ইতিহাস ও ঐতিহ্যকিশোরগঞ্জভিডিও

ব্রহ্মপুত্র নদে লক্ষাধিক দর্শকের উপস্থিতিতে ঐতিহ্যবাহী নৌকা বাইচ

কিশোরগঞ্জের হোসেনপুরের সিদলা ইউনিয়নের অন্তর্গত সাহেবের চর গ্রামের বুক ছিড়ে প্রবাহিত হচ্ছে ব্রহ্মপুত্র নদ। যার স্বচ্ছ জলরাশির বুকে ২৫ শে সেপ্টেম্বর বিকালে অনুষ্ঠিত হয়েছে নৌকা বাইচ প্রতিযোগিতা। লক্ষ লক্ষ দর্শনার্থীর নজর ছিল শুধুই জলের বুকে ফুপিয়ে চলা নৌকার প্রতি, ঢোলের তালে রং বেরংগের নৌকায় সারি গান গেয়ে বাহারি রংগের পোষাক পরিহিত বাইচা অসম্ভব প্রস্ফুটিত সুনিপুণ প্রকৃতি মিশ্রিত জলের আঙ্গিনায়।

জানা যায়- সকাল থেকে ব্রহ্মপুত্র নদের তীর ঘেষে প্রতিয়মান হচ্ছে বিভিন্ন ভ্রাম্যমান দোকান। স্থানীয়সহ প্রতিটি দোকানে; বিশেষ করে চা স্টল গুলিতে অপরিচিত মুখদের গমগম বিচরণ।

সাহেবের চর গ্রামের প্রতিটি  বাড়ীতে আজ ঈদের আমেজ,  মেহমানদের শুভাগমণে মোখরিত পারা মহল্লা। গতকাল থেকে হোসেনপুরের বিভিন্ন ইউনিয়ন ও প্রতিবেশী উপজেলা থেকে দলে দলে মেহমানদের আনাগোনা।

আরো জানা যায়-  বিভিন্ন জেলায় অবস্থানরত সাহেবের চর গ্রামের কর্মজীবীরা দু’দিন পূর্বে থেকেই ছুটি নিয়ে বাড়ী মুখী হয়েছে।

শ্রী পুরের মাওনা থেকে বাড়ী ফেরা মজিবুর (২৫) এর সাথে কথা বলে জানতে পারি- নৌকা বাইচ প্রতিযোগিতা দেখতে তিনি বাড়ী এসেছেন, মনে ঈদ আমেজ  অনুভব হচ্ছে।

সাহেবের চরের ব্রহ্মপুত্র নদের ঐতিহ্যবাহী নৌকা বাইচ প্রতিযোগিতা হয় হোসেনপুর উপজেলা পরিষদের আয়োজনে। উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান জনাব মোহাম্মদ সোহেল এর সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় সাংসদ জনাব ডা: সৈয়দা জাকিয়া নুর লিপি। এছাড়াও বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রাবেয়া পারভেজ, মেয়র খাইয়ুম খোকন,  অফিসার ইনচার্জ শেখ মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান, জেলা আওয়ামীলীগের সদস্য শাহজাহান পারভেজ, উপজেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি জহিরুল হক নুরু মিয়া, সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল হক, সিদলা ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান সিরাজ উদ্দীন (এম এ)সহ আরো অনেকে।

পরে সন্ধ্যায় আমন্ত্রিত অতিথিরা বড় নৌকা (সরঙ্গা), বড় নৌকা (ছিপ) এর ১ম বিজয়ীদের ৫০ হাজার ও ২য় বিজয়ীদের এলইডি টেলিভিশন পুরস্কার হিসেবে তুলে দেন। একই সাথে ছোট নৌকার ১ম বিজয়ীদের ২৫ হাজার ও ২য় বিজয়ীদের হাতে এলইডি টেলিভিশন তুলে দেওয়া হয়।

এবারের নৌকা বাইচ প্রতিযোগিতায় অংশ নেয় ময়মনসিংহ ও কিশোরগঞ্জ জেলার বিভিন্ন উপজেলার ছোট-বড় নানা নামের কুষা, ঘাসি, চিপা ও ময়ুরপঙ্খী নৌকা। ঐতিহ্যবাহী এ নৌকাবাইচ দেখতে কয়েক কিলোমিটার এলাকাজুড়ে নদের দু’পাড়ে প্রায় লক্ষাধিক নারী-পুরুষ, শিশু-বৃদ্ধাসহ লাখো মানুষ ভীড় করেন এবং নৌকাবাইচ প্রতিযোগিতা উপভোগ করেন।

খুব সুন্দর মনোরম পরিবেশে বৈচিত্র্যময় আকাশের সৌখিনতার সাজোয়া মুগ্ধতায় সফলভাবেই সম্পন্ন হয়েছে সাহেবের চরের বুক ছিড়ে বয়ে চলা ব্রহ্মপুত্র নদের নৌকা বাইচ প্রতিযোগিতা।

স্থানীয় দর্শক বাছির উদ্দীন টুনু (২৪) মিশন ৯০ কে জানান- ১৯ টি নৌকার অংশগ্রহণে আজকের নৌকা বাইচটা খুব উপভোগ করলাম।

১৪ বছরের আরমানের সাথে কথা হয় আমাদের তার অভিমত-গাংগের (নদের) বান্ধের ওরহে বয়া নাউ দৌড় দেখচি অনেক মজা পাইছি।

উল্লেখ্য  সাহেবের চর ব্রহ্মপুত্র নদের ভাংগন প্রতিহত করার জন্য বাম তীরের প্রতিরক্ষা বাঁধ নির্মাণ হচ্ছে, কাজ প্রায় শেষের দিকে যার দরুন সত্যিই গ্যালারীর উপলব্ধি মিলে মনে। যা সাহেবের চরের শ্রী বৃদ্ধি পেয়েছে ব্যাপক ভাবে।

একটা প্রাচীন আনন্দ মোখর খেলা নৌকা বাইচ, আগেকার দিনে নবাবরা নিজের পরিচিতি বিকাশে নৌকা বাইচের আয়োজন করতো। গ্রাম বাঙলার মানুষজনের সাথে প্রানে প্রানে মিশে উপভোগ করতো নৌকা বাইচ প্রতিযোগিতা।

সম্পর্কিত সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button