বগুড়াসারাদেশ

শেরপুরের ১৪বর্গ কিলোমিটারে ওৎপেতে থাকে প্রাণঘাতী শিকারি

বগুড়া শেরপুর উপজেলার আতংকিত জনপদ রানীরহাট সড়ক। মহাসড়কের মির্জাপুর এলাকা থেকে ১৪কিলোমিটার এই সড়কে ওৎপেতে থাকে প্রানঘাতী শিকারি। জীবন জীবিকার প্রয়োজনে এই পথে চলাচল করা সাধারণ মানুষদের অনেকেই তাদের শিকারে পরিণত হয়েছেন।
একই অবস্থা রানীরহাট থেকে ভবানীপুর হয়ে চান্দাইকোনা বগুড়া বাজার পর্যন্ত প্রায় ১৪কিলোমিটার। রানীরহাট থেকে সিরাজগঞ্চ জেলার রায়গঞ্জ উপজেলার তাড়াশ পর্যন্ত প্রায় ১৪কিলোমিটার। মির্জাপুর থেকে জামাইলহাট পর্যন্ত প্রায় ১৪কিলোমিটার। এই এলাকার জনপথ অপরাধের চাদরে মুড়িয়ে রেখেছে দূর্বৃত্বরা। তবে জামাইল হাটের রাস্তা এখন আগের চেয়ে অনেক নিরাপদ হয়েছে।
মোটর সাইকেল আরোহী, বিয়ের গাড়ি, ইজিবাইক, ব্যাটারী চালিত অটো ভ্যান, মোবাইল ফোন, টাকা, গহনা সব ছিনিয়ে নিচ্ছেন দূর্বৃত্বরা। কখনো কখনো নারীদের সম্ভ্রম লুটের ঘটনাও শোনা যায়। ছিনতাই, ডাকাতির বেশির ভাগ ঘটনায় থানায় অভিযোগ হয়না।
আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারি বাহিনীর তৎপরতা থাকার পরেও প্রায়ই ছিনতাই আর ডাকাতির ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন সাধারণ মানুষ। ডাকাতি ছিনতাই বন্ধে এর আগে মানব বন্ধন করেছেন স্থানীয় জনগন। এই এলাকায় পুলিশ ফাঁড়ি চান তারা।
এর বাহিরেও বগুড়া ঢাকা মহাসড়কে উপজেলার মহিপুর থেকে গাড়িদহ এলাকার মধ্যে ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে। মোটর সাইকেলে আসা ছিনতাইকারীরা দ্রুত ঘটনা ঘটিয়ে চলে যায়। গত ৭ফেব্রুয়ারী রানীরহাট সড়কে ফয়েজমারা ব্রীজ এলাকায় একদল ডাকাত হানা দেন। গাছ ফেলে সড়কে বেরিকেড সৃষ্টি করে চালক ও যাত্রীদের অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে ডাকাত দল। নগদ টাকা সহ মূল্যবান মালামাল লুটে নিয়ে যান তারা। এই ঘটনার ১৮দিনের মাথায় একই স্থানে আবারও ডাকাতির চেষ্টা চালায় দুর্বৃত্তরা।
২৫ফেব্রুয়ারী দিবাগত রাত সোয়া ৮টার দিকে গাছ ফেলে বেরিকেড সৃষ্টি করে ডাকাত দল । এসময় একাধিক যানবাহন আটকে ডাকাতির চেষ্টাও চালানো হয়।
স্থানীয এলাকাবাসী সে সময় জানিয়েছিলেন, স্থানীয় ডাকাতদলের প্রায় পাঁচজন সদস্য সন্ধ্যা ৭টার দিকে সেখানে অবস্থান নিয়েছিলেন। এরপর একটি মাইক্রোবাসে আরও অন্তত ৮জন সশস্ত্র ডাকাত সদস্য এসে যোগ দেন। পড়ে সড়কের গাছ কেটে বেরিকেড সৃষ্টি করে। এসময় একাধিক ট্রাক ও সিএনজি চালিত থ্রি-হুইলার আটকে ডাকাতির চেষ্টা করেন।
খবর পেয়ে পাশের বাজারে একটি মামলার তদন্তের জন্য যাওয়া জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (শেরপুর সার্কেল) গাজিউর রহমান ও থানার ওসি শহিদুল ইসলাম সর্ঙ্গীয় ফোর্স সহ অভিযান চালিয়ে ছিলেন। ডাকাতির চেস্টা ব্যার্থ হলেও কোন ডাকাতদের তখন আটক করতে পারেন নি পুলিশ।
সম্প্রতি রানীরহাট সড়কের আড়ংশাইলের তিন মাথা মোড়ে রাত ১টার দিকে ডাকাতির প্রস্তুতিকালে আন্তজেলা ডাকাত দলের ৭ সদস্যকে আটক করেন থানা পুলিশ। শেরপুর থানায় পরিদর্শক(তদন্ত) আবুল কালাম আজাদ কর্মরত থাকা অবস্থায় এই ঘটনা ঘটে।
গ্রেফতার হওয়া ডাকাত দলের সদস্যরা ছিলেন বগুড়ার সদর উপজেলার বাদুড়তলা এলাকার আব্দুল কাদেরের ছেলে পিকআপ চালক মুকুল ব্যাপারী। সদর উপজেলার নামুজা ভান্ডারীপাড়া গ্রামের হায়দার আলীর ছেলে বিপ্লব হোসেন। জিগাতলা গ্রামের বুলু মিয়ার ছেলে আরিফ ওরফে কালু। কাহালু উপজেলার আড়োলা গ্রামের ফুলচাঁনের ছেলে রায়হান হোসেন ওরফে পপি। একই এলাকার মৃত আমজাদ পাইকারের ছেলে মোকতার পাইকার। জালাল হোসেনের ছেলে হাবিবুর রহমান। মিলন ফকিরের ছেলে আইয়ুব ফকির। এসময় ডাকাতির কাজে ব্যবহার করা দেশীয় অস্ত্র ও একটি পিকআপ গাড়ি (মেট্রো ন-১৪-২৩৭৭) আটক করা হয়।
উপজেলার মির্জাপুর এলাকার ব্র্যাক বটতলা মোড়ের সার ও তেল ব্যবসায়ী জাহাঙ্গীর আলম এই প্রতিবেদক কে বলেন, গত সোমবার (২৮জুন) তার ছেলে জাকারিয়া(১৮) ছিনতাইয়ের শিকার হয়েছেন। দোকান থেকে রাত ৮টায় একা বাড়ি ফেরার পথে ছিনতাইকারীরা তার মোবাইল ফোন ছিনতাই করেন। হেলমেট পড়া চালক এবং আরোহী হেড লাইট বন্ধ করে আসছিলেন। তার কাছে এসে মোবাইল নিয়ে সোজা রানীরহাট সড়ক দিয়ে চলে যান। এই ঘটনায় তিনি থানা পুলিশের কাছে অভিযোগ করেন নাই। অভিযোগ করে কোন কাজ হবেনা। উল্টো জীবনটা হারাতে হতে পারে বলে তিনি শঙ্কা প্রকাশ করেন। পুলিশ ডিউটি করে। তারপরেও ছিনতাই, ডাকাতি এই সড়ক গুলোতে স্বাভাবিক ঘটনা। এই অবস্থা থেকে নিজেরা বাঁচতে চান বলে তিনি জানিয়েছেন।
পরিচয় গোপন রাখার শর্তে ওই এলাকার এক রেস্টুরেন্ট ব্যবসায়ী এই প্রতিবেদক কে বলেন, বুদ্ধির পর থেকে এই সড়কে ছিনতাই ডাকাতির ঘটনা শুনে আসছেন। মাঝখানে কয়েক বছর এগুলো ছিলোনা বললেই চলে। গত এক বছর ধরে আবারো ছিতাই এবং ডাকাতির ঘটনা বেড়েছে।
গত রোজার ঈদের আগে এক রাতে এই এলাকায় বিয়ের গাড়ি ডাকাতি হয়। ডাকাতরা মালামাল লুটের সাথে সেখানে এক নৈশ প্রহরীর ঘরে ধর্ষনের ঘটনা ঘটিয়েছিলেন। জীবনের ভয়ে পরে সেই নৈশ প্রহরী সেখান থেকে চলে গেছেন। ধর্ষনের ঘটনার পর আরো কয়েকটি ছিনতাই হয়। এবং আরো একটি ধর্ষনের ঘটনাও ঘটে। এতে ক্ষুব্ধ এলাকাবাসি প্রশাসনের উর্ধতন কর্তৃপক্ষের দৃস্টি আকর্ষন করে মানব বন্ধন করেন।
তিনি বলেন, রানীরহাট মোড় পার হয়ে ২শত গজ গেলেই ছিনতাইয়ের পয়েন্ট। রাতে রাস্তার ধারে মানুষ দাঁড়িয়ে থাকলেও মনে হয় গাছ দাঁড়িয়ে আছে। বটতলা মোড় থেকে ভবানীপুর পর্যন্ত রাস্তা এখন ভালো হয়ে গেছে। এই সড়কে ছিনতাইয়ের ঘটনা আর শোনা যায়না। তবে রানীরহাট থেকে সীমাবাড়ির ভেতর দিয়ে চান্দাইকোনা বগুড়া বাজার সড়কে ছিনতাইযের কথা মাঝে মধ্যে শোনা যায়। যারা ছিনতাই ডাকাতির ঘটনার শিকার হন তারা বেশির ভাগই বাহিরের। স্থানীয়রা কেউ তাদের পরিচয় মুখস্থ্য করে রাখেন না।
মির্জাপুর-জামাইলহাট সড়কে ইজিবাইক চালক রনি সরকার এবং তার বন্ধু মিলন হোসেন এই প্রতিবেদক কে বলেন, ৫শত টাকা কেন। ৫হাজার টাকা দিলেও সন্ধ্যার পর তারা রানীরহাট সড়কে ভাড়া নিয়ে যাবেন না। প্রায় ২৫দিন আগে রানীরহাট মোড়ে একজন ট্রাক চালককে মেরে সর্বস্ব ছিনিয়ে নেন ছিনতাইকারীরা। এই ঘটনায় থানায় অভিযোগও দিয়েছিলেন সেই চালক।
এই সড়কে ৪বছর আগে মিরাজুল নামের এক চালককে হত্যা করে অটোভ্যান ছিনতাই করেছিলো দূর্বৃত্বরা। নিখোঁজের ৪দিন পর লাশ পেয়েছিলো পুলিশ। ৩বছর আগে রানীরহাট সড়কের চৌমোহনী পুকুর পাড়ে


Discover more from MIssion 90 News

Subscribe to get the latest posts to your email.

সম্পর্কিত সংবাদ

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

Back to top button

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker