নারায়নগঞ্জসারাদেশ

রূপগঞ্জের আগুনে ৫ সদস্যের তদন্ত কমিটি

নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের সজীব গ্রুপের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান হাসেম ফুড অ্যান্ড বেভারেজের সেজান জুস কারখানার অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। শুক্রবার (০৯ জুলাই) আগুন লাগার কারণ উদঘাটনে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শামীম বেপারীকে আহ্বায়ক করে পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির অন্য সদস্যদের মধ্যে আছেন রূপগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শাহ নুসরাত জাহান, জেলার ফায়ার সার্ভিসের উপসহকারী পরিচালক আবদুল্লাহ আল আরেফিন, পুলিশের একজন প্রতিনিধি এবং কলকারখানা অধিদপ্তরের জেলার একজন কর্মকর্তা।

এদিকে শুক্রবার (০৯ জুলাই) সকালে ভবনটিতে ফাটল দেখা দিয়েছে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা এ তথ্য জানিয়েছেন। 

এদিকে আগুনের ঘটনায় ভবনটির ছাদ থেকে লাফিয়ে পড়ে এবং আগুনে দগ্ধ হয়ে এখন পর্যন্ত দুই নারী শ্রমিকসহ চারজন নিহত হয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে। এ ছাড়া অর্ধশত শ্রমিক আহত হওয়ার পাশাপাশি ১৫ থেকে ২০ জন নিখোঁজ রয়েছে বলে স্বজনরা দাবি করছেন। আহতদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। নিখোঁজ শ্রমিকদের সন্ধানে তাদের স্বজনরা কারখানাটির সামনে জড়ো হয়ে অপেক্ষা করছেন। তবে নিখোঁজের সংখ্যা কত, তার কোনো তালিকা এখনো প্রকাশ করেনি স্থানীয় উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা। 

এ ব্যাপারে রূপগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শাহ নুসরাত জাহান জানান, আগুনের ঘটনার পর থেকে উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে গিয়ে ফায়ার সার্ভিসের দমকল বাহিনী ও উদ্ধারকর্মীদের সঙ্গে কাজ করছেন। এদিকে আগুনের ঘটনার কারণ উদঘাটনে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শামীম বেপারীকে আহ্বায়ক করে পাচঁ সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা করেছে জেলা প্রশাসন। কমিটির অন্য সদস্যদের মধ্যে আছেন রূপগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, ফায়ার সার্ভিসের জেলা উপসহকারী পরিচালক, পুলিশের একজন প্রতিনিধি এবং কলকারখানা অধিদপ্তরের জেলার একজন কর্মকর্তা। 

এদিকে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে জেলা প্রশাসক মোস্তাইন বিল্লাহ জানান, আগুনের ঘটনায় কতজন নিখোঁজ আছেন, তার একটি তালিকা প্রস্তুত করতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তথ্য-উপাত্য সংগ্রহ করে সেই তালিকা তৈরির কাজ চলছে। স্বজনদের দাবি অনুযায়ী নিখোঁজদের নাম তালিকায় লিপিবদ্ধ করা হবে। একই সঙ্গে যারা ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানে চিকিৎসাধীন রয়েছে তাদেরও একটি তালিকা তৈরির কাজ চলছে বলে জানান জেলা প্রশাসক। 

শ্রমিক ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, উপজেরার ভুলতা ইউনিয়নের কর্ণগোপ এলাকায় অবস্থিত সজীব গ্রুপের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান সেজান জুস কারখানায় প্রায় ৭ হাজার শ্রমিক কর্মচারী কাজ করেন। করোনার কারণে প্রতিষ্ঠানের কয়েকটি ইউনিট বন্ধ রয়েছে। সেখানে কার্টন ও ফুড ইউনিটের ছয়তলা ভবনের কারখানাটির নিচতলার ফ্লোরে কার্টন থেকে আগুনের সূত্রপাত ঘটে। এ সময় আগুনের লেলিহান শিখা বাড়তে শুরু করে এবং পুরো ভবনে আগুন ছড়িয়ে পড়ে। একপর্যায়ে ধোঁয়ায় কারখানাটি অন্ধকার হয়ে গেলে শ্রমিকরা প্রাণ বাঁচাতে এদিক-সেদিক ছুটাছুটি করতে শুরু করেন। কেউ কেউ ভবনের ছাদে অবস্থান নেন। আবার কেউ কেউ ছাদ থেকে লাফিয়ে পড়তে শুরু করেন। এ সময় ছাদ থেকে লাফ দিয়ে স্বপ্না রানী (৪৪) ও মীনা আক্তার (৪৩) নামের দুই নারী শ্রমিক গুরুতর আহত হন। পরে তাদের ঢাকা মেডিকেলে নিয়ে গেলে সেখানে তাদের মৃত্যু হয়। 

তবে নিখোঁজ শ্রমিকদের স্বজনদের অনেকের অভিযোগ, বৃহস্পতিবার সকালে শ্রমিকরা কাজে যোগ দেওয়ার পর কারখানাটির তৃতীয় তলার গেটে কর্তৃপক্ষ তালা লাগিয়ে দেয়, যাতে দুপুরে লাঞ্চের সময় কেউ বের হতে না পারে। বিকেলে আগুন লাগার পর নিচতলা ও দ্বিতীয় তলার শ্রমিকরা বের হতে পারলেও তৃতীয় ও চতুর্থ তলায় কর্মরত শ্রমিকরা তালা লাগিয়ে রাখার কারণে আটকা পড়ে যান। তাদের অনেকে ছাদে উঠে লাফিয়ে পড়েন। কেউ কেউ ফ্লোরে আটকা পড়েছেন। আটকেপড়া শ্রমিকরা সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত স্বজনদের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করে তাদের অবস্থার কথা জানিয়েছেন। এরপর থেকে তাদের সঙ্গে আর যোগাযোগ করা যায়নি। 

মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেন ইউএস-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের দায়িত্বরত চিকিৎসক শাহাদাত হোসেন ও জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জায়েদুল আলম। নিহত স্বপ্না হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ উপজেলার গুলডুবা এলাকার যতীন সরকারের স্ত্রী ও নিহত মীনা কিশোরগঞ্জের কমিরগঞ্জ উপজেলার উত্তরকান্দা কুকিমাদল গ্রামের হারুনের স্ত্রী। তারা দুজনই কারখানাটির ওডি সেকশনের শ্রমিক বলে নিশ্চিত করেন সেখানকার অপারেটর আজিজ মিয়া। এ ছাড়া গুরুতর আহতদের অ্যাম্বুলেন্সসহ বিভিন্ন পরিবহনে করে ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে পাঠানো হয়। 

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পুলিশ ফাড়ির ইনচার্জ বাচ্চু মিয়া জানান, আগুনের ঘটনায় ছাদ থেকে লাফিয়ে পড়ে মোরসালিন নামে একজন আহত ব্যক্তি চিকিৎসাধীন অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা গেছেন। এ ছাড়া আরও সাতজন চিকিৎসাধীন রয়েছেন। 

প্রতিষ্ঠানের অ্যাডমিন ইনচার্জ সালাউদ্দিন মিয়া বলেন, সেকশনের পাঁচটি ফ্লোরে ৪০০ শ্রমিক বিকেলে ওভারটাইম করছিলেন। সে ভবনের ওপরের ফ্লোরে আমাদের স্টোর। সেখানে কয়েক কোটি টাকার মালামাল রয়েছে।
নারায়ণগঞ্জ জেলা ফায়ার সার্ভিসের উপপরিচালক আবদুল্লাহ আল আরেফিন বলেন, সজীব গ্রুপের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান সেজান জুস কারখানার ভবনটি অনেক বড়। কিন্তু এই ফ্যাক্টরিতে আগুন নিয়ন্ত্রণের জন্য ফায়ার ফাইটিংয়ে ব্যবস্থা ছিল খুবই অপ্রতুল। এ ছাড়া বিশাল আকৃতির ভবনটিতে ওঠানামা করার জন্য মাত্র দুটি সিঁড়ির ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। কিন্তু ভবনটিতে কমপক্ষে চারটি সিঁড়ির ব্যবস্থা রাখার প্রয়োজন ছিল।
তিনি আরও বলেন, আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য ফায়ার সার্ভিসের ১৮টি ইউনিট এখনো একযোগে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু কারখানাটির আশপাশে পানির ব্যবস্থা কম থাকায় একদিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা হলেও আরেক দিকে আগুন লেগে যাচ্ছে। তবে আগুন এখন পুরোপুরি আমাদের নিয়ন্ত্রণে আছে। ভেতের ডাম্পিংয়ের কাজ চলছে। কারণ, এই কারখানায় প্লাস্টিকসহ দাহ্য পদার্থ থাকায় ভেতরে বারবার আগুন জ্বলে উঠছে। আগুন পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আসার পর ভেতরে কেউ আটকা পড়েছে কি না তা নিশ্চিত হতে পুরো ভবনটি তল্লাশি করা হবে।


Discover more from MIssion 90 News

Subscribe to get the latest posts to your email.

সম্পর্কিত সংবাদ

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

Back to top button

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker