরণ করে এই ঘোষণা দিতে পারবেন বিদেশ থেকে আগতরা।
ওয়েবসাইটেই পাওয়া যাবে কিউআর কোডযুক্ত একটি কার্ড, যা বাংলাদেশ বিমানবন্দরে দেখানো বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। বুধবার এক প্রজ্ঞাপনে এই তথ্য জানিয়েছে বাংলাদেশর বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ।
২০১৯ এর ডিসেম্বরে চীন থেকে শুরু হওয়া করোনার প্রকোপ বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়ার পর থেকেই পাল্টে গেছে পুরো বিশ্বের চালচিত্র। বিশেষ করে এক দেশের সাথে আরেক দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন হয়েছে গেলো দুই বছর।
আরও পড়ুন: নিউমার্কেটে শিক্ষার্থী-ব্যবসায়ী সংঘর্ষে তিন মামলা, আসামি কয়েকশ’
করোনা সংক্রমণের প্রকোপ যখন চরম অবস্থায় ছিলো তখন অনেক দেশই বিভিন্ন দেশের সাথে সড়ক বা বিমানপথের যোগাযোগ বন্ধ রেখেছে। কিংবা চলাচল বজায় থাকলেও নানারকম শর্তারোপ করা হয়েছে বিভিন্ন সময়।
কখনো পিসিআর টেস্টে করোনা নেগেটিভ সনদ দেখানো কিংবা নির্দিষ্ট কোম্পানির টিকা দেয়ার বাধ্যবাধকতা রেখেছে বিভিন্ন দেশ। তবে মার্চের পর থেকে করোনার ওমিক্রণ ধরণের সংক্রমণ কিছুটা নিয়ন্ত্রণে আসার পর থেকে বিমান চলাচল স্বাভাবিক হচ্ছে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে।
বাংলাদেশেও কিছুটা ছাড় দিয়েছে বিদেশ থেকে আসা যাত্রীদের। আগে বিদেশ থেকে আসা যে কাউকে ৭২ ঘন্টার মধ্যে করা করোনার নেগেটিভ সার্টিফিকেট থাকা বাধ্যতামূলক ছিলো।
তবে সিভিল এভিয়েশন অথরিটির দেয়া নতুন প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, যারা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা অনুমোদিত যে কোন করোনা টিকার ফুল ডোজ (জনসনের এক ডোজ এবং অন্যান্য টিকার দুই ডোজ) দেয়ার সনদ থাকলে আরটি পিসিআর সনদ প্রয়োজন হবে না।
তবে ১২ বছরের নীচের বয়সী যে কারো জন্য নেগেটিভ সার্টিফিকেট থাকতে হবে। যদি কারো করোনার টিকা দেয়া না থাকে সেক্ষেত্র অবশ্যই ৭২ ঘন্টার মধ্যে করা আরটি পিসিআরে করা করোনার নেগেটিভ সনদ থাকতে হবে। সবক্ষেত্রেই যাত্রীদের যদি করোনার উপসর্গ দেখা দেয় তবে বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ আইসোলেশনের ব্যবস্থা করতে পারে।
এখন টিকার ডোজ সম্পন্ন করা সাপেক্ষে করোনা নেগেটিভ সনদ প্রয়োজন না হলেও বিদেশ থেকে আসা সবাইকে হেলথ ডিক্লারেশন সম্পন্ন করতে হবে।
অনলাইনে (এই ওয়েবসাইটে) গিয়ে যাত্রীদের রওনা দেয়ার তিনদিনের মধ্যে তাদের টিকা সম্পন্ন করার ঘোষণাপত্র জমা করতে হবে। ফর্মে বিদেশ থেকে আসা ব্যাক্তির পাসপোর্ট নাম্বারসহ ব্যাক্তিগত তথ্য দিতে হবে। যোগাযোগের ঠিকানা এবং ফোন নাম্বার দেয়ার পর করোনার কোন উপসর্গ আছে কি না এমন তথ্য জানতে চাওয়া হয়েছে ফর্মে।
কোন উপসর্গ না থাকলে করোনার টিকার সম্পূর্ণ ডোজ সম্পন্ন করা হয়েছে কি না সেই প্রশ্নের উত্তর দিলেই একটি কিউআর কোড সম্বলিত কার্ড দেখা যাবে স্ক্রীণে। কার্ডটি ডাউনলোড করে সফট কপি কিংবা প্রিন্ট কপি রাখতে হবে যাত্রীর সাথে।
যারা বাংলাদেশ বিমানবন্দর ট্রানজিট হিসেবে ব্যবহার করবেন সেই সব যাত্রীদের জন্যও এই ঘোষণাপত্র বা এইচডিএফ ফর্মটি সাথে রাখতে হবে।
বিষয়টি নিশ্চিত করার জন্য ইতিমধ্যেই বিভিন্ন এয়ার লাইন্স কোম্পানিকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ।
চলতি বছর মার্চের পর থেকেই করোনার প্রকোপ কিছুটা নিয়ন্ত্রণে আছে বিশ্বব্যাপী। গেলো এক সপ্তাহে বিশ্বব্যাপী করোনায় সংক্রমিত রোগীর সংখ্যা আগের সপ্তাহের চেয়ে কমেছে ২৫ শতাংশ।
এশিয়ায় কমেছে ৩৩ শতাংশ, ইউরোপের দেশগুলোতে ৩০ শতাংশ আর উত্তর আমেরিকায় ৯ শতাংশ। তবে শঙ্কার বিষয় হলো করোনাকে পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসা প্রথম দেশ চীনে এখন আবারও বাড়ছে করোনার সংক্রমণ।
সপ্তাহান্তে চীনে করোনা ভাইরাসে সংক্রমিত মানুষের হার বেড়েছে ১৩৮ শতাংশ। ভারতেও এক সপ্তাহের ব্যবধানে এই হার বেড়েছে ৫৫ শতাংশ। বাংলাদেশেও করোনা সংক্রমণের হার সপ্তাহান্তে বেড়েছে ৭ শতাংশ।
২০২০ এর মার্চ মাসে প্রথম বাংলাদেশে করোনার সংক্রমণ ধরা পড়ে। এরপর চার মাসব্যাপী বাড়তে থাকে এই সংক্রমণ, যা কমে আগস্ট থেকে কমতে থাকলেও বিপদসীমার নীচে নামতে সময় লাগে আরো চার মাস।
এরপর আবারও ২০২১ সালের মার্চে করোনা দাপটে বিপর্যস্ত ছিলো বাংলাদেশ যা এক মাসের মাথায় কিছুটা কমলেও আবারও ডেল্টা ধরণের উচ্চ সংক্রমণের কারণে ভয়াবহ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয় বাংলাদেশে।
অক্টোবর থেকে জানুয়ারী প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত করোনার সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে থাকলেও ওমিক্রণ ধরণের প্রভাবে আবারও বাড়তে থাকে করোনার সংক্রমণ।
যদিও এবার মৃত্যু ছিলো আগের তুলনায় অনেক কম। এই উচ্চ সংক্রমণ কমে আসে মার্চের শুরুতে। এখন দৈনিক শনাক্তের হার থাকছে এক শতাংশের কাছাকাছি।
দেশে এখন পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত হয়েছে সাড়ে উনিশ লাখেরও বেশী মানুষ। আর করোনা প্রাণ কেড়েছে ২৯ হাজারেরও বেশী মানুষের।