বিনোদন

পারিবারিক হৃদয়স্পর্শী গল্পে প্রশংসিত নাটক ‘প্রয়োজন’

আমরা প্রবাসীরা কতটা অসহায়, বোঝার মতো কেউ নাই। সবাই শুধু টাকা চাই। আমরা কী করি, কত কষ্ট করি, সেটা কেউই জানে না। সবাই মনে করে আমরা টাকার গাছ। ধন্যবাদ, এত সুন্দর একটা নাটক উপহার দেয়ার জন্য। দেশের অন্যতম শীর্ষ অডিও-ভিডিও প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান জি-সিরিজ’র বাংলা নাটক ইউটিউব চ্যানেলে ঈদ আয়োজনে অবমুক্ত হওয়া ‘প্রয়োজন’ নাটকটি দেখে এভাবেই নিজের প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন মিজান রহমান নামের এক প্রবাসী দর্শক।

আনোয়ার হোসেন নামের আরেক দর্শক লেখেন, নাটকটা দেখে চোখের পানি ধরে রাখতে পারলাম না। আমিও একজন প্রবাসী। ৬ বছর ধরে কুয়েত আছি।

বর্তমান নাটকের গল্প নিয়ে প্রায়ই বিভিন্ন অভিযোগ শুনতে হয়। এখনকার নাটকের গল্প- প্রেমের গল্পে সীমাবদ্ধ। ঘুরেফিরে একই মুখ, একই গল্প। তবে ধীরে ধীরে এ ধারার পরিবর্তন শুরু হয়েছে। ঈদুল ফিতর উপলক্ষে কয়েকশ নাটক নির্মিত হয়। সেসব নাটক ঘিরে হয় আলোচনা-সমালোচনা। তবে এবারের ঈদুল ফিতরে ভালো নাটকের সংখ্যা খুবই কম। এ কথা শিকার করেছেন বেশ কয়েকজন নাট্যনির্মাতাও।

বর্তমানে বেশ কয়েকজন তরুণ অভিনয়শিল্পী এরই মধ্যে অনবদ্য অভিনয় করে দর্শক মনে জায়গা করে নিয়েছেন। তাদের মধ্যে অন্যতম মুশফিক আর ফারহান ও সামিরা খান মাহি। সময়ের এই দুই জনপ্রিয় মুখ জুটি বেঁধে অভিনয় করেন পারিবারিক হৃদয়স্পর্শী গল্পে নির্মিত নাটক ‘প্রয়োজন’- এ। নাটকটি মুক্তি পাওয়ার পর থেকে প্রশংসা কুড়াচ্ছে অন্তর্জালে। প্রশংসিত হয়েছে তাদের সাবলীল অভিনয়। অবমুক্ত হওয়ার পর থেকেই লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে এর ভিউ। এই প্রতিবেদক লেখা পর্যন্ত নাটকের ভিউ ছিল…।

গল্পে দেখা যাবে, সহজ সরল যুবক শফিকুল। বিদেশে থেকে দেশে ফিরেন তিনি। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে বাড়িতে না ফেরায় চিন্তিত মাসহ পরিবারের সবাই। পরে জানা যায়, এয়ারপোর্টে লাগেজ হারিয়ে ফেলেন তিনি। এ নিয়ে হুলুস্থুল কাণ্ড। শফিকুলের চেয়ে বেশি চিন্তিত তার ঘরজামাই দুলাভাই। তিনি স্থানীয় থানায় জিডি করতে যান। পরবর্তীতে খবর আসে লাগেজ পাওয়া গেছে। শফিকুল বাড়িতে ফিরেন। সবার সঙ্গে কুশল বিনিময়ের পর সবার জন্য আনা উপহার বুঝিয়ে দেন। তবে উপহার পেয়ে সবাই খুশি হলেও অখুশি থাকেন ছোট বোনের স্বামী। তার জন্য লাইট ও মাথার উইগ আনায় বোনের সঙ্গে ঝগড়া করে তাকে রেখে এক পর্যায়ে বাড়ি ছেড়ে চলে যান।

অন্যদিকে, শফিকুলের বড় ভাইয়ের আবদার তার স্ত্রীর ভাইকে বিদেশ নিতে হবে। তবে বড় ভাইকে শফিকুল বোঝাতে চেষ্টা করেন, বিদেশে কাজের কষ্ট। তবে ভাই বুঝতে নারাজ। তা ছাড়া শফিকুলের কাছে এখন বিদেশ নেয়ার মতো টাকা না থাকায় ভাইও রাগ করেন। স্বামী-স্ত্রী দুজনেই রাগ করে কথা বন্ধ করে দেন তার সাথে। বিদেশি টাকার লোভে শারমিনের মা শারমিনকে শফিকুলের কাছে মেয়ে বিয়ে দিতে তাদের বাড়ি ঘটক পাঠায়। শফিকুল বিয়ের জন্য প্রস্তুত না থাকলেও একটা সময় পরিবারের চাওয়াতে রাজি হয়। বিয়ের তারিখও ঠিক হয়।

এদিকে, শফিকুলের বাবা সালাম তালুকদার পরিকল্পনা করেন এলাকায় নির্বাচন করবেন। যার জন্য প্রয়োজন প্রায় ১০ লক্ষ টাকা। ছেলেকে জানায় তার চাওয়ার কথা। তার কাছে ১০ লক্ষ টাকা না থাকার কথা বাবাকে জানালে তিনিও রাগ করেন। সবার প্রয়োজন মতো চাহিদা না মেটাতে পারায় হঠাৎ করেই সুখের সংসারে নেমে আসে অশান্তি। সবার হাসিখুশি মুখ মলিন হয়ে যায়। এরই মধ্যে শারমিনের মা জানতে পারে শফিকুলের কাছে টাকা নেই। শারমিনের মা সিদ্ধান্ত নেন যে, ছেলের কাছে টাকা নেই- তার কাছে সে মেয়ে বিয়ে দেবেন না।

তবে শারমিন একদিন রাতের আধারে এসে শফিকুলকে জানায়, তিনি শফিকুলকে টাকার জন্য পছন্দ করে না। সবার মুখে তার প্রশংসা শুনে মন থেকে ভালোবেসে ফেলেছেন। সবার বিরুদ্ধে গিয়ে বিয়ে করতে চান শারমিন। শফিকুল মনে মনে শারমিনকে পছন্দ করলেও পরিবারকে কষ্ট দিয়ে বিয়ে করতে পারবেন না বলে তাকে ফিরিয়ে দেয়। সংসারের এমন অশান্তি দেখে শফিকুলের মা-ও নিরুপায়। বুকে চাপা কষ্ট জমিয়ে রাখে শফিকুল। শেষ পর্যন্ত কী ঘটেছিল? শারমিন কী শফিকুলকে পেয়েছিল? নাকি শফিকুল বিদেশফেরত যান? উত্তর জানতে হলে দেখতে হবে নাটকটি।

নাটকের গল্পে তুলে ধরা হয়েছে বিদেশের মাটিতে অমানবিক কষ্টের গল্প, যা আমাদের সমাজের চেনা গল্প। তবুও পরিবার বুঝতে চায় না সেই কষ্টের কথা। তাদের চাহিদা পূরণ না করতে পারায় সুখের ঘরে নেমে আসে কালো আধার। নাটকে ব্যবহৃত ‘প্রবাসী কষ্ট’ নামের গানটি মুগ্ধ করেছে। গল্পে সমাজের বাস্তব চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। এমন গল্প আমাদেরই।

নাটকটি দেখে ওবায়দুর রহমান নামের একজন লেখেন, বাস্তববাদী-বাস্তবমুখী রুচিসম্পন্ন অভিনয় করেছেন মুশফিক আর ফারহান ভাই এবং সামিরা খান মাহি আপু।

নাটকটি নিয়ে ফারহানের ভাষ্য, প্রবাসীর কষ্ট কেউ বুঝে না। তারা পরিবারের জন্য রাতদিন পরিশ্রম করেও সবার মন জয় করতে পারে না। মেটাতে পারে না তাদের নানা প্রয়োজন। কিন্তু কখনো ভাবে না বিদেশের মাটিতে তার সন্তান কিংবা ভাই কতটুকু সুখে আছে। ঠিক মতো খেতে পারে কি না। এমন ঘটনা আমাদের সমাজে প্রতিনিয়ত দেখা যাচ্ছে। দর্শক নাটকটি এত পছন্দ করবে ভাবতে পারিনি। অল্প সময়ের মধ্যে বেশ সাড়া পাচ্ছি।

প্রবাস জীবনের গল্পের নাটকটিতে শফিকুল চরিত্রে অভিনয় করেছেন মুশফিক ফারহান আর শারমিন চরিত্রে সামিরা খান মাহি। এ ছাড়াও আরও অভিনয় করেছেন খালেদা আক্তার কল্পনা, রিফাত চৌধুরী, হিমে হাফিজ, সানজিদা মিলা প্রমুখ। নাটকের প্রতিটি চরিত্র প্রাণবন্তভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন তরুণ নির্মাতা মেহেদী হাসান হৃদয়।

সম্পর্কিত সংবাদ

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

এছাড়াও পরীক্ষা করুন
Close
Back to top button

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker