আজ থেকে প্রায় ১৮ বছর আগের কথা। নন্দিত সংগীতশিল্পী কিশোর কুমারের গাওয়া ‘এক দিন পাখি উড়ে যাবে যে আকাশে’ গানটি ইত্যাদির মঞ্চে গেয়ে রাতারাতি পরিচিতি পান আকবর। একজন সাধারণ রিকশাচালক থেকে ইত্যাদির মঞ্চে গান গেয়ে জয় করেছিলেন লাখো মানুষের হৃদয়।
এরপর নিজের মৌলিক গান ‘তোমার হাত পাখার বাতাসে’ অডিও-ভিডিও দুটোই সুপারহিট ছিল। আকবরের সঙ্গে মিউজিক ভিডিওতে মডেল হয়েছিলেন চিত্রনায়িকা পূর্ণিমা। আকবরের জীবন ভালোই চলছিল। দেশ-বিদেশের মঞ্চে গান গেয়ে জীবন কাটাচ্ছিলেন তিনি। ভালোই চলছিল তার সংসার।
কিন্তু হঠাৎ করেই কিডনির অসুখে আক্রান্ত হন আকবর। দেখা দেয় ডায়াবেটিসও। ছন্দপতন ঘটে জীবনের। অনেক বছর ধরেই দুরবস্থা চলছে। মাঝে কিছুটা ঘুরে দাঁড়ালেও ফের ভাগ্যের পরিহাসে সঙ্কটের মুখোমুখি আকবর। বর্তমানে ভালো নেই তিনি। দ্রুত চিকিৎসা করাতে না পারলে অচিরেই তাকে বরণ করে নিতে হবে পঙ্গুত্ব।
সম্প্রতি আকবরের কয়েকটি ছবি এসেছে প্রকাশ্যে। তাতে দেখা গেছে, ক্র্যাচে ভর দিয়ে হাঁটছেন গায়ক। কারও সহযোগিতা ছাড়া ওঠাবসা করতেও পারেন না তিনি। জানা গেছে, পড়ে গিয়ে মেরুদণ্ডে মারাত্মক আঘাত পেয়েছেন। যার ফলে তার শরীরে দীর্ঘমেয়াদী ঝুঁকি দেখা দিয়েছে।
আকবরকে দেখলে যে কেউ চমকে উঠবে। জরুরি প্রয়োজনে ইদানীং যে কয়বার তিনি রাস্তায় বের হয়েছেন, পরিচিতরা তার হাল দেখে হয়েছেন বিস্মিত, ভারাক্রান্ত।
আকবর গণমাধ্যমকে বলেন, ‘বিপদ আমাকে ছাড়ছেই না। আমি চলতে পারি না। আমার মেরুদণ্ডের হাড়ের মধ্যে নার্ভ ঢুকে গেছে। এমআরআই করেছিলাম। তখন জানিয়েছিল, অপারেশনে ৭০ হাজার টাকার মতো লাগতে পারে।’
এমন পরিস্থিতিতে আকবরের পাশে দাঁড়ান ঢাকাই সিনেমার মুভিলর্ড খ্যাত ডিপজল। তিনি আকবরকে ৫০ হাজার টাকার সহায়তা দিয়েছেন। গায়কের ভাষ্য, ‘ডাক্তার জানিয়েছিলেন, অপারেশনের জন্য ৭০ হাজার টাকা লাগবে। অন্যান্য খরচ মিলিয়ে ১ লাখ। সঙ্গে সঙ্গে আমি ডিপজল ভাইকে ফোন দিই। তিনি ৫০ হাজার টাকা দিয়েছেন।’
কিন্তু পরক্ষণেই আকবর জানতে পারেন, তার মেরুদণ্ডের শেষ হাড়ে সমস্যা। পরিবর্তন করতে হবে ডিস্কও। যার জন্য প্রয়োজন ৪-৫ লাখ টাকা। অন্যদিকে সংসার খরচও এই গায়কের কাঁধের ওপর। সবমিলিয়ে দিশেহারা আকবর।
এর আগে আকবরের অসহায় অবস্থার কথা জানার পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাকে ২০ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র দিয়েছিলেন। কিন্তু সেটা ছিল ৩ বছর মেয়াদী। অর্থাৎ ৩ বছর পূর্ণ হলে টাকাগুলো উত্তোলন করা যাবে। এদিকে মেয়াদ পূর্ণ হলেও সেই অর্থ তুলতে পারছেন না আকবর।
তিনি বলেন, ‘আমাকে বলা হয়েছিল, ৩ বছর পর এটা আমি ভাঙাতে পারব। তিন বছর পূর্ণ হলেও ব্যাংক সে টাকা আমাকে দিচ্ছে না। সেটা তুলতে পারলে এখন হয়তো বাঁচতে পারতাম। হয়তো ভবিষ্যতেও বেঁচে থাকবো, তবে পঙ্গু হয়ে।’