কটিয়াদী

কটিয়াদীতে ৮শত বছরের প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী কুড়িখাই মেলা সোমবার থেকে শুরু

কিশোরগঞ্জের কটিয়াদী উপজেলার ঐতিহ্যবাহী কুড়িখাই এর সপ্তাহব্যাপী মেলা সোমবার থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু। এ উপলক্ষ্যে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ফকির, দরবেশ ও আশেকান ভক্তগণ এসেছে। ৩ শত ৬০ জন আউয়ালিয়ার শিরোমনি শাহ জালাল (রহ:) এর সফর সঙ্গী হযরত শাহ শামছুদ্দিন বুখারী(রহ:) বাংলা ১২২৫ সালে ৩ জন সঙ্গী শাহ নাসির, শাহ কবীর ও শাহ কলন্দরকে নিয়ে কটিয়াদী উপজেলার কুড়িখাই অঞ্চলে ইসলাম ধর্ম প্রচার শুরু করেন এবং তিনিই এ অঞ্চলের প্রথম ইসলাম ধর্মের প্রচারক। এছাড়া তিনি ছিলেন বার আউলিয়ার একজন। প্রতি বছর মাঘ মাসের শেষ মঙ্গলবার কুড়িখাই শাহ শামছুদ্দিন বুখারী (রহ:) মাজারে সপ্তাহব্যাপী মেলা শুরু হয়।

মেলা শুরুর আগের দিন সোমবার দিবাগত রাতে মূলত যিকির আজগর ও মিলাদের মাধ্যমে শামছুদ্দিন বুখারী (রহ:) ওরস হয়। পরবর্তীতে এক কিলোমিটার এলাকা ব্যাপী বসে মেলা। এতে কাঠের জিনিসপত্র, মিষ্টি, খেলনা, মিঠাই, মন্ডা, মুড়ি ও বিন্নি খৈ এর বিরাট হাট বসে। এছাড়াও সাকার্স, পুতুল নাচ,নাগরদোলাসহ আয়োজন করা হয় বিভিন্ন বিনোদনের।

মেলা উপলক্ষ্যে এ অঞ্চলের জামাইদের বিশেষভাবে দাওয়াত দেয়া হয় এবং মেলার প্রধান আকর্ষন মাছের হাট। প্রতি বাংলা বছরের মাঘ মাসের শেষ সোমবার এ ওরস মোবারক অনুষ্ঠিত হয়। এর আগের সপ্তাহের সোমবার ও মঙ্গলবার নেয়াজ পাকানোর জন্য ডেক বসিয়ে তবারুক বিতরনের মধ্যদিয়ে সপ্তাহব্যাপী ওরসের প্রস্তুতি চলে। সোমবার ওরস মোবারক ও মুড়ি খৈই মেলা, মঙ্গলবার মাছের মেলা, বুধবার বউ মেলা, বৃহস্পতিবার জামাই মেলা, শুক্রবার মিলন মেলা, শনিবার আনন্দ মেলা ও রবিবার থেকে সপ্তাহব্যাপী কাঠের মেলা ও সাধারন মেলা থাকে।

লোক বিশ্বাস মতে কুড়িখাই মেলায় বোয়াল মাছ খেলে সে বছরের জন্য শনির দশা থেকে মুক্তি লাভ করা যায়। মেলাকে উপলক্ষ্য করে প্রত্যেক বাড়ীতে জামাইদের দাওয়াতের প্রচলন রয়েছে। মেলার বিশেষ আকর্ষন শেষ ২ দিন বসে বউ মেলা। শুধুমাত্র এলাকার বিভিন্ন বয়সের মহিলারা মেলায় এসে কেনাকাটা করে থাকেন। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে প্রায় লক্ষাধিক লোকের আগমন ঘটে। এখানে মাজার শরীফ,মসজিদ পুকুর,প্রাথমিক বিদ্যালয়,স্বাস্থ্য কেন্দ্র, বিশ্রামাগার সহ পাগল ফকিরদের আবাসিক স্থান রয়েছে।

কিশোরগঞ্জ-২ আসনের সংসদ সদস্য সাবেক আইজিপি নূর মোহাম্মদ জানান, হযরত শাহ শামছুদ্দিন বুখারী (রহ:) আউলিয়ার ওরস উপলক্ষ্যে কুড়িখাই-এর মেলা ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে এ অঞ্চলের লোকজনের মিলন মেলা। আর তাই এর ঐতিহ্য রক্ষা করতে হবে। এ মেলা এ অঞ্চলের গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য। ফলে মেলাকে ঘিরে বাংলার যে লোক ঐতিহ্য তা আরও দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। আর তাই এলাকার সুনাম বয়ে বেড়াচ্ছে দেশের সর্বত্র।

মেলা আয়োজক কমিটির সাধারণ সম্পাদক ও আওয়ামী লীগ নেতা মো: মঈনুজ্জামান অপু জানান, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে মেলাটি একটি সর্বজনীন উৎসব। ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে সকলকে এ মেলায় আসার আহবান জানিয়েছেন তিনি।

এদিকে মেলা আয়োজক কমিটির সভাপতি ও কটিয়াদী উপজেলা নির্বাহী অফিসার জ্যোতিশ্বর পাল জানান, এই মেলা ও উৎসবকে কেন্দ্র করে সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। মেলার নিরাপত্তার জন্য অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।


Discover more from MIssion 90 News

Subscribe to get the latest posts to your email.

সম্পর্কিত সংবাদ

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

এছাড়াও পরীক্ষা করুন
Close
Back to top button

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker