তথ্য ও প্রযুক্তি

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তায় বিনিয়োগে আগ্রহী নন ওয়ারেন বাফেট

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই নিয়ে অনেক বিজ্ঞানীই মানবজাতিকে সতর্ক করছেন। তাঁদের ধারণা, এটি মানবজাতির কল্যাণের চেয়ে বড় অকল্যাণ ডেকে আনতে পারে। এবার শঙ্কা প্রকাশ করেছেন বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ ধনী ও বিনিয়োগগুরু হিসেবে খ্যাত ওয়ারেন বাফেট। সিএনএনের সংবাদে বলা হয়েছে, নেব্রাস্কার ওমাহায় অনুষ্ঠিত বার্কশায়ার হাথাওয়ে কম্পানির বার্ষিক সাধারণ সভায় বাফেট প্রযুক্তির বিপদ নিয়ে পুরোদস্তুর সতর্কবাণী দিয়েছেন।

তিনি বলেন, ‘মানবজাতি পারমাণবিক বোমা তৈরির মধ্য দিয়ে বোতল থেকে একটি দৈত্যকে ছেড়ে দিয়েছে; এআই বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা অনেকটা সে রকম। এআইয়ে দৈত্য বোতল থেকে অনেকটা বেরিয়ে গেছে।’

‘ওমাহার জাদুকর’ হিসেবে পরিচিত ওয়ারেন বাফেট অবশ্য স্বীকার করেন, যে প্রযুক্তি দিয়ে এআই বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বানানো হয়েছে সে বিষয়ে তাঁর জ্ঞান সামান্য। কিন্তু এর সম্ভাব্য পরিণতি নিয়ে তিনি শঙ্কিত।

এআই পরিচালিত এক যন্ত্র দিয়ে সম্প্রতি তাঁর কণ্ঠ ও ছবি নকল করা হয়েছে। শুধু তা-ই নয়, এই কণ্ঠ ও ছবি এতটাই বিশ্বাসযোগ্য ছিল যে সেটা দিয়ে তাঁর পরিবারকে সহজেই বোকা বানানো সম্ভব ছিল। বাফেটের ভয়, এ ধরনের জালিয়াতি ডাল-ভাতে পরিণত হবে।

শেয়ারহোল্ডারদের উদ্দেশে বাফেট বলেন, ‘আমি এই জালিয়াতিতে বিনিয়োগ করলে দেখা যাবে, এই শিল্পের প্রবৃদ্ধির হার সর্বকালীন রেকর্ড ভঙ্গ করবে।

ওয়ারেন বাফেট এআই নিয়ে সতর্কবাণী উচ্চারণ করলেও বার্কশায়ার হাথাওয়ে কম্পানি এরই মধ্যে কর্মীদের দক্ষতা বৃদ্ধিতে এই প্রযুক্তি ব্যবহার শুরু করেছে। তাঁর উত্তরসূরি হিসেবে পরিচিত গ্রেগ আবেল বলেন, ‘আশা করা যায়, এই প্রযুক্তি ব্যবহারের অন্যান্য সম্ভাবনা আছে।’ তবে বার্কশায়ার কিভাবে এআই ব্যবহার করবে, সে বিষয়ে তিনি বিস্তারিত কিছু বলেননি।

তবে এই প্রযুক্তি মানুষের কল্যাণেও ব্যবহার করা সম্ভব বলে ওয়ারেন বাফেট মনে করেন। তিনি বলেন, এই প্রযুক্তি দিয়ে যেমন মানুষের অপরিমেয় ভালো করা যায়, তেমনি খারাপও করা যায়।

কিন্তু সেটা কিভাবে হবে সে বিষয়ে অবগত নন বলে জানান বাফেট।

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) বলেছে, এআই বিপ্লবের কারণে সারা বিশ্বের কর্মজগতে বড় ধরনের পরিবর্তন এসেছে। বিশ্বের ৪০ শতাংশ কর্মসংস্থানে তার প্রভাব পড়বে। ওষুধশিল্প থেকে শুরু করে আর্থিক খাত ও সংগীতশিল্পে এরই মধ্যে এর প্রভাব পড়েছে।

যেসব কম্পানি এআই প্রযুক্তিতে নেতৃত্ব দিচ্ছে, তাদের শেয়ারের দামও ফুলেফেঁপে উঠছে। চিপ কম্পানি এনভিডিয়ার শেয়ারের দাম গত এক বছরে ২১৫ শতাংশ বেড়েছে; মাইক্রোসফটের শেয়ারের দাম বেড়েছে ৩৪ শতাংশ। অথচ একই সময়ে বার্কশায়ারের মতো কম্পানির শেয়ারের দাম বেড়েছে মাত্র ২২ শতাংশ।

ওয়ারেন বাফেট এখন বিশ্বের অষ্টম শীর্ষ ধনী। কেউ কেউ বলেন, বাফেট যত ভালো বিনিয়োগকারী, তার চেয়েও ভালো ম্যানেজার বা ব্যবস্থাপক। বাফেট যেখানে বিনিয়োগ করেন আর যেভাবে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান চালান, সেটাকেই আদর্শ মানা হয়। আসলে বিনিয়োগকারী হিসেবে তিনি কিংবদন্তিতুল্য আর ব্যবস্থাপক হিসেবে প্রথম শ্রেণির। ফোর্বস ম্যাগাজিনের ২০২৪ তালিকা অনুযায়ী বাফেটের সম্পদের পরিমাণ এখন ১৩ হাজার ৩০০ কোটি ডলার, বাংলাদেশি মুদ্রায় যা প্রায় ১৫ লাখ কোটি টাকা, অর্থাৎ বাংলাদেশের বাজেটেরও দ্বিগুণ।


Discover more from MIssion 90 News

Subscribe to get the latest posts to your email.

সম্পর্কিত সংবাদ

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

Back to top button

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker