জাতীয়লকডাউনের খবর

অকারণে বাইরে ঘোরাঘুরি, মিরপুরে শতাধিক ব্যক্তি আটক

অনলাইন ডেস্ক:

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে সরকারের জারি করা বিধিনিষেধ অমান্য করে অকারণে ঘর থেকে বের হওয়ায় রাজধানীর মিরপুরে শতাধিক ব্যক্তিকে আটক করেছে পুলিশ। পাশাপাশি অর্ধশত যানবাহনকে মামলা দিয়েছে।

বৃহস্পতিবার (১ জুলাই) সকাল থেকে বেলা সাড়ে ১২টা পর্যন্ত মিরপুর, গাবতলী, টেকনিক্যাল, শাহআলী, পল্লবী, কাফরুল এলাকায় পুলিশ শতাধিকজনকে আটকসহ অর্ধশতাধিক যানবাহনকে মামলা দেয়। মিরপুরে দুজন ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে চলছে পুলিশের অভিযান।

বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন মিরপুর বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার আ স ম মাহতাব উদ্দিন। তিনি বলেন, বৃহস্পতিবার সকাল ৬ টা থেকে শুরু হওয়া সরকারি বিধিনিষেধ পরিপালনে মাঠে কাজ করছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

তিনি বলেন, জরুরি প্রয়োজনে যারা সড়কে বেরিয়েছেন তাদের মুখোমুখি হতে হচ্ছে পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদের। এই কঠোর লকডাউনের মধ্যেও যথাযথ কারণ ছাড়া ঘর থেকে বের হওয়ায় শতাধিক জনকে আটক করা হয়েছে মিরপুরের বিভিন্ন স্থান থেকে। পাশাপাশি দুজন ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে পরিচালিত অভিযানে অর্ধশত যানবাহনকে মামলা আওতায় আনা হয়েছে। আটকদের জিজ্ঞাসাবাদ শেষে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী কঠোর লকডাউন চলাকালে মাঠে সজাগ উপস্থিতিসহ মিরপুরে নিয়মিত টহল চেকপোস্ট পরিচালনা করবে পুলিশ।

মহামারি করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে বৃহস্পতিবার (১ জুলাই) সকাল ৬টা থেকে সারাদেশে কঠোর লকডাউন শুরু হয়েছে। যা আগামী ৭ জুলাই মধ্যরাত পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে। এই সময়ে মানুষের সার্বিক কার্যাবলী ও চলাচলে বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে।

এর আগে বুধবার (৩০ জুন) কঠোর বিধি-নিষেধ ও নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে সরকার। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে জারি করা প্রজ্ঞাপনে সরকারি-বেসরকারি সব অফিস, যানবাহন ও দোকানপাট বন্ধ রাখার কথা বলা হয়েছে। এই সময়ে জরুরি প্রয়োজন ছাড়া বের হলে কঠোর শাস্তির মুখে পড়তে হবে বলে সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।

প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, করোনা ভাইরাসজনিত রোগের (কভিড-১৯) সংক্রমণের বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায় নিম্নোক্ত শর্তাবলী সংযুক্ত করে ১ জুলাই সকাল ৬টা থেকে ৭ জুলাই মধ্যরাত পর্যন্ত নিম্নোক্ত বিধি-নিষেধ আরোপ করা হলো-

২১ দফা নির্দেশনা

১. সকল সরকারি, আধাসরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারি অফিস বন্ধ থাকবে।

২. সড়ক, রেল ও নৌপথে গণপরিবহনসহ সকল প্রকার যন্ত্রচালিত যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকবে। অভ্যন্তরীণ বিমান চলাচলও বন্ধ থাকবে।

৩. শপিংমল/মার্কেটসহ সকল দোকানপাট বন্ধ থাকবে।

৪. সকল পর্যটনকেন্দ্র, রিসোর্ট, কমিউনিটি সেন্টার ও বিনোদন কেন্দ্র বন্ধ থাকবে।

৫. জনসমাবেশ হয় এই ধরনের সামাজিক (বিবাহোত্তর অনুষ্ঠান, জন্মদিন, পিকনিক পার্টি ইত্যাদি) রাজনৈতিক ও ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান বন্ধ থাকবে।

৬. বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট আদালতসমূহের বিষয়ে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা জারি করবে।

৭. ব্যাংকিং সেবা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক প্রয়োজনীয় নির্দেশনা জারি করবে।

৮. আইনশৃঙ্খলা এবং জরুরি পরিষেবা, যেমন কৃষি পণ্য ও উপকরণ (সার, বীজ, কীটনাশক, কৃষি যন্ত্রপাতি ইত্যাদি) খাদ্যশস্য ও খাদ্যদ্রব্য পরিবহন, ত্রাণ বিতরণ, স্বাস্থ্যসেবা, কোভিড-১৯ টিকা প্রদান, রাজস্ব আদায় সম্পর্কিত কার্যাবলী, বিদ্যুৎ, পানি, গ্যাস/জ্বালানি, ফায়ার সার্ভিস, টেলিফোন ও ইন্টারনেট (সরকারি-বেসরকারি), গণমাধ্যম (প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া), বেসরকারি নিরাপত্তা ব্যবস্থা, ডাক সেবা, ব্যাংক, ফার্মেসি ও ফার্মাসিউটিক্যালসসহ অন্যান্য জরুরি/অত্যাবশ্যকীয় পণ্য ও সেবার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অফিসের কর্মচারী ও যানবাহন প্রাতিষ্ঠানিক পরিচয়পত্র প্রদান সাপেক্ষে যাতায়াত করতে পারবে।

৯. পণ্য পরিবহনে নিয়োজিত ট্রাক-কাভার্ডভ্যান, কার্গো ভেসেল এ নিষেধাজ্ঞার আওতাবহির্ভূত থাকবে।

১০. বন্দরসমূহ (বিমান, সমুদ্র ও স্থল) এবং এ সংশ্লিষ্ট অফিস এই নিষেধাজ্ঞার আওতাবহির্ভূত থাকবে।

১১. শিল্প-কারখানাসমূহ স্বাস্থ্য বিধি অনুসরণপূর্বক নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় চালু থাকবে।

১২. কাঁচাবাজার এবং নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত উন্মুক্ত স্থানে স্বাস্থ্যবিধি মেনে ক্রয়-বিক্রয় করা যাবে। সংশ্লিষ্ট বাণিজ্য সংগঠন/বাজার কর্তৃপক্ষ ও স্থানীয় প্রশাসন বিষয়টি নিশ্চিত করবে।

১৩. অতি জরুরি প্রয়োজন ছাড়া (ওষুধ ও নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি ক্রয়, চিকিৎসা সেবা, মৃতদেহ দাফন/সৎকার ইত্যাদি) কোনোভাবেই বাড়ির বাইরে বের হওয়া যাবে না। নির্দেশনা অমান্যকারীর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

১৪. টিকা কার্ড প্রদর্শন সাপেক্ষে টিকা গ্রহণের জন্য যাতায়াত করা যাবে।

১৫. খাবারের দোকান, হোটেল সকাল ৮টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত খাবার বিক্রয় (অনলাইন/টেক ওয়ে) করতে পারবে।

১৬. আন্তর্জাতিক ফ্লাইট চালু থাকবে এবং বিদেশগামী যাত্রীরা তাদের আন্তর্জাতিক ভ্রমণের টিকেট প্রদর্শন করে গাড়ি ব্যবহারপূর্বক যাতায়াত করতে পারবে।

১৭. স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে মসজিদে নামাজের বিষয়ে ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয় নির্দেশনা প্রদান করবে।

১৮. ‘আর্মি ইন এইড টু সিভিল পাওয়ার’ বিধানের আওতায় মাঠ পর্যায়ে কার্যকর টহল নিশ্চিত করার জন্য সশস্ত্র বাহিনী বিভাগ প্রয়োজনীয় সংখ্যক সেনা মোতায়েন করবে। জেলা ম্যাজিস্ট্রেট স্থানীয় সেনা কমান্ডারের সঙ্গে যোগাযোগ করে বিষয়টি নিশ্চিত করবেন।

১৯. ম্যাজিস্ট্রেট জেলা পর্যায়ে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নিয়ে সমন্বয় সভা করে সেনাবাহিনী, বিজিবি, পুলিশ, র‍্যাব ও আনসার নিয়োগ এবং টহলের অধিক্ষেত্র, পদ্ধতি ও সময় নির্ধারণ করবেন। পাশাপাশি স্থানীয়ভাবে বিশেষ কোনো কার্যক্রমের প্রয়োজন হলে সে বিষয়ে পদক্ষেপ নেবেন।

২০. জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় মাঠ পর্যায়ে প্রয়োজনীয় সংখ্যক নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগের বিষয়টি নিশ্চিত করবে।

২১. স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক তার পক্ষে জেলা প্রশাসন ও পুলিশ বাহিনীকে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের প্রয়োজনীয় ক্ষমতা প্রদান করবেন।

সম্পর্কিত সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker