লালমনিরহাট

গ্লাসে ঢেলে ফেন্সিডিল বিক্রয়ের সংবাদ প্রকাশের পর পুলিশের অভিযান; স্ত্রী ও ছেলে আটক

সামাজিক গণমাধ্যম ফেসবুকে গ্লাসে ঢেলে ফেন্সিডিল বিক্রয়ের ভিডিও এবং সংবাদ প্রকাশের পর সেই ইউপি সদস্যের বাড়িতে অভিযান চালিয়ে স্ত্রী স্বপ্না ও ছেলে শাহিনকে আটক করেছে কালীগঞ্জ থানা পুলিশ।

সোমবার (১৩ জুন) সন্ধ্যায় কালীগঞ্জ উপজেলার গোড়ল ইউনিয়নের মালগাড়া গ্রাম থেকে তাদের দুইজনকে আটক করা হয়।

আটকরা হলেন- কালীগঞ্জ উপজেলার গোড়ল ইউনিয়ন পরিষদের ৪নম্বর ওয়ার্ড সদস্য বাদশা মিয়ার স্ত্রী স্বপ্না বেগম (৪৪) ও তার ছেলে শাহিন আলম (২০)। তারা মালগাড়া গ্রামের বাসিন্দা।

এর আগে রোববার (১২ জুন) “কাস্টমারদের গ্লাসে ঢেলে ফেনসিডিল খাওয়ান স্ত্রী, টাকা নেন ইউপি সদস্য” শিরোনামে একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়।

কালীগঞ্জ থানার উপ পরিদর্শক (এসআই) মৃগেন্দ্র নাথ এ তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, নিজ বাড়ির পাশের একটি বাড়ি থেকে তাদের আটক করা হয়েছে।

এ সময় তাদের কাছে ১১১টি ইয়াবা ট্যাবলেট ও ২৫ বোতল ফেনসিডিল উদ্ধার করা হয়েছে। মুলহোতা ইউপি সদস্য বাদশা মিয়া পলাতক রয়েছেন। এ ঘটনায় তাদের বিরুদ্ধে কালীগঞ্জ থানায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে।

মঙ্গলবার (১৪ জুন) সকাল ১০টায় পুলিশ সুপার কার্যালয়ে প্রেস ব্রিফিংয়ে বিস্তারিত তথ্য জানানো হবে বলে জেলা পুলিশের একটি সুত্র নিশ্চিত করেন।

স্থানীয়রা জানান, ভারতীয় সীমান্ত ঘেঁষা গ্রাম মালগাড়া চোরাচালানের আখড়া। এখানে সব থেকে বেশি পাচার হচ্ছে মাদক। বিভিন্ন ধরনের মাদকের মধ্যে স্থানীয় মাদকসেবীদের কাছে বেশি পছন্দ ফেনসিডিল। সীমান্তের নিকটবর্তী হওয়ায় দীর্ঘদিন ধরে এ ব্যবসায় জড়িত বাদশা মিয়া। ব্যবসা ঠিক রাখতে এবার ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে অংশ নিয়ে গোড়ল ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন।

জনপ্রতিনিধির লেবাসে চলছে মাদক ব্যবসা। খুচরা-পাইকারি দুই রকম ব্যবসাই রয়েছে তার। ভারতীয় ব্যবসায়ীরা বড় চালান পাচার করে সোজা বাদশার বাড়িতে পাঠান। সেখান থেকে অন্যান্য ব্যবসায়ীদের হাতে চলে যায় এসব মাদক।

দীর্ঘদিন এ ব্যবসার সঙ্গে জড়িত থাকায় স্থানীয় প্রশাসনকেও হাত করে ফেলেছেন বাদশা মিয়া। তাই মাদকবিক্রেতা ও পরিবহনকারীরা প্রায় দিন প্রশাসনের হাতে আটক হলেও বড় ব্যবসায়ী বাদশা মিয়া রয়েছেন ধরা-ছোঁয়ার বাইরে। অবৈধ কোনো সুবিধার বিনিময়ে স্থানীয় প্রশাসন বিষয়টি জেনেও না জানার ভান করছে বলে স্থানীয়দের অভিযোগ।

চাহিদা বিবেচনায় স্থানীয় মাদকসেবীদের জন্য নিজ বাড়িতেই ফেনসিডিলের বার খুলেছেন ইউপি সদস্য বাদশা মিয়া। তার বিশাল বাড়ির বারান্দায় বসার ও বিশ্রামের ব্যবস্থাও রয়েছে। প্রতিনিয়ত মাদকসেবীরা তার বাড়িতেই ভিড় জমান। হাতের কাছে নিরাপদ মাদক সেবনের ব্যবস্থা পেয়ে উঠতি স্কুল-কলেজ পড়ুয়া কিশোর-তরুণ ছুটছে ওই ফেনিডিলের বারে। এভাবেই নষ্ট হচ্ছে এলাকার তরুণ সমাজ। যুবসমাজ রক্ষায় অবৈধ এ বার বন্ধ করতে প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন স্থানীয় সুশীল সমাজ।

ইউপি সদস্য বাদশার স্ত্রী স্বপ্না বেগম নিজেই তার বাড়িতে ফেনসিডিল বারে চাহিদামত ফেনসিডিল পরিবেশন করেন। ফেনসিডিল সেবনে যা প্রয়োজন সবই রয়েছে তাদের টেবিলে। ১০০ মিলিগ্রাম এক বোতল ফেনসিডিলের খুচরা দাম ধরা হয় এক হাজার থেকে ১১শ টাকা। যার যত গ্রাম দরকার, তাকে তত গ্রাম গ্লাসে ঢেলে দিয়ে টাকা নেন।

ইউপি সদস্যের বাড়িতে মাদক সেবনে প্রশাসনের ঝামেলা নেই- এটা ভেবে মাদকসেবীদের বর্তমান নিরাপদ বার ইউপি সদস্য বাদশার বাড়ি। স্থানীয়দের এমন অভিযোগে সোর্স নিয়োগ পাঠিয়ে ফেনসিডিল বিক্রি ও বারে খুচরা বিক্রির একাধিক ভিডিও আসে এ প্রতিবেদকের হাতে।

ভিডিওতে দেখা যায়, ইউপি সদস্য বাদশার স্ত্রী স্বপ্না বেগম টাকা নিয়ে নিজেই পাশের রুম থেকে ফেনসিডিল এনে টেবিলের গ্লাসে পরিবেশন করছেন। পুরো বোতল নয়, বোতলের অর্ধেক বা এক চতুর্থাংশ ফেনসিডিল সেবন করারও ব্যবস্থা রয়েছে। যত টাকা, ততটুকুই গ্লাসে পরিবেশন করা হয়।

ভিডিওতে দেখা যায়, ইউপি সদস্যের স্ত্রী স্বপ্না বেগম এক দিন ২০ টাকা কম পাওয়ায় সোর্সের সঙ্গে খারাপ আচরণ করেন।

সোর্স বলেন, এখানে প্রশাসন আসে না?

স্বপ্না বেগম বলেন, এটা মেম্বারের বাড়ি। এখানে প্রশাসনের ক্ষমতা আছে? ম্যাজিস্ট্রেট হলে সমস্যা।

একদিন সোর্স দাম কম দেওয়ায় খারাপ আচরণ করেন স্বপ্না বেগম। তখন স্বপ্না বেগম বলেন, আজ দাম বাড়ায় ৫০০ মাল ফেরত দিয়েছি। যেখানে কম পাবেন, সেখানে যান। এখানে আসছেন কেন? ইনটেক খান, খোলা খাবেন কেন?

সোর্স বলেন, মেম্বারের বাড়ি, এখানে নিরাপত্তা বেশি। সেজন্য আসি।

দ্বিতীয় দফায় সোর্স ফেনসিডিলের টাকা সরাসরি ইউপি সদস্য বাদশা মিয়ার হাতে দেওয়ার সময় বিগত দিনে স্ত্রীর খারাপ আচরণের বর্ণনা দেন। যা শুনে তিনি (বাদশা) তার স্ত্রীকে বিষয়টি নিয়ে শাসন করেন। বলেন, ২০ টাকার জন্য তোকে এ কথা বলতে হবে কেন?

নগদ টাকা না থাকায় অন্য একদিন সোর্স অনলাইন ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে টাকা পাঠানোর কথা বললে স্বপ্না বেগম একটি মোবাইল ফোন নম্বর দেন। ওই নম্বরে টাকা পাঠানোর বিষয়টি নিশ্চিত হলেই কেবল ফেনসিডিল পরিবেশন করেন তিনি। ওই নম্বরটিতে কল করলে আনোয়ার নামে একজন ফোন ধরে বলেন, বাদশা মেম্বারকে চিনি, তবে এটা তার নম্বর নয়। মূলত সরাসরি নিজেদের নম্বর না দিয়ে এ কাজের জন্য অনলাইন ব্যাংকিংয়ের এক এজেন্টের নম্বর ব্যবহার করা হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

তবে এসব বিষয় অস্বীকার করে গোড়ল ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য বাদশা মিয়া বলেন, কার সঙ্গে কথা বলছ? আমাকে চিন? কথাবার্তা ভালো করে বলবা।

এ বিষয়টি নিয়ে রোববার (১২ জুন) একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। যা মুহূর্তে নেট দুনিয়ায় ভাইরাল হলে জেলা পুলিশ ওই অবৈধ ফেনসিডিল বার ভেঙে দিতে দফায় দফায় অভিযান চালায়। মুলহোতা ইউপি সদস্য বাদশা মিয়া আত্মগোপন করেন। সোমবার (১৩ জুন) সন্ধ্যায় গোপন সংবাদের ভিত্তিতে কালীগঞ্জ থানা পুলিশ অভিযান চালিয়ে ওই গ্রাম থেকে ইউপি সদস্যের স্ত্রী স্বপ্ন বেগম ও তার ছেলে শাহিন আলমকে আটক করে। এ সময় তাদের কাছ থেকে ১১১টি ইয়াবা ও ২৫ বোতল ফেনসিডিল উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে।


Discover more from MIssion 90 News

Subscribe to get the latest posts to your email.

সম্পর্কিত সংবাদ

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

Back to top button

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker