অর্থনীতি

কমছে মুরগির দাম, ইফতারি তৈরির উপকরণের দামও নিম্নমুখী

রাজধানীর বাজারে মুরগির দাম কমতে শুরু করেছে। গত তিন দিনে বাজারভেদে ব্রয়লার মুরগি কেজিতে ৪০ থেকে ৫০ টাকা পর্যন্ত কমে বিক্রি হচ্ছে। সোনালি মুরগি কেজিতে ২০ থেকে ৩০ টাকা কমেছে। খুচরা ব্যবসায়ীরা বলছেন, দেশের শীর্ষস্থানীয় চারটি বড় পোলট্রি কম্পানি খামার থেকে মুরগির দাম কমানোর পর খুচরা বাজারে এর প্রভাব পড়েছে। কাজী ফার্মস লিমিটেড, সিপি বাংলাদেশ, আফতাব বহুমুখী ফার্মস লিমিটেড ও প্যারাগন পোলট্রি অ্যান্ড হ্যাচারি লিমিটেড এখন প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি বিক্রি করছে ১৯২ টাকায়।

ভোক্তাদের অভিযোগ, এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ীর সিন্ডিকেটের কারণেই ব্রয়লার মুরগির বাজারে অস্থিরতা সৃষ্টি হয়েছিল। গতকাল রবিবার রাজধানীর কারওয়ান বাজার ও রামপুরা কাঁচাবাজার ঘুরে এবং ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।

রোজা শুরুর দেড়-দুই মাস আগে থেকেই অস্থির হয়ে উঠছিল মুরগির বাজার। রোজার দুই দিন আগে রেকর্ড দাম বেড়ে ব্রয়লার মুরগি প্রতি কেজি ২৭০ টাকা ও সোনালি মুরগি ৩৮০ টাকা কেজিতে বিক্রি হয়। দুই মাসের ব্যবধানে কেজিতে ১২০ টাকা পর্যন্ত বেড়ে বিক্রি হচ্ছিল স্বল্প আয়ের মানুষের প্রোটিনের চাহিদা মেটানো এই ব্রয়লার মুরগির দাম। সোনালি মুরগির দামও কেজিতে ১০০ টাকার মতো বেড়ে বিক্রি হচ্ছিল।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানিয়েছেন, ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই ব্রয়লার মুরগির দাম নিয়ন্ত্রণে সরকারকে মুরগি আমদানি উন্মুক্ত করে দেওয়ার পরামর্শ দেন। পাশাপাশি গত বৃহস্পতিবার জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সঙ্গে পোলট্রি খাতের শীর্ষস্থানীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর বৈঠকের পর উৎপাদক পর্যায়ে প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি ১৯০ থেকে ১৯৫ টাকা বিক্রির ঘোষণা দেওয়ার পর থেকেই খুচরা বাজারে দাম কমতে শুরু করেছে।

বাজারে খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, বড় বাজারগুলোর তুলনায় ছোট বাজারগুলোতে মুরগির দাম তুলনামূলক কমেছে। কারওয়ান বাজারে খুচরা পর্যায়ে প্রতি কেজি ব্রয়লার ২২০ টাকায় এবং সোনালি মুরগি ৩৫০ থেকে ৩৬০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। রামপুরা কাঁচাবাজারে প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ২৩০ টাকা ও সোনালি মুরগি ৩৬০ থেকে ৩৭০ টাকায়। ফার্মের ডিম প্রতি ডজন বিক্রি হচ্ছে ১৩৫ টাকায়।

কারওয়ান বাজারের কিচেন মার্কেটের ব্রয়লার হাউসের ব্যবসায়ী আমজাদ হোসেন গতকাল কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘পাইকারিতে মুরগির দর কমার কারণে কয়েক দিন ধরে খুচরা পর্যায়ে দাম কমছে।’

রামপুরা কাঁচাবাজারের জিহাদ ব্রয়লার হাউসের ব্যবসায়ী মো: বায়োজিদ বলেন, ‘ব্রয়লার ও সোনালি মুরগি দুটির দামই কিছুটা কমেছে।’ সামনে মুরগির দাম আরো কমতে পারে বলেও তিনি জানান।

সরকারের বিপণন সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশও (টিসিবি) তাদের বাজারদরের প্রতিবেদনে ব্রয়লার মুরগির দাম কমার তথ্য জানিয়েছে। সংস্থাটি বলেছে, খুচরা বাজারে প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি ২২০ থেকে ২৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

রামপুরা কাঁচাবাজারে জিহাদ ব্রয়লার হাউসের সামনে কথা হয় ক্রেতা মোয়াজ্জেম হোসেনের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘বাজারে মুরগির দাম কমছে, সেটি খুবই ভালো দিক। মুরগির রেকর্ড দাম বাড়ার কারণে এই রমজানেও অনেকে মুরগি কেনেনি। দাম কমলে আমার মতো সাধারণ ক্রেতারা কিছুটা স্বস্তি পাবে। আবার মুরগি খেতে পারবেন স্বল্প আয়ের মানুষজন।’

জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ এইচ এম শফিকুজ্জামান বলেন, ‘চারটি কম্পানি সরাসরি তাদের খামার থেকে কম দামে মুরগি বিক্রি করায় বাজারে মুরগির দাম কমেছে।’

ইফতারি তৈরির উপকরণের দামও কিছুটা কমেছে

রোজার প্রথম দিন রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে পণ্যের দামে যে অস্থিরতা ছিল, সেই তুলনায় গতকাল কিছুটা কমেছে। প্রথম রোজার দিন ইফতারি তৈরির উপাদান বেগুন বিক্রি হয় ৯০ থেকে ১০০ টাকায়। এখন দাম কিছুটা কমে ৮০ থেকে ৯০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। শসার দামও কিছুটা কমেছে। গতকাল দেশি শসা ৮০ টাকা ও হাইব্রিড শসা ৬০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। প্রথম রোজার দিনে দেশি শসার কেজি ৯০ থেকে ১০০ টাকা ও হাইব্রিড শসার কেজি ৭০ থেকে ৮০ টাকায় বিক্রি হয়।

শরবত তৈরির প্রধান উপকরণ লেবুর দামও কিছুটা কমেছে। বড় সাইজের লেবুর হালি ছিল ১০০ টাকা, সেটি এখন ৮০ থেকে ৯০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। দাম কমে মাঝারি সাইজের লেবুর হালি ৫০ থেকে ৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ছোট সাইজের লেবুর হালি বিক্রি হচ্ছে ৩০ থেকে ৪০ টাকায়।

সম্পর্কিত সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এছাড়াও পরীক্ষা করুন
Close
Back to top button

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker