নারায়নগঞ্জসারাদেশ

আমার ধৈর্যের আর পরীক্ষা নিবেন না : শামীম ওসমান

নারায়ণগঞ্জে শ্মশানের পোঁড়া মাটি কবরস্থানে ফেলে ভাষা সৈনিক ও মুক্তিযোদ্ধাসহ অর্ধশতাধিক মানুষের কবর ভরাট করে ফেলার অভিযোগ উঠেছে সিটি কর্পোরেশনের বিরুদ্ধে। ভরাট কবরগুলোর মধ্যে স্থানীয় সংসদ সদস্য শামীম ওসমানের বাবা, মা, বড় ভাই ও দাদিসহ পরিবারের পূর্ব পুরুষদের কবরও রয়েছে।

এ ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করে শ্মশানের মাটি দিয়ে ভরাটকৃত সবগুলো কবর পূর্বের অবস্থায় ফিরিয়ে আনার আহ্বান জানিয়ে শামীম ওসমান বলেন, এটা সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টের একটি চক্রান্ত। সোমবার দুপুরে নগরীর মাসদাইর এলাকায় কেন্দ্রীয় সিটি কবরস্থান পরিদর্শন করে সাংবাদিকদের কাছে এই বিষয়টি তুলে ধরে ক্ষোভ প্রকাশ করেন সংসদ সদস্য শামীম ওসমান।

কবরবাসীর অনেক স্বজন অভিযোগ করেন, শ্মশানের পুকুর খনন করতে গিয়ে সিটি করপোরেশন কবরস্থানের অস্তিত্ব সংকটে ফেলে দিয়েছে। পুকুরের পূর্ব পাশের সীমানা প্রাচীর এরই র্মেধ্য ভেঙে পড়েছে। অনেকগুলো কবর দেবে গেছে এবং কাত হয়ে পড়ে গেছে, বেড়া ভেঙে গেছে। যে কোনো মুহূর্তে সেই কবরগুলো ধসে যেতে পারে।

শামীম ওসমান জানান, গত ২৭ জুলাই সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভীর প্রয়াত মা মমতাজ বগমের কবর জিয়ারত করে কবরস্থানে স্বাভাবিক অবস্থা দেখে গেছেন। তার অভিযোগ, এরই মধ্যে সিটি কর্পোরেশনের নিয়োগকৃত ঠিকাদার কবরস্থানের পাশে শ্মশানের পুকুর খননসহ সংস্কার কাজ করতে গিয়ে তাঁর পরিবারের চার সদস্য ও বেশ কয়েকজন ভাষা সৈনিক এবং মুক্তিযোদ্ধাসহ অন্তত অর্ধশতাধিক কবর ভরাট করে ফেলা হয়েছে। কবরস্থানের পশ্চিম দিকে বেশ কিছু পরিমাণ জায়গায় প্রায় তিন ফুট মাটি ফেলে ভরাট করায় কবরগুলো মাটির সমতল হয়ে মিশে গেছে। ফলে কবরগুলো কয়েক ফুট নিচে দেবে গেছে। পাশাপাশি শ্মশানের মাটি কবরগুলোর উপরে ফেলাসহ দেশের বীর সন্তান বেশ কয়েকজন ভাষা সৈনিক ও মুক্তিযোদ্ধার কবরের সাইনবোর্ড ভেঙে ফেলা হয়েছে।

বক্তব্যের একপর্যায়ে আবেগআপ্লুত হয়ে শামীম ওসমান বলেন, এই অমানুষিক কাজটি যারা করেছে তারা ভাষা সৈনিক ও মুক্তিযোদ্ধাদের অবমাননাসহ ধর্মীয় অনুভূতিতে চরম আঘাত করেছে। শামীম ওসমান বলেন, আমি একজন ব্যর্থ সন্তান যে কিনা তার বাবা মায়ের কবর হেফাজত করতে পারেনি।’ কবরগুলো দ্রুত সময়ের মধ্যে পূর্বের অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে সিটি কর্পোরেশন কর্তৃপক্ষের প্রতি আহবান জানান তিনি।

তিনি আরো বলেন, যারা এই কাজটি করেছেন, আল্লাহরওয়াস্তে বলছি আপনাদের। আমার ধৈর্যের আর পরীক্ষা নিবেন না। আপনারা নিজেরাও আযাবের হাত থেকে বাঁচার জন্য কবরগুলোকে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে নিয়ে আসুন। নয়তো আল্লাহ আপনাদের মাফ করবেন না। না করলে আমি ঠিক করবো। এই মাটি রাস্তার পাশেও রাখা যেত। এখানে কেন রাখা হলো। এখানে জাতির বীর সন্তান মুক্তিযোদ্ধারা শোয়া।

শামীম ওসমান বলেন, ‘আমি গাড়িতে একা একা বসেছিলাম। আমার নিশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে। আমি সরকারকে বলতে চাই, নারায়ণগঞ্জবাসীকে বলতে চাই, দয়া করে আমার ধৈর্যের পরীক্ষা নিবেন না। আমি জানি জনগণের সাথে আমার সম্পৃক্ততা কতটুকু। এই অমানবিক কাজের ফলেই আল্লাহ আযাব দিচ্ছেন। যারা এই কাজ করেছে কর্তৃপক্ষ তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিবেন এটাই আমার প্রত্যাশা।’ তিনি বলেন, ‘এটা টেস্ট কেস। তারা চেষ্টা করছে আমার মাথা গরম করে দেওয়ার জন্য। আমি তাদের বলতে চাই আমার মাথা গরম হবে না। আমি শুধু আল্লাহর ওপর ভরসা করি। এই সমস্ত পাপীদের আমি কেয়ার করি না।’

শামীম ওসমান বলেন, আমি সিটি করপোরেশনের কাছে অনুরোধ করবো দয়া করে কবরগুলোকে আগের অবস্থায় নিয়ে আসুন। শুধু আমার পরিবারেরটা না। অন্যান্য বীর মুক্তিযোদ্ধা, ভাষা সৈনিক আছেন যারা আছেন তাদেরটাও।

মসজিদের মোয়াজ্জিন ও কবরস্থানের দেখভালের দায়িত্বে থাকা মো. জাকারিয়া বলেন, ‘এটা শ্মশানের মাটি কি না আমি নিশ্চিত না। ঠিকাদাররা শ্মশান ও কবরস্থানের উন্নয়ন কাজ করেছে।’ তবে ঠিকাদার মো. মামুন কবরস্থানের উপর শ্মশানের পোড়ামাটি দেওয়া ঠিক হয়নি স্বীকার করে বলেন, শ্মশানের পুকুর খনন করতে গিয়ে এই অবস্থা হয়েছে। আমরা সেই মাটি অপসারণের ব্যবস্থা করছি।

ঘটনাস্থলে থাকা নারায়ণগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি এহসানুল হাসান নিপু বলেন, শ্মশানের পোড়া মাটি দেওয়া হয়েছে শামীম ওসমানের দাদা খান সাহেব এম. ওসমান আলী, দাদী জামিলা ওসমান, বাবা আবুল খায়ের মোহাম্মদ সামসুজ্জোহা, মা নাগিনা জোহা ও বড় ভাই একেএম নাসিম ওসমানসহ একাধিক ভাষা সৈনিক, মুক্তিযোদ্ধা ও অনেকগুলো সাধারণ কবরে। অনেক কবরের অস্তিত্বই হারিয়ে গেছে এই পোড়া মাটিতে চাপা পড়ে। কিছু কবরের চিহ্ন রয়েছে।’

এদিকে শামীম ওসমান ছাড়াও সেখানে থাকা একাধিক কবরের স্বজনরা খবর পেয়ে ছুটে এসে কবরের বিধ্বস্ত অবস্থা দেখতে পেয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন এবং এ ঘটনায় নাসিকের প্রতি তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেন। কবরবাসীর অনেক স্বজন অভিযোগ করেন, শ্মশানের পুকুর খনন করতে গিয়ে সিটি করপোরেশন কবরস্থানের অস্তিত্ব সংকটে ফেলে দিয়েছে। পুকুরের পূর্ব পাশের সীমানা প্রাচীর এরই মধ্যে ভেঙে পড়েছে।


Discover more from MIssion 90 News

Subscribe to get the latest posts to your email.

সম্পর্কিত সংবাদ

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

Back to top button

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker