‘আমার যখন ফল প্রকাশ হয় সে সময় একজন যাত্রী নিয়ে দূরে ছিলাম। আসার জন্য খুব ছটফট করলেও পারি নাই। কারণ, যাত্রীর সাথে যাওয়া এবং ফেরার কথা ঠিক হয়েছে। তার কাজ শেষ না হলে তো ফেরাও সম্ভব নয়। তাই ফিরতে দেরি হলো। স্কুলে এসে হেডস্যারের কাছে শুনলাম আমি জিপিএ-৫ পেয়েছি’।
আনন্দে চোখে পানি টলমল অবস্থায় কথাগুলো বলছিল কাওসার হোসেন আদর। তার বাড়ি পৌর এলাকার দক্ষিণ কাজিরহাট ৯নং ওয়ার্ডের পন্ডিত পাড়ায়।
নীলফামারীর জলঢাকা সরকারি মডেল পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় হতে সে চলতি বছর এসএসসি পরীক্ষায় বিজ্ঞান বিভাগ হতে অংশ নিয়েছিল। বৃহস্পতিবার দুপুরে ফল প্রকাশ হলে সে জিপিএ-৫ পেয়েছে।
জলঢাকা সরকারি মডেল পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় সূত্র জানায়, চলতি বছর বিদ্যালয়টি হতে ২৮৬ জন পরীক্ষার্থী অংশ নিয়েছিল। এর মধ্যে বিজ্ঞান বিভাগ হতে ১৪৬ জন ও মানবিক বিভাগ হতে ১৪০ জন অংশ নিয়েছিল। পাশের হার ৯৮.২৫।
কাওসারের সহপাঠি আবু সাঈদ, লাজু ও পিংকি জানায়, তার পোষাক ও চলাফেরায় দারিদ্রতার ছাপ থাকলেও মনটা অনেক বড়। আমরা ক্লাস সিক্স হতে বিভিন্নখানে প্রাইভেট পড়লেও তাকে বাইরে কোথাও পড়তে দেখেছি এমনটা চোখে পড়েনি। তবে ক্লাসে সে খুব মনযোগী ছিল।
কাওসারের বাবা অলিয়ার রহমান জানায়, মুই (আমি) ভ্যানের প্যাডেল ঘুরায়ে সংসার চালাই। কয়দিন ধরি অসুস্থ। ফলে মোর (আমার) বদলে বেটা (ছেলে) টা ভ্যান টানতেছে। হামরা (আমরা) গরিব মানুষ হাতে করি পেটে দেই। হেড স্যার কইছে তোর বেটা ভালো ফল করিছে। তোমরায় কন (বলেন) তো হামার কি আর উপর ক্লাসে পড়িবার সামর্থ্য আছে? যদি কেউ তার জন্য সাহায্য-সহযোগিতা করে তাহলে পড়িবার পারিবে নাহলে এখানেই তার পড়া শেষ।
ওই প্রতিষ্ঠানের গণিত বিষয়ের শিক্ষক গোলজার রহমান সাগর ও পদার্থ বিজ্ঞান বিষয়ের শিক্ষক তাইফুর রহমান বিএসসি জানান, সে বিজ্ঞান বিভাগ হতে পরীক্ষায় অংশ নেয়। কোনো বিষয়ে তার আয়ত্বে না আসলে পরে ফাঁকা সময়ে একা এসে পাশে দাঁড়িয়ে থাকে। তার দিকে চাইলে সে বলবে স্যার এটা কি হবে? ওটা কি হবে? আমরা কখনও বিরক্তবোধ করিনি বলেই তার আজ এই ফল। এমন মেধাবীদের কল্যাণে আমাদের সকলের এগিয়ে আসা উচিত।
জলঢাকা সরকারি মডেল পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আমিনুর রহমান বিএসসি বলেন, মেধা যেমন সবার সমান নয়, তেমনি আর্থিকভাবেও সবাই স্বচ্ছল নয়। ক্লাস সিক্স হতে ছাত্রটিকে আমি চিনি। সে খুব মেধাবী। তাকে সহযোগিতা করলে সে একদিন সবার মুখ উজ্জ্বল করতে পারবে। সে বিশ্বাস আমার আছে।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষাকর্মকর্তা চঞ্চল কুমার ভৌমিক বলেন, আনন্দের বিষয় তার কাঙ্খিত ফল সে নিয়ে এসেছে। আমরা চাই তার শিক্ষাজীবন যেন অব্যাহত থাকে। সে যেন এই উপজেলার জন্য ভবিষ্যতে সাফল্য বয়ে নিয়ে আসে।